শৈশব-কৈশোর

বাচ্চাদের নিয়মিত খোলা হাওয়ায় খেলতে নিয়ে যাবেন: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: মহামারীর এই সময়ে স্কুল যেহেতু বন্ধ, বাচ্চাদের মুক্ত হওয়ায় খেলার সুযোগ দিতে প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য হলেও তাদের কাছাকাছি কোনো পার্ক বা মাঠে নিয়ে যেতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, এই শিশুরাই আগামী দিনের কাণ্ডারী। তাদের ‘মানুষের মত মানুষ’ হিসেবে গড়ে তুলতে লেখাপড়ার পাশপাশি খেলাধুলা, শরীরচর্চা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও তাদের সম্পৃক্ত করা জরুরি।

সোমবার গণভবন থেকে বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস এবং শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।

আরও পড়ুন: পজিটিভ হোক বা নেগেটিভ, সকল শিশুকে খাওয়ানো হবে ভিটামিন ‘এ’

অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বাচ্চারা যেহেতু স্কুলে যেতে পারছে না, অন্তত কাছাকাছি কোনো পার্কে বা কোথাও আপনারা বাচ্চাদের অন্তত দিনে এক ঘণ্টার জন্য হলেও নিয়ে যাবেন। ছুটোছুটি করা, খেলাধুলা- সেগুলো যেন তারা করতে পারে, সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়া দরকার আমি মনে করি। কারণ তাদের স্বাস্থ্যের জন্য, তাদের মানসিক অবস্থাটার জন্য এটা খুবই দরকার।

তিনি বলেন, মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো সবাইকেই মেনে চলতে হবে। কিন্তু সাথে সাথে একটু বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করা বা তাদেরকে একটু খোলা বাতাসে নিয়ে যাওয়া বা একটু রোদে খেলতে দেওয়া- এটা এই করোনাভাইরাসের জন্য সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। কাজেই আমি চাইব, আপনারা সেইদিকটা অন্তত দেখবেন।

শিশুদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য, শান্তিপূর্ণ, বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার স্বপ্নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কথায় বলি শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত। হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু সেই ভবিষ্যত বংশধরদেরকে তৈরি করতে হবে মানুষের মত মানুষ হিসেবে। তাদের মেধা, তাদের জ্ঞান, তাদের বুদ্ধি সবকিছু বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।

আর সেজন্য যথাসম্ভব উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা, লেখাপড়া শেখার পরিবেশ, সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করা এবং জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার মাধ্যমে উন্নত ভবিষ্যত নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, আজকে এই শিশুদের মধ্য থেকেই তো কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে বা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানী, অনেকেই অনেক কিছু হতে পারবে। আর আমরা সেই ধরনের বহুমুখী জ্ঞান বিকাশের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়- সব আমরা করে দিচ্ছি, যাতে বহুমুখী শিক্ষা পেয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা মানুষের মত মানুষ হয়।

নিজের শৈশবের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার আব্বারতো জনগণের জন্য আন্দোলন করতে করতে জেলাখানায় বেশি সময় কাটাতে হয়েছে। আমরা যেমন বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হতাম, তিনিও তখন আমাদের কাছে পেতেন না। কারাগারেই দেখা হত। শিশুদের প্রতি তার একটা প্রচণ্ড ভালোবাসা ছিল, আগ্রহ ছিল এবং শিশুরাও তাকে খুবই পছন্দ করতে। আমাদের আত্মীয়, পরিবার, পরিজন ছাড়াও যে কোনো শিশু তার কাছে এলে কেমন যেন একটা আপন করে নিতেন।

শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথাও বলেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে সরকার শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। শিশুদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুষ্টিহীনতা দূর করতে এবং স্কুল থেকে ঝরে পড়া বন্ধ করতে স্কুল ফিডিং কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

শিশুদের নিরাপদ রাখার সবরকম চেষ্টাই সরকার করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা ধরনের অত্যাচার, নির্যাতন… কোনো কিছু হলে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। কারণ আমরা চাই আমাদের শিশুরা নিরাপত্তা নিয়ে সুন্দরভাবে মানুষের মত মানুষ হবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আল্লাহর রহমতে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে পেরেছি বলেই এই অনলাইনে আজকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে মিলিত হতে পারছি। কিন্তু আমার দুঃখ লাগছে, আমি উপস্থিত হতে পারলাম না। তারপরও আমি বলব, এই যে একটা সুযোগ আমাদের সৃষ্টি হয়েছে এই প্রযুক্তি আমাদের সেই সুযোগটা এনে দিয়েছে।

মহামারীর মধ্যেও প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিশুদের লেখাপড়া যেন অব্যাহত রাখা যায়, সরকার সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, কখনো যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সেটাই আমরা চাই। কিন্তু তারপরও আমরা দেখি বিশ্বে নানা ধরনের সংঘাত। কোনো শিশুর অকাল মৃত্যু যখন দেখি, সেটা সত্যিই আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সেটা আমার দেশেই হোক বা বিদেশে হোক।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যা্লয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

আর বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনয়তন প্রান্তে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *