অভিমত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামল এবং আমার শেষ স্তবক

সৈয়দ নাফিউল আলম :

প্রথমত বলতে চাই দেশ এখন অন্য সব সময়ের চেয়ে অর্থনীতিতে সেরা জায়গায় আছে। টানা ৪/৫ বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন থাকা দেশটির দুর্নীতির র‍্যাংকিং এখন পনেরো এর নিচে, যা আগের তুলনায় স্বস্তিদায়ক।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার গতবছরে ছিল ৭.৭৬ শতাংশ [বাংলা ট্রিবিউন], যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের অন্যতম বড় অর্জন। এমন প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে আমরা ধীরে ধীরে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বিশ্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছি।

ব্যক্তিগতভাবে সরকারের দুইটি বড় পদক্ষেপ আমার নজর কেড়েছে। পদ্মা সেতু এবং মেট্রো রেল। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে পুরো দক্ষিণবঙ্গ ঢাকার সাথে যুক্ত হতে যাচ্ছে। কৃষি-শিল্প-অর্থনীতি-শিক্ষা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই এই সেতুর বিশাল ভূমিকা থাকবে।

ঢাকার যানজট শুধু ঢাকার নয়, পুরো দেশেরই একটি সমস্যা। যানজটে সময়ের সাথে সাথে জ্বালানি অপচয় হয়, সেইসাথে বিদেশীদের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। তাই মেট্রোরেল যানজটমুক্ত ঢাকার স্বপ্নের সারথী এবং ভরসার প্রতীক হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোজন, যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। [bang.gov.bd]

আমরা শিক্ষা খাত নিয়ে সমালোচনা করি না দুর্নীতির অভিযোগ করি। কিন্তু একটি বিষয় হয়তো আমরা অবগত নই, ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে ৯৭.৭ ভাগে। যার কৃতিত্ব দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে কেননা ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুন করে জাতীয়করণ হয়েছে।

শিল্প-বাণিজ্য খাত আর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের চেয়ে বেশি কৃতিত্ব আমাদের জনগণ এবং বিশ্বকে দেব। বিশ্বায়নের ফলে সব দেশের প্রযুক্তির বিষ্ফোরণ ঘটেছে যার কৃতিত্ব শুধু বাংলাদেশ সরকারে নয়, সমগ্র বিশ্বের বলা চলে।

অনেক খাত ছিল যেগুলো উন্নতির কথা বলা হলেও আমার মনে ধরেনি। আমি মনে করি আর্থসামাজিক খাত, নিরপত্তা খাত, শিক্ষা খাত, কৃষি খাতসহ আরও কিছু খাতে দুর্নীতি অপরবর্তিত আছে। সেসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আরও সতর্ক এবং সচেতন হতে হবে। সর্বোপরি কিছু কিছু ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকার যে উন্নয়ন এ দেশকে দেখিয়েছে তা বিগত অনেক সরকারের আমলে দেখা যায়নি। যা বর্তমান সরকারকে করেছে অনন্য।

শেষ লাইনঃ সরকারের প্রশংসায় কারও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে তা আমার জানা নেই। বরং সরকারের সমালোচনায় অনেকের জেল জরিমানা করা হয়েছে। সমালোচনা উন্নত গণতন্ত্রের একটি উপাদান। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার দেওয়া একটি বক্তব্যে বলছেন “If there is no criticism, democracy will be at a loss. One should not be saddened by criticism. Criticism gives us an opportunity to assess the truth, creates possibilities to avoid wandering off into the wrong direction, and prevents us from making mistakes.”

সুতরাং, গণতন্ত্রের উন্নয়নের জন্য হলেও ক্রিটিসিজমকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।

সৈয়দ নাফিউল আলম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *