শিল্প ও বাণিজ্য

প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না : বাংলাদেশ ব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ব্যতীত ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, তাদের বিধিমোতাবেক চাকরিতে বহালের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি করোনাকালীন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা বা অদক্ষতার কারণে চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না।

সম্প্রতি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর ফজল কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নির্দেশনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি ব্যাংকারদের চাকরি সুরক্ষায় তদারকি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ ব্যাংকাররা।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক কর্তৃক ইচ্ছামাফিক ঢালাওভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই বন্ধ করতে বেশ আগে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকতর উজ্জীবিত হয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন, এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি কিছুসংখ্যক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিযোগ পাওয়া গেছে, সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও করেনাকালীন শুধু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা বা অদক্ষতার অজুহাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে এবং চাকরি থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পদত্যাগ করার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে না, যা নির্দেশনার পরিপন্থী।

এতে আরও বলা হয়েছে, করোনার কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি থেকে দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে বিপুল অঙ্কের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নসহ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরবচ্ছিন্নভাবে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। ব্যাংকিং সেবা প্রদান করতে গিয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনার কারণে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হলে কর্মরত অন্যদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হবে এবং তাদের মনোবল ও কর্মস্পৃহা হ্রাস পাবে। ফলে ভবিষ্যতে মেধাবী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা ব্যাংকে যোগদানে অনীহা প্রকাশ করবেন, যা দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকিং খাতের জন্য ক্ষতিকর হবে মর্মে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিবেচনায় এবং এ সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্পৃহা অটুট রাখার স্বার্থে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

১. সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত না করা।

২. করোনাকালীন শুধু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা বা অদক্ষতার কারণ প্রদর্শন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত অথবা পদত্যাগ করতে বাধ্য না করা।

৩. পয়লা এপ্রিল ২০২০ তারিখ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও চাকরিচ্যুত হয়েছেন কিংবা চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের (আবেদনপ্রাপ্তি সাপেক্ষে) বিধিমোতাবেক চাকরিতে বহাল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ২০১৭ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম, পদবি, পদত্যাগের কারণ, ওই কর্মকর্তার বর্তমান অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এর মাধ্যমে পরিষ্কার হবে, ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য হওয়া কী পরিমাণ কর্মকর্তা বেকার হয়ে পড়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *