লাইফস্টাইল

বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্তা নিয়ে কী বলছে কাপেং ফাউন্ডেশনের জরিপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বাংলদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের ৫২ শতাংশ মানুষের সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন (শৌচাগার) সুবিধা নেই। পানি ও স্যানিটেশনে বাংলাদেশের ব্যাপক অর্জন থাকলেও নৃগোষ্ঠীর মানুষ সেই সুবিধা থেকে এখনো বঞ্চিত। ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের আর্থ–সামাজিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গড়ে উঠা মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

পাহাড় ও সমতলের ২৫টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার চিত্র উঠে এসেছে কাপেং ফাউন্ডেশনের জরিপে। ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড স্যোশিও ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অব ইনডিজিনাস পিপল অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই জরিপটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে তিনি ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আজ অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। শুধু সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ‍সুবিধা থেকে বঞ্চিত নন, সার্বিক উন্নয়ন থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছে তারা। তাদের ওপর  হামলা, তাদের ভূমি জবরদখল ও উচ্ছেদ, ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণসহ সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের অঙ্গীকার করেও সরকার এ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, আদিবাসীর মতামতও নেয়া হয়নি। উন্নয়ন, পরিকল্পনা, পরিকল্পনা প্রণয়ন, গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আদিবাসীদের সিদ্ধান্ত নির্ধারণী কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয় না সরকার। বরং উন্নয়নের নামে আদিবাসী জীবনধারা বিপর্যস্ত করে তোলা হয়।  নানা কৌশলে দেশের আদিবাসীকে পেছনে রেখে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পল্লব চাকমা।

কাপেং ফাউন্ডেশনের গ্রোগ্রাম ম্যানেজার উজ্জল আজিম ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের সুবিধা থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে। যদিও সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পায়। আর যৌথভাবে ব্যবহারসহ ৭৮ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের ব্যবস্থা আছে। তবে পার্বত্য এলাকার দুর্গম পাহাড়ের বাস্তবতা ভিন্ন। সামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশের অর্জন এখন বিশ্বস্বীকৃত। কিন্তু দেশের ৪৫টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্য, শিক্ষার সুবিধায় পিছিয়ে আছে। করোনার প্রকোপ এসব মানুষকে আরও নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য মুখে অনেক কথা বলা হলেও নৃগোষ্ঠীর মানুষের অবস্থার ধারাবাহিক মূল্যায়নের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট বিভাজিত তথ্যও নেই। 

উজ্জল আজিম আরও বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন আদিবাসীদের প্রতিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, ভূমি ও ফরেস্টের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আত্মমর্যাদা এবং অংশিদারিত্বের পথ সুগম হওয়ার পথে, সেখানে বাংলাদেশের আদিবাসীরা বহুমাত্রিক সমস্যায় জর্জরিত। এমনকি বাংলাদেশ আদিবাসীদের সাংবিধানিক এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকারই করে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন উজ্জল আজিম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *