ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় লোপার। কিশোরী বয়সেই বধূ সেজে যেতে হয় স্বামীর সংসারে। তবে এরপরও স্কুল ছাড়েনি লোপা। মহামারির দেড় বছরের মাথায় স্কুল খুলে দিলে নিয়মিতই ক্লাসে যাচ্ছে লোপা।
তার ইচ্ছে এসএসসি পাসের পর নার্সিংয়ে পড়াশোনা করে মানবসেবায় নিয়োজিত হওয়ার। সেই ইচ্ছে পূরণে নিয়মিত ক্লাসে যাচ্ছে সে।
লোপা আক্তার টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শেখ ফজিলাতুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও পার্শ্ববর্তী সংগ্রামপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার মেয়ে। বাবা সেলিম মিয়া পেশায় রাজমিস্ত্রি আর মা শাহিনা আক্তার গৃহিণী।
স্থানীয়রা জানায়, দুই বোনের মধ্যে লোপা বড়। ছোট বোন সোনালীও স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তবে পারিবারিক অস্বচ্ছলতা আর দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বিয়ে পিঁড়িতে বসতে হয়েছে লোপাকে।
বাল্যবিয়ের শিকার শুধু লোপা আক্তারই নয়, ওই বিদ্যালয়েই রয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থী মাফিয়া, রেমি খানম, সুমি আক্তার মৌটুসি, মোহনা আক্তার, মিতু আক্তার, রিয়া আক্তার ও দশম শ্রেণির ছাত্রী মোর্শেদা খাতুন, সানিয়া আক্তারও। তবে বাল্যবিয়ের ঝাপটায় স্বপ্ন নিভে যেতে দেবে না এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
লোপা আক্তার বলেন, তার অমতেই বাবা-মা একই উপজেলার চৈথট্ট গ্রামে বিয়ে দেয়। প্রতিবাদ করলেও শুনেননি বাবা-মা। তার পক্ষে দাদা ও কাকা প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে শেষ মুহূর্তে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের শর্তে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে।
লোপা বলেন, পারিবারিক চাপের মুখে আমি বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। তবে বাল্যবিয়ের ঝাপটায় আমার স্বপ্ন ভেঙে যেতে দেব না। স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি অটুট। প্রত্যেকটি বিদ্যালয় ও গ্রামে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে আলোচনার ব্যবস্থা করা হলে অনেকেই বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলেও জানায় সে।
বাল্যবিয়ের শিকার ছাত্রী মৌটুসি আক্তার বলেন, সামাজিক পেক্ষাপট ও বাবা-মার কারণেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই, স্বামীর সংসার থেকে এখনও বাঁধা আসেনি। প্রত্যাশা পূরণ হবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে আছি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বোরহান উদ্দিন জানান, বিয়ের পর অনেক মেয়েরই লেখাপড়া বন্ধ করে দেন তাদের পরিবার। নানা বাঁধার কারণে তাদের বিদ্যালয়ে ফেরানো সম্ভব হয় না। বিয়ের পরও যারা বিদ্যালয়ে এসেছে আমরা তাদের উৎসাহিত করবো।
এ বিষয়ে শেখ ফজিলাতুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিউটি বেগম জানান, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের ২০ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। তবে এর মধ্যেও অন্তত ১৫ জন ছাত্রী নিয়মিত ক্লাস করছে। বিয়ের পরও তারা লেখাপড়া চালিয়ে যেতে বিদ্যালয়ে এসেছে এটাই খুশির সংবাদ। যা নারী শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের মনোবল অটুট রাখতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি এটি দূর করতে সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
আরো পড়ুন: