নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বিশ্বজুড়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের প্রয়োগ বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রোগ্রামারদের চাহিদা। বিশেষ করে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা, আইওটি, মেশিন লার্নিং, রোবটিকসের কারণে এই চাহিদা আরও বেড়ে চলেছে। এই খাতে অগ্রসর বিশ্বের নানা দেশ তাই ছোটবেলা থেকে কোডিংয়ে হাতেখড়ি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ইউরোপের ছোট্ট ডিজিটাল দেশ এস্তোনিয়া দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থীদের কোডিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে। অ্যাপল কম্পিউটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস মনে করতেন, সব স্কুলেই কোডিং শিক্ষার সুযোগ থাকা দরকার। কারণ, এতে শিশুরা সমস্যা সমাধানে দক্ষ হয়ে ওঠে। জানা কথা, কোডিং শিখলেও সবাই প্রোগ্রামার হবে না।
বিশ্বের বিভিন্ন বয়সী প্রোগ্রামারদের একটি প্ল্যাটফর্ম স্টেকওভারফ্লো https://stackoverflow.com/ ২০২১ সালের ডেভেলপার সার্ভে থেকে এ বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া গেছে। চলতি মাসের মে মাসে প্রায় ৮০ হাজারে বেশি কোডার এই সার্ভেতে অংশ নিয়েছে। কত বছর বয়সে প্রথম কোডিং করেছেন—এই প্রশ্নের জবাবে ৫৩ শতাংশ বলেছেন, তারা ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সে প্রথম কোডিংয়ে হাতে খড়ি নিয়েছেন। এ ছাড়া আরও ১৪ শতাংশ বলেছেন, তাদের হাতে খড়ি আরও আগে ৫ থেকে ১০ বছর বয়সে। এই দ্বিতীয় দলে রয়েছেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বা স্কেল এ আই-এর প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্ডার ইয়াং। মার্ক ৭ বছর বয়সে কোডিং করতে শুরু করেন। পরে হার্ভার্ডে পড়ার সময় ফেসবুকের প্রথম প্রটোটাইপ তৈরি করেন। অন্যদিকে দ্বিতীয় দলটি ভারী, যার নেতৃত্বে আছেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। বিল গেটস ১৩ বছর বয়স থেকে কোডিং করতে শুরু করেন।
স্টিভ জবসের মতো অনেকেই ছোটবেলা থেকে কোডিংয়ের পক্ষে থাকার মূল কারণ হলো এতে শিশুদের মধ্যে যুক্তি, তুরীয় চিন্তা (ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং) এ কার্যকারণের দক্ষতা গড়ে ওঠে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের কারণে কগনিটিভ উন্নয়নের জন্য সহায়ক। কোডিংয়ের একটি দিক হলো, একটি বড় সমস্যাকে ভেঙে ছোট ছোট সমস্যাতে পরিণত করে সেগুলোর সমাধান করা। এই যে সমস্যাকে ভেঙে ফেলার দক্ষতা, সেটা কোডিংয়ের মাধ্যমে শানিত ও চৌখা হয়ে ওঠে। শুধু তা–ই নয়, পরে সেই ছোট ছোট সমাধানকে আবার জোড়া দিয়ে মূল সমস্যার সমাধান করতে পারাটাও কোডিংয়ের একটি অংশ। এ কারণে জটিল সমস্যা সমাধানে প্রোগ্রামারদের ঈর্ষণীয় দক্ষতা আমরা দেখি।
কোডিং করার সময় পর্যায়ক্রমে সমস্যাকে চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করে এর একটি চলনসই সমাধান ভাবা ও সেই সমাধান টেস্টিং করতে হয়। সমস্যার সমাধান না হলে আবার নতুন সমাধান নিয়ে কাজ করতে হয়। এটি তাদের চিন্তাধারার মধ্যে একটি স্বচ্ছতা তৈরি করে। এর ফলে যে কোনো সমস্যার বাহুল্য অংশ বাদ দিয়ে প্রোগ্রামাররা মূল ব্যাপারটাতেই জোর দিতে পারে।
শিশুদের কোডিং শেখানোর বিষয়টি মোটেই কঠিন নয়। প্রচলিত প্রোগ্রামিং ভাষা, যেমন সি/সি++ বা সে রকম ভাষার পরিবর্তে শিশুরা কর্মকাণ্ডের ব্লক ব্যবহার করেই সেটি শিখতে পারে। প্রোগ্রামিং ভাষার জটিল নিয়মকানুন বাদ দিয়ে ছবি ও ব্লক ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং শেখার এমন একটি প্ল্যাটফর্ম উদ্ভাবন করেছে এমআইটি প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় আগে। স্ক্র্যাচ (Scratch) নামের ওই প্ল্যাটফর্মের আদলে এখন অনেক প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে।
শিশু কিংবা বড়দের জন্য প্রোগ্রামিং শেখার এখন নানা উপায় রয়েছে। তার মধ্যে অনলাইনে সবার আগ্রহ ও ব্যবহার বেশি। স্টেকওভার ফ্লো-এর জরিপে প্রোগ্রামারদের প্রায় ৬০ শতাংশই বলেছেন, তারা অনলাইন থেকে প্রোগ্রামিং শিখেছেন। এই হার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শেখার হারের (৫৩%) চেয়ে বেশি। পাশাপাশি বইপত্র থেকেও প্রোগ্রামাররা তাদের শেখা অব্যাহত রেখেছেন।
দেশে ২০১১ সাল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয় আবশ্যিকভাবে পড়তে হয়। নতুন কারিকুলামে তৃতীয় শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থীদের কোডিংয়ে হাতেখড়ি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এই পদ্ধতিতে হাতে–কলমে কোডিং করার পাশাপাশি খেলা, চিন্তা ও দলীয় কাজের মাধ্যমে অ্যালগরিদম শেখাতেও সমান জোর দেওয়া হবে।