ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: শুধু বাইসাইকেল নিয়ে বাংলা সাহিত্যে খ্যাতনামা কোনো কবিতা না থাকলেও কবি আল মাহমুদের কবিতায় বাইসাইকেলের প্রসঙ্গ এসেছে অত্যন্ত সাবলীলভাবে। যেমন: ‘কবিতা তো কৈশোরের স্মৃতি।…আব্বার ফিরে আসা, সাইকেলের/ ঘণ্টাধ্বনি-রাবেয়া রাবেয়া/ আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিণের ভেজানো কপাট।’
বাঙালির শৈশব-কৈশোরের অনেক স্মৃতিজাগানিয়া বাহন এই বাইসাইকেল। সে অবশ্য ভিন্ন আলোচনা। আমাদের এবারের বিষয় সাইকেল উৎপাদন, সাইকেল রপ্তানি এবং বিশ্বের বুকে বাংলাদেশি সাইকেলের জায়গা করে নেওয়া। দেখা যেতে পারে কীভাবে, কতটুকু তা সম্ভব হয়েছে।
ঢাকার রাস্তা যে বাইসাইকেল উপযোগী নয়, তা এ শহরে যারা থাকেন বেশির ভাগ মানুষ এক বাক্যে স্বীকার করবেন। এই বাইসাইকেলকেই আমরা নিয়ে যাই তাহলে ইউরোপের দেশগুলোতে। হ্যাঁ, এটাই সত্যি যে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বাইসাইকেল চলছে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাস্তায় রাস্তায়।
এই ফাঁকে আরেকটি জিনিস হয়ে গেছে, যা গৌরবের-আনন্দের। ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ দেশে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে এখন তৃতীয় অবস্থানে উঠে গেছে। এখানেই শেষ নয়, গোটা বিশ্বে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।
পরিবেশবান্ধব বাইসাইকেলের বাজার একসময় ছিল আমদানিনির্ভর। বিদেশ থেকে সম্পূর্ণ সাইকেল বা যন্ত্রাংশ এনে সংযোজন করে বাজারজাত করতেন এ দেশের ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ উপকরণ আমদানি করা হয়, বাকিটা দেশীয়। চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে চেইন, হুইল ও ব্রেকের উপকরণ আমদানি করা হয়। দেশীয় উপকরণ ফ্রেম, ফর্ক, রিং, টায়ার ও টিউব।
রপ্তানির উদ্দেশে দুই যুগ আগে ১৯৯৬ সালে ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারি বাইসাইকেল তৈরির প্রতিষ্ঠান কিনে নেয় মেঘনা গ্রুপ। বর্তমানে ট্রান্স ওয়ার্ল্ড বাইসাইকেল, ইউনিগ্লোরি ও মাহিন সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে তিনটি ইউনিটে সাইকেল উৎপাদন করছে তারা। এরপর ১৯৯৮ সালে কারখানা করে মালয়েশিয়াভিত্তিক আলিটা বিডি। চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) স্থাপিত হয় শতভাগ রপ্তানিমুখী এই কারখানা। এরপর তাইওয়ানভিত্তিক ‘করভো’ একই ইপিজেডে স্থানীয় বাজার ও রপ্তানির উদ্দেশে করে আরেকটি কারখানা।
২০০৩ সালে রপ্তানি শুরু করে মেঘনা গ্রুপ। বাইসাইকেল তো বটেই, তাদের কারখানায় উৎপাদিত টায়ার ও টিউব বিশ্বের ১৮ দেশে সরাসরি রপ্তানি হচ্ছে। আর ২০১৪ সালে দুরন্ত ব্র্যান্ড নিয়ে আসে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। ৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দামের বাইসাইকেলও রয়েছে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর। ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাইসাইকেল রপ্তানি হয় জার্মানিতে। এরপর ডেনমার্ক ও যুক্তরাজ্যে। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, ইতালি, বুলগেরিয়া ইত্যাদি দেশে বেশি বাইসাইকেল রপ্তানি করা হচ্ছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩ কোটি ৮ লাখ ডলারের বাইসাইকেল রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছর রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক বছরে বাইসাইকেল রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৫৮ শতাংশের বেশি। এর আগের চার অর্থবছরও আট কোটি ডলারের ঘরেই আটকে ছিল রপ্তানি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘কোভিড-১৯ বাইসাইকেল রপ্তানিতে শাপে বর হয়েছে। তবে এখনো সম্পূর্ণ বাইসাইকেল আমদানি হচ্ছে। অথচ আমাদের এখনকার যে উৎপাদন সক্ষমতা, তাতে সম্পূর্ণ বাইসাইকেল আমদানিতে অশুল্ক বাধা তৈরি করা উচিত।’ ইইউতে প্রবৃদ্ধির পেছনে জিএসপি সুবিধা পাওয়াকে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।