মাতৃভূমি

বঙ্গমাতা পদক পাচ্ছেন ভারতেশ্বরীর সাবেক অধ্যক্ষ জয়াপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: নারী শিক্ষা সংস্কৃতি, ক্রীড়া, নারী উন্নয়ন এবং সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য এ বছর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব পদক পাচ্ছেন কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি.) লি. এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ভারতেশ্বরী হোমসের অধ্যক্ষ জয়াপতি।

তিনি কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি.) লি. এর প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজ সেবক শহীদ দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার জেষ্ঠ্য কন্যা। জয়াপতিকে (মরণোত্তর) পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারতেশ্বরী হোমসের সাবেক অধ্যক্ষ ও কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার পরিচালক (শিক্ষা) ভাষাসৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি।

রোববার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পদক তার পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেবেন। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, কৃষি পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পাঁচজনকে পদক দেবেন।

দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭১ সালে তাকে ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ধরে নিয়ে যায় রাজাকাররা। আজ পর্যন্ত তাদের খোঁজ মেলেনি। বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর ছোট মেয়ে জয়াপতি কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে সংস্থার সেবাম‚ লক কাজে গতি সঞ্চার হয়। বিশেষ করে কুমুদিনী হাসপাতাল ও দেশের নারী শিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান ভারতেশ্বরী হোমসে নতুন জীবন ফিরে আসে।

ভারতেশ্বরী হোমসের সিনিয়র শিক্ষিকা কবি ও সাহিত্যিক হেনা সুলতানা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবাকে হারিয়ে এক সংকটকালে জয়াপতি কুমুদিনী হাল ধরেন।

জয়া পতির জন্ম ১৯৩২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মির্জাপুর গ্রামে। বাবার নাম শহীদ দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা রায় বাহাদুর (আরপি সাহার), মায়ের নাম কিরন বালা সাহা। স্বামীর নাম ডা. বিষ্ণুপদ পতি।

ভারতের কালিংপং সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে প্রাথমিক, এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে লন্ডন থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত নারী জাগরণ ও নারী শিক্ষার অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতেশ্বরী হোমসের অধ্যক্ষ, ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, ১৯৭১-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি.) লি. এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৩ সালে কুমুদিনী নার্সিং স্কুল, ১৯৭৬ সালে কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফট, ১৯৮২ সালে কুমুদিনী গার্মেন্টস, ১৯৮৪ সালে কুমুদিনী ট্রেড এন্ড ট্রেনিং স্কুল এবং ১৯৯১ সালে কুমুদিনী ফার্মা প্রতিষ্ঠান করেন জয়াপতি। জয়াপতি দায়িত্বে থাকাকালে ১৯৮২ সালে কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থা স্বাধীনতা পুরস্কার পান।

 ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর জয়াপতি মারা যান। তিনি মির্জাপুরে ‘ছোট দি’ নামে পরিচিত ছিলেন।

জয়া পতি ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষক, দক্ষ প্রশাসক, পরিচালক, সফল নারী উদ্যোক্তা এবং সমাজ সেবক। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল অসাধারণ।

কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি.) লি. ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাজিব প্রসাদ সাহা ও পরিচালক শ্রীমতি সাহা জানিয়েছেন, আমাদের জেঠামনি আরপি সাহাকে হারানো ও ৭১ এর পর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কুমুদিনী পরিবারকে আগলে রেখেছিলেন আমাদের জয়াপতি।

তার অক্লান্ত শ্রমের ফলেই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো আজও সমাজ সেবায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন। সরকার বঙ্গমাতা পদক দিয়ে যে সম্মান দেখালেন আমরা কুমুদিনী পরিবার বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কাছে চির ঋণী।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাফিজুর রহমান বলেন, জয়াপতির এই পদকপ্রাপ্তির খবর শুনে আমরা আনন্দিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *