নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বেশি মাংস পাওয়া যাবে এমন গরুর চিন্তা থেকে সরে আসা মানুষদের চাহিদা মেটাতে এখন দেশি জাতের গরুর হাট বসিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, আগে মানুষ শুধু কোন গরুতে মাংস বেশি হবে, সেসব গরু কিনতো। গত কয়েক বছর ধরে দেশি গরু চাচ্ছেন ক্রেতারা।
পুরান ঢাকার কয়েকটি কোরবানির পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেল, দেশি জাতের গরু বেশি। দুয়েকটি বিদেশি গরু দেখা গেলেও তা মিশ্র জাতের।
পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি মাঠ, ধোলাইখাল এলাকায় বিভিন্ন জাতের দেশি গরু দেখা গেলেও মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম গরু দেখা যায়নি। এসব বাজারে চট্টগ্রামের লাল গরু, নর্থবেঙ্গল গ্রে ক্যাটল, পাবনা ও কুষ্টিয়ার কিছু দেশি জাতের গরু দেখা গেছে।
মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম গরু বাজারে নেই কেন জানতে চাইলে রহমতগঞ্জের বাসিন্দা শহিদুল হক সাবু বলেন, এই জাতের গরু ঈদের আগের দিন হাটে উঠে আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যায়।
রহমতগঞ্জ হাটে মেহেরপুরের গাংনী থেকে ১৫টি দেশি জাতের গরু নিয়ে এসেছেন বাবুল বেপারি।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে দেশি জাতের গরুর চাহিদা বেশি থাকায় সবগুলো গরুই দেশি। বাজারে সবাই এসে গরু দেখছে কিন্তু কিনছেন না কেউ।
‘রাজা বাবু’ নামে ঝালকাঠি থেকে একটি গরু নিয়ে এসেছেন নাসির; দাম হাঁকাচ্ছেন পাঁচ লাখ টাকা।
ফরিদপুরে সদরপুরের জব্বার এনেছেন চট্টগ্রাম লাল জাতের দেশি ১২টি গরু এনেছেন। ফরিদপুরের আটরশি থেকে ৬ দেশি গরু এনেছেন বাবুল বেপারি।
কুষ্টিয়ায় গাংনীর রিপন বেপার দেশি গরুর পাশাপাশি শংকর গরুও এনেছেন।
কোরবানির হাটের নিরাপত্তার বিষয়ে লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, পুলিশ সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছে আর কেউ যাতে প্রতারণার শিকার না হয়। জাল টাকা শনাক্ত করার মেশিনও রয়েছে হাটগুলোতে।
দেশি গরু চেনার উপায়
দীর্ঘদিন পশু চিকিৎসক হিসেবে খাগড়াছড়ি জেলায় চাকরি করেছেন আব্দুল হাই। তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন। তিনি বললেন দেশি গরু কেমন দেখতে।
দেশি গরু দেখতে মূলত জেবু বা দক্ষিণ এশীয় আদি গরুর মতোই। এ জাতের গরুর উঁচু কুঁজ বা চুড় থাকে। দেশের সর্বত্রই এ জাতের গরু দেখা যায়। তবে এর নির্দিষ্ট কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। দেশে যে কয়েকটি জাতকে দেশি জাত বলা হয় তার মধ্যে ৮০ শতাংশই এ জাতের মধ্যে পড়ে।
দেশি জাতের গরুর গায়ের রঙ লাল, ধূসর, সাদা, কালো অথবা একাধিক রঙের বিভিন্ন মাত্রার মিশ্রণ হতে পারে। দেহের আকার বিভিন্ন হতে পারে এবং দৈহিক গঠনে ব্যাপক পার্থক্যও দেখা যায়।
এসব গরুর কপাল বেশ বড়, উত্তল ও প্রসারিত হাড়ে একটি বর্মের মতো মনে হয়। চোখ দুটো এমনভাবে ঝুলানো যে মনে হয় অর্ধেক বন্ধ।
আদি দেশি জাতের গরু দেখতে খুব একটা আকর্ষণীয় নয়। কানগুলো লম্বা ও ঝুলানো, বড় পাতার মতো হালকা ভাঁজ করা এবং শেষ প্রান্তে একটি খাঁজ রয়েছে। শিং দুটো বাঁকানো এবং শিংয়ের আগা পেছনের দিকে বাঁকানো থাকে। পিঠের মাঝ বরাবর নিচু হয়, আর ঘাড় ও কোমড় উুঁচ হয়, দাঁড়িয়ে থাকে সামনের দিকে ঝুঁকে।
দেশি ষাঁড় গরুর নাভী বেশ বড় ও ঝুলানো। লেজ লম্বা ও চাবুকের মতো দেখতে, খুর মাঝারি আকারের, লেজের ঝুটির লোম ছোট ও চকচকে, চামড়া ঢিলেঢালা এবং নরম হয়।
পাছার হাড় স্পষ্ট, শরীর বেশ ভারসাম্য পূর্ণ, গাভীর ওলান মোটামুটি বড় এবং দুধের বাঁট গোলাকার।