Uncategorized

বহুমূল্যের বিনিময়েই বাঙালির প্রতিটি অর্জন, সেধে কেউ কিছু দেয়নি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভাষার পথ ধরেই আমাদের স্বাধীনতা’ কথাটি পুনরায় সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, সবকিছু বহুমূল্যেই বাঙালিকে অর্জন করতে হয়েছে। সেধে কেউ কিছুই দেয়নি।

তিনি বলেন, ‘বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পাকিস্তানিরা আমাদের ওপর একটি বিজাতীয় ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়েই ভাষার অধিকার এবং স্বাধীনতাসহ সবকিছু অর্জন করতে হয়েছে আমাদের। কেউ সেধে কিছু দেয়নি।’

শেখ হাসিনা শনিবার সকালে একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবলমাত্র ভাষাভিত্তিক আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, এ আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।’

শেখ হাসিনা একুশে পদক প্রাপ্তদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজকে অমর ভাষা দিবসের যে স্বীকৃতি আপনারা পেয়েছেন তা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্যই পেয়েছেন। কাজেই আপনাদের কাছ থেকেই আগামী প্রজন্ম অনেক শিক্ষা নিতে পারবে।

তিনি বলেন, দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, গবেষণা, সংস্কৃতি চর্চা ও সমাজসেবাসহ বিভিন্ন কাজে অবদানের জন্যই এই সম্মাননা। সেজন্য আমি মনে করি এটা শুধু আপনাদের সম্মাননা নয়, গোটা জাতির জন্য সম্মাননা। দেশের মানুষের জন্য সম্মাননা।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক রাজধানীর ওসামানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২১ জন বিজয়ী বরেণ্য ব্যক্তির হাতে এ পদক তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।

জাতীয় ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা রক্ত দিয়ে শুধু মাতৃভাষার দাবি প্রতিষ্ঠা নয়, স্বাধীনতা অর্জনের পথ করে দিয়েছিল আমরা তাঁদের প্রতি সম্মান জানাই।

তিনি এ সময় দেশব্যাপী কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া চলতে থাকলেও মাস্ক ব্যবহার এবং কিছুক্ষণ পর পর হাত ধোয়া এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের দেশ। এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সাথে চলবে, কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলবো।

তিনি ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শেখ মুজিবসহ অনেক ভাষাসৈনিক সচিবালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বার বার কারাবরণ করেছেন। ভাষা আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে রূপদান করতে তিনি দেশব্যাপী সফরসূচি তৈরি করে ব্যাপক প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন এবং সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব-বাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের বাজেট অধিবেশনের জন্য নির্ধারিত ছিল। শেখ মুজিবের পরামর্শ ও নির্দেশ অনুযায়ী ঐদিন সারাদেশে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী অমর একুশে ফ্রেব্রুয়ারি কথা স্মরণ করে বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করে এবং পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে কতগুলো তাজা প্রাণ নিমেষেই ঝরে যায়, অনেকে আহত হন, অনেকে গ্রেফতার হন।

শেখ হাসিনা অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি এনে দেয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সরকার এবং কানাডা প্রবাসী দুই বাঙালি রফিক এবং সালামের ভূমিকাও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমাদের সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে কানাডা প্রবাসী রফিক এবং সালাম নামে দু’জন বাংলাদেশীসহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য মিলে ‘মাতৃভাষা সংরক্ষণ কমিটি’ গঠন করে। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব প্রেরণ করে। যেহেতু জাতিসংঘ ব্যক্তি প্রস্তাব আমলে নেয় না, তাঁরা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি ইউনেস্কোতে প্রেরণ করার পরামর্শ দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন আমাদের হাতে সময় ছিল না, আমরা মাতৃভাষা সংরক্ষণ কমিটি’র সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর দ্রুত ফ্যাক্স-বার্তার মাধ্যমে ইউনেস্কোকে আমাদের প্রস্তাব প্রেরণ করি। তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং ২০০০ সাল থেকে তাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে এই দিবসটি উদযাপন করে আসছে। সেই থেকে একুশে ফ্রেব্রুয়ারি আমাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *