প্রচ্ছদ

বন রক্ষায় ৩শ কোটি গাছ লাগাবে ইইউ

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: পুরোনো বনাঞ্চল বাঁচিয়ে রাখতে নতুন কৌশল হাতে নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ কর্মসূচি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যেই তিনশ কোটি গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা। এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন ইইউর পরিবেশ, সমুদ্র ও মৎস্য সম্পদবিষয়ক লিথুয়ানিয়ান কমিশনার ভার্জিনিজাস সিনকেভিসিয়াস।

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নেওয়া নতুন কর্মসূচির অংশ হিসাবে ইউরোপজুড়ে থাকা বনসম্পদ রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে ইইউ। সিনকেভিসিয়াস বলেন, ‘জলবায়ু রক্ষায় বনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমাদের কাছে যদি পর্যাপ্ত ভালো মানের বনজ বাস্তুসংস্থান না থাকে, তবে কার্বন-ডাই অক্সাইডের স্টোরেজ সম্পর্কে কোনো কাজ সম্পাদনের আশা করতে পারি না।’ এ কারণে, পুরোনো বন রক্ষার কৌশলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। সেই লক্ষ্যে এ বছরের শেষদিকে কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্য সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কোন কোন বনকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে তা নির্ধারণ করা হবে।

তিনশ কোটি গাছ লাগানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গাছ লাগালেই বন হয়ে গেল তা নয়, একটি প্রতিষ্ঠিত পরিপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র গঠনের ওপর জোর দেব আমরা। তার কথায়, অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে এ বিষয়ক একটি প্ল্যাটফরম অনলাইনে আসবে। সেখানে কি ধরনের গাছ লাগানো যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। নতুন এ প্রকল্পের নীতিমালা তৈরি হবে ইইউর ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়েই। তবে পুরোনো বন রক্ষার কৌশল আগে যা ছিল, তাই থাকবে বলে জানিয়েছেন সিনকেভিসিয়াস। নতুন এই বনকৌশল ইউরোপীয় গ্রিন ডিলেরই অংশ বলে তিনি জানিয়েছেন।

কিন্তু বনরক্ষায় ইইউর গৃহীত পদক্ষেপগুলোর সমালোচনা করে আসছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কাঠশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা উলটোপথে হাঁটার মতো অভিযোগ করে বলছেন, বনরক্ষায় গৃহীত নীতিমালার কারণে ৬৪০ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতি হচ্ছে তাদের-যে খাতে ৩৬ লাখ লোকের কর্মসংস্থান নির্ভর করছে। ইইউর বিধিনিষেধ এ শিল্পকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

অন্যদিকে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, কাঠের পণ্যগুলোর উত্তরোত্তর চাহিদা ইউরোপের জলবায়ুবিষয়ক লক্ষ্যগুলোকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ বিষয়ে ইইউ কৃষিবিষয়ক কমিশনার জানুজ উজসিকাওস্কি বলেন, ‘বনগুলো আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির ফুসফুস। বনসম্পদের কারণে গ্রামাঞ্চলের মানুষ জীবিকার পথ খুঁজে পায়। পাশাপাশি নাগরিক জীবনের প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে।’ অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বনসুরক্ষা নীতিমালা নিয়ে উভয় সংকটে রয়েছে। তবে ইইউ চলতি সপ্তাহে দাবি করেছে, কার্বন-ডাই অক্সাইডের শোষণ ২৭০ মিলিয়ন টন থেকে বাড়িয়ে ৩১০ মিলিয়ন টনে উন্নীত করতে বদ্ধপরিকর।

জার্মানিতে মৃত বেড়ে ১৩৩, ইউরোপে ১৫৩ : জার্মানিতে ব্যাপক বন্যায় মৃতের সংখ্যা শনিবার ১৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। বেলজিয়ামে ২০ জন। এ নিয়ে ইউরোপে মৃতের সংখ্যা ১৫৩ জনে দাঁড়াল।

জার্মানির কোব্লেঞ্জ নগরীর পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রিনল্যান্ড-পলেটিনেট অঞ্চলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ৯০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। পার্শ্ববর্তী নর্থ রিন-ওয়েস্ট ফালিয়ায় বন্যায় আরও ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। জার্মানিতে অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বহু শহরে বন্যার পানি এখনো অনেক উপর দিয়ে বইছে। ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে জীবিতদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। কলোনের নিকটবর্তী বাসেনবার্গ শহরে একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর শুক্রবার রাতে স্থানীয় প্রায় ৭০০ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বন্যায় রিনেল্যান্ড পালাটিনাটে এবং নথস রিনে-ভেসপালিয়া রাজ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বেশ কয়েক দিন ধরে পুরো অঞ্চলের জনবসতিগুলো বিদ্যুৎবিহীন ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। সেপ্টেম্বরে জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ ভোটের আগে দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ককে তীব্র করে তুলতে পারে। বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরে বলে আসছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অস্বাভাবিক ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

কিন্তু জার্মানির এই নিরলস বর্ষণের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা নির্ধারণ করতে গবেষণায় অন্তত কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে শুক্রবার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *