রূপচর্চার ক্ষেত্রে আমরা সবাই যথেষ্ট সাবধানী। বাজারের কেনা প্রোডাক্ট ত্বকে কেমন প্রভাব ফেলবে, তা কতটা উপকারী হবে তাই নিয়ে সব বয়সী নারীর দারুন দুশ্চিন্তা। এই দুশ্চিন্তা থেকে খুব সহজেই মুক্তি মিলবে, যদি রূপচর্চাটা ঘরেই প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সেরে নেয়া যায়। আপনারা যদিও জানেন, তবুও নতুন করে পুরোনো কিছু জিনিসের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
মধুঃ
ত্বকের যত্নে মধু ব্যবহার করতে পারেন। মধু খুব ভালো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। ত্বকের ময়েশ্চারাইজারের জন্য এক চা চামচ মধুর সঙ্গে দুই চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। মধু ও লেবুর এই প্যাক ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করে। মুখের বলিরেখা ও দাগ দূর করতে ময়দা আর মধু পানি দিয়ে মিশিয়ে ভালো করে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে অল্প পানি দিয়ে ভিজিয়ে ভালো করে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। বাইরে রোদ থেকে ফিরে মুখ ধুয়ে মধু ও আটা দিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে মুখে ১০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধীরে ধীরে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে রোদে পোড়া দাগ থাকবে না।
শশাঃ
রূপচর্চাতে শশার ভূমিকা অনেক। শশার রস টোনার হিসেবে আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। চোখের ডার্ক সার্কেল দূর করতে শশা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শশা থেঁতলে নিয়ে চোখের ওপর পাতলা কাপড় অথবা তুলো দিয়ে তার ওপর দিন। নিয়মিত ব্যবহারে চোখের ডার্ক সার্কেল দূর হবে।
হলুদঃ
যুগ যুগ ধরে বাঙ্গালির খাদ্য তালিকায় মসলা হিসেবে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে মসলা ছাড়াও এই হলুদ অন্য ভাবেও ব্যবহার হতে পারে। অমসৃন ত্বকে হলুদের গুঁড়োর সাথে মধু অথবা চালের গুঁড়ো মিশিয়ে লাগান। ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এটি স্ক্রাব হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। হলুদ মুখে লাগানোর আগে একটু দুধ মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ ব্যবহারে ত্বকে আসবে কোমলতা।
আলুঃ
আলু আমাদের অতি পরিচিত ও পছন্দের একটি সবজি। আলুকে বলা হয এসিডিটি প্রতিরোধক। আলুতে জিংক থাকায় তা ত্বকের যত্নে বিশেষ উপকারী। আলুর সঙ্গে মধু মিশিয়ে মুখ ও শরীরে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয়। ত্বকের দাগও দুর করে। বিভিন্ন ধরনের ব্রণ নির্মূলেও আলু বিশেষ সহায়ক। পুড়ে বা ঝলসে যাওয়া ত্বকের ওপর আলু থেতলে আলতো করে লাগালে ব্যথা কমে। এছাড়াও আলু থেঁতলে নিয়ে চোখের ওপর দিন। নিয়মিত ব্যবহারে চোখের ডার্ক সার্কেল দূর হবে।
ত্রিফলাঃ
আমলকী হরীতকী আর বহেড়াকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়। এই তিনটি ফলের সংমিশ্রণের নাম দেয়া হয়েছে ত্রিফলা। প্রাকৃতিক গুণ সম্পন্ন ত্রিফলায় রয়েছে কয়েকটি বৈজ্ঞানিক উপাদান যা ব্যবহারে চুল হয় লম্বা কালো ও ঘন। চুল পড়ার প্রতিষেধক হিসেবে রাতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন বেটে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে দু’ঘণ্টা রেখে যে কোন ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া ত্রিফলাযুক্ত তেল ব্যবহারেও উপকার পাবেন।
লেবুঃ
লেবু রূপচর্চার উপাদান হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। এ ছাড়া লেবু চুলের খুশকি প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দুধ ও লেবুর মিশ্রণ চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করলে খুশকি দূর হবে। শ্যাম্পু করার পর পানিতে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুলে চুল ঝকঝকে রেশম কোমল ও মনোরম হয়ে ওঠে।
মেথিঃ
মেথির চুল কন্ডিশনিং এবং জীবাণুনাশক গুণাগুণ মাথার চামড়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চুল পড়া বন্ধ করে এবং মাথা ঠান্ডা রাখে। ২ চা চামচ মেথি রাতে অল্প পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন নরম হলে মিহি করে বেটে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। ২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নিন। চুল পড়া বন্ধে এটি অব্যর্থ ঔষধ।
মেহেদিঃ
প্রাচীনকাল থেকেই মেহেদিকে সৌন্দর্য উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে এই মেহেদি পাতা বেটে হেনা ডাই হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই গাছের পাতা, সুগন্ধী ফুল ও মূল লতা গুল্ম সমন্বিত গুণাগুণ চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, ঝলমলে করে তোলে, চুলের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব ও খুশকি দূর করে, মাথাও ঠান্ডা রাখে। মেহেদি পাতা বাটা, টকদই, লেবুর রস ইত্যাদি মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পরে চুল ধুয়ে ফেলুন।
টমেটোঃ
নিয়মিত সৌন্দর্যচর্চার উপাদান হিসেবে টমেটো আপনাকে দিতে পারে উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন ত্বক। ত্বক পরিষ্কার করতে বেসন বা উপটানের সঙ্গে টমেটোর রস মিশিয়ে মুখে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। মুখ ভর্তি দাগ বা ব্রণ দূর করতে টমেটোর রস, কাঁচা হলুদ আর মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করুন। ত্বকের পোড়াভাব দূর করতে বাইরে থেকে ফিরে মুখে, গলায় ও হাতে টমেটোর রস লাগান। শুকিয়ে গেলে আরো একবার লাগান। ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে রোদে পোড়া দাগ থাকবে না। ভালো স্ক্রাবের কাজ করে টমেটো। তাই আধা ভাঙা চালের গুঁড়োর সঙ্গে টমেটোর রস ও মধু মিশিয়ে ত্বক ম্যাসাজ করুন ৫ মিনিট। এরপর ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২ দিন সারা শরীরের এভাবে স্ক্র্যাব করুন।
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীঃ
প্রাচীন কাল থেকেই রূপচর্চাতে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর ব্যবহারের বেশ প্রমাণ রয়েছে। বিশেষ করে সংবেদনশালী ত্বক ও মেছতা নিরাময়ের ক্ষেত্রে। ঘৃতকুমারীর পাতা, শশা ও মধু একত্রে পেস্ট করে মেছতায় নিয়মিত লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যায়। পাতার ভেতরের থকথকে অংশটা প্রতিদিন মেছতার ওপর লাগিয়ে ম্যাসাজ করলে দাগ অনেকটাই হালকা হয়ে আসবে। রোদে পোড়া ত্বকেও ঘৃতকুমারী সমান কার্যকর। ঘৃতকুমারীর রস উপটান বা মুলতানি মাটির সাথে মিশিয়ে পোড়া অংশে লাগালে উপকার পাবেন। চালের গুঁড়ি স্ক্র্যাবার হিসেবে ব্যবহার করলে এর সাথে মেশাতে পারেন ঘৃতকুমারীর রস। এতে ত্বক পরিষ্কারের পাশাপাশি হয়ে উঠবে কোমল ও উজ্জ্বল। খুশকি দূর করতেও ঘৃতকুমারীর জুড়ি নেই। এর রস সপ্তাহে দুদিন চুলের গোড়ায় লাগিয়ে দেখুন, মাত্র এক মাসে ফলাফল পাবেন! চুলে ঘৃতকুমারী নিয়মিত লাগালে চুলের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। চুল হয় মোলায়েম ও ঝরঝরে।
তবে যাদের ত্বক সংবেদনশীল তারা কোনো কিছু ব্যবহারের আগে সেটি ত্বকের জন্য সহনশীল কিনা তা পরীক্ষা করে নিন। মিশ্রণটি কানের পাশে লাগিয়ে কিছু সময় পরে ধুয়ে ফেলুন। এবার আরও কিছু সময় অপেক্ষা করে দেখুন র্যাশ,বা চুলকানি হচ্ছে কি না। রূপচর্চার ক্ষেত্রে সবসময় সাবধান থাকুন।