অপরাধ ও দূনীতি

প্রশ্নফাঁস: মূলহোতাসহ দুই আসামির স্বীকারোক্তি, চার জন কারাগারে


রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে যাওয়া ৬ আসামির মধ্যে মূলহোতাসহ দুই জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপর চার আসামিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তার আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড এবং কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর রনপ কুমার এসব তথ্য জানান।
এর আগে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী বাড্ডা থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় রিমান্ড শেষে ৬ আসামিকে আদালতে হাজির করেন। এদের মধ্যে চার জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরবর্তীতে দুই আসামি প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান রয়েল ও জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার অফিসার শামসুল হক শ্যামল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। অপর দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়।
এরপর আদালত জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার এমদাদুল হক খোকন, সোহেল রানা, ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জাবেদ জাহিদ ও পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ১০ নভেম্বর মুক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল ও মোস্তাফিজুর রহমান মিলনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওইদিন রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন ও চাকরিপ্রার্থী রাইসুল ইসলাম স্বপনের রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন এমদাদুল হক খোকন, সোহেল রানা ও আব্দুল্লাহ আল জাবেদ জাহিদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
১০ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, পাঁচটি ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদে এক হাজার ৫১১ জন জনকে নিয়োগ দিতে ৬ নভেম্বর বিকেলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে এমসিকিউ পদ্ধতিতে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি ও পরীক্ষা সম্পাদনের দায়িত্বে ছিল আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
হাফিজ আকতার বলেন, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হবে- ৫ নভেম্বর রাতে এমন তথ্য আসে ডিবির কাছে। ডিবির টিমের সদস্যরা ছদ্মবেশে পরীক্ষার্থী সেজে ৬ নভেম্বর সকাল সাতটার দিকে প্রশ্নপত্রসহ উত্তর পাওয়ার জন্য চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অগ্রিম টাকা পরিশোধের পর প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা রাইসুল ইসলাম স্বপন ডিবির ছদ্মবেশী পরীক্ষার্থীকে নিয়ে যান। এরপর পরীক্ষার উত্তরপত্রসহ স্বপনকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
৬ নভেম্বর পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের সঙ্গে সকালে পাওয়া প্রশ্ন ও উত্তর হুবহু মিলে গেলে স্বপনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রূপালী ব্যাংকের সাভার শাখার শ্রীনগর থেকে জানে আলম মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র সরবরাহকারী শামসুল হক শ্যামলকে ধরতে প্রথমে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অভিযান চালানো হয়। পরে জানা যায়, শ্যামল ঢাকায় অবস্থান করছেন। এরপর ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ১০ নভেম্বর রাতে সোহেল, খোকন ও জাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *