বিনোদন

বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও ত্যাগের গল্প

নিয়মিত দর্শকের পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহে এখন এমন দর্শকও ভিড় করছেন, লম্বা সময় যাঁরা ছবি দেখা থেকে দূরে ছিলেন। নারী দর্শক যেমন ছবি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ছুটছেন, তেমনি স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ–তরুণীরাও যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে কয়েক মাস ধরে ঢালিউড বইছে সুবাতাস। এমন ভালো একটা সময়ে মুক্তি পেতে যাচ্ছে যাও পাখি বলো তারে। মুক্তির দিক দিয়ে এটি মোস্তাফিজুর রহমানের ৭ নম্বর চলচ্চিত্র। ছবিটিকে তাই ‘লাকি সেভেন’ বলেও অভিহিত করলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই পরিচালক।

‘দুই নয়নের আলো’ দিয়ে ছবি বানানো শুরু করেন মোস্তাফিজুর রহমান। এই ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন শাবনূর। এরপর একে একে আরও পাঁচটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। যাও পাখি বলো তারেকে কেন লাকি সেভেন বলছেন জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বললেন, ‘এত কিছু ভেবে বলিনি। তবে সম্পাদনা শেষে বেশ কয়েকবার ছবিটি ইউনিটের কয়েকজন মিলে দেখেছি। কেন জানি মনে হয়েছে, ছবিটি ভালোই হয়েছে। ছবি দেখার অভিজ্ঞতা থেকেই এমনটা বলেছি। সুন্দর গল্পের এই ছবি দর্শকহৃদয় ছুঁয়ে যাবে বলে মনটা বারবার বলছে।’

‘যাও পাখি বলো তারে’তে অভিনয় করেছেন মাহিয়া মাহি, শিপন মিত্র ও আদর আজাদ। ‘ভালোবাসার রং’ ছবি দিয়ে অভিষেক ঘটা মাহি ‘পোড়ামন’ দিয়ে বেশ প্রশংসিত হন। মুক্তি প্রতিক্ষীত এই ছবি সেই পোড়ামনকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করেন এই তারকা। ছবিটি তাঁর জীবনের সেরা কাজ হয়ে থাকবে বলেও মনে করেন তিনি। মাহি বললেন, ‘অসাধারণ চিত্রনাট্যের ছবি। পরিচালক এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন, প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে টের পাবেন দর্শক। শুটিংয়ে আমি অনেকটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। মজনু চরিত্রের আদর আজাদ যেন চরিত্রের মধ্যে মিশে যেতেন। চরিত্রের বাইরেও আমাকে এতটাই কেয়ার নিত মজনু, মনে হতো শুটিংয়ের গল্পেই আছি আমরা।’

এ–সংক্রান্ত একটা ঘটনাও শোনালেন মাহি, ‘একটি দৃশ্য ধারণের জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছি। পথে একটু কাদা। হাঁটতে হাঁটতে কাদায় আমার জুতা আটকে যায়। ফিরে দেখি, সেটি হাতে তুলে পেছনে পেছনে আসছে আদর। এই দৃশ্য দেখে বললাম, “এটি কিন্তু শুটিং না, আদর। তুমি মজনু থেকে বের হও। চরিত্র থেকে বের হও।” মনে হতো, দৃশ্যের বা

ইরেও আমাকে সে লাভলীই মনে করত। এমন অবস্থা শুটিংয়ের দিনগুলোতে আমাদের গেছে। এত অসাধারণ ভালোবাসার, প্রেমের ও আবেগের ছবিতে আগে কখনো কাজ করিনি।’ পরিচালকের ওপর মাহির কিঞ্চিৎ অভিমানও আছে। কারণ, সব ভালো ভালো, সুন্দর সুন্দর সংলাপ আদরকে দিয়ে অভিনয় করিয়েছেন তিনি।

পরিবেশক প্রতিষ্ঠান অভি কথাচিত্রের কর্ণধার জাহিদ হাসান জানালেন, ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস, লায়ন কমপ্লেক্সসহ দেশের ২৯টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে যাও পাখি বলো তারে। জাহিদ জানালেন, প্রেক্ষাগৃহ আরও বাড়ত কিন্তু একই দিনে হৃদিতার মুক্তি এবং দুই সপ্তাহ আগে মুক্তি পাওয়া অপারেশন সুন্দরবন ও বিউটি সার্কাস দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে বলেই আপাতত এ কয়েকটিতে চালানো হবে। আগামী সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহসংখ্যা বাড়তে পারে বলেও জানালেন এই পরিবেশক।

গান ছাড়া এই ছবির পুরো শুটিংই হয়েছে বগুড়ায়। ২৪ দিনে শেষ হয় ছবির পুরো কাজ। এই ছবির নায়ক আদর আজাদ বললেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার ফাঁপর ইউনিয়নের চক দুর্গা গ্রামে। যখন ছবির পরিকল্পনা হয়, তখন ভিন্ন ধরনের লোকেশনের সঙ্গে দর্শককে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছি। তাই বগুড়ায় শুটিং পরিকল্পনা হয়। ফাঁপর ইউনিয়ন ছাড়াও সারিয়াকান্দি ও কতুবপুর ইউনিয়নেও শুটিং করেছি। এই ছবিতে সুন্দর একটা গল্পের পাশাপাশি একেবারে নতুন লোকেশন পাবেন দর্শক, যা তাঁদের চোখের আরাম দেবে।’ চারটি গানের শুটিং করা হয় কক্সবাজার ও বান্দরবানে।

‘যাও পাখি বলো তারে’ ছবিটি মুক্তির আগে ট্রেলার ও গান প্রকাশিত হয়েছে। পরিচালক জানালেন, ট্রেলার দেখে অনেকেই ভেবেছেন, এটি ত্রিভুজ প্রেমের ছবি। কিন্তু না, এটি বন্ধুত্বের ছবি, ভালোবাসার ছবি, ত্যাগের সিনেমা। প্রেমিক তাঁর প্রেমিকার জন্য কী করতে পারে, সেটা দেখতেই দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে যেতে হবে। যাও পাখি বলো তারের মুক্তি উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার মালিবাগের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে ছবির টাইটেল গানকে কেন্দ্র করে আয়োজিত টিকটক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১০ জনের হাতে উপহার তুলে দেন ছবির পরিচালক, নায়ক ও নায়িকা।

‘যাও পাখি বলো তারে’ ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন রাশেদ মামুন, মাসুম বাসার, মিলি বাসার, রেবেকা রউফ, লাবণ্য প্রমুখ। চিত্রনাট্য লিখেছেন আসাদ জামান। সংগীত পরিচালনা করেছেন জে কে মজলিশ, বেলাল খান, শেখ মোহাম্মদ রিজওয়ান। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বেলাল খান, কোনাল, সায়রা রেজা, ইলিয়াস হোসেন, বিন্দিয়া খান ও জাসিও রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *