আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ধূমকেতু বাংলা: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ডেকে ভৎর্সনা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালে দেশটির আর্মি পাবলিক স্কুলে হামলা এবং তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে সরকারের চলমান আলোচনা নিয়ে ইমরানকে প্রশ্ন করেন আদালত।
ডন অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদের নেতৃত্বে বিচারপতি কাজী মোহাম্মদ আমিন আহমেদ ও বিচারপতি জিয়াউল হাসানকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে আদালতে হাজির হতে বলেন। এর দুই ঘণ্টা পর ইমরান আদালতে পৌঁছান।
২০১৪ সালে পেশোয়ারের ওই আর্মি স্কুলে টিটিপির অস্ত্রধারী জঙ্গিরা হামলা চালালে ১৩২ শিশুসহ মোট ১৪৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। এদিকে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের জেরে ইমরানের সরকার টিটিপির সঙ্গে আলোচনায় বসে। গত সোমবার তথ্যমন্ত্রী নিষিদ্ধ এই সংগঠনের সঙ্গে ‘পূর্ণ অস্ত্রবিরতিতে’ পৌঁছানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আদালতে যাওয়ার পর শুনানি শুরু হলে বিচারপতি কাজী মোহাম্মদ আমিন আহমেদ স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তান কোনো ছোট দেশ নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের রয়েছে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ সেনাবাহিনী। কিন্তু তাদের (টিটিপি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কেন ফের আলোচনার টেবিলে ডাকা হলো?’
বিচারপতি কাজী মোহাম্মদ আমিন আহমেদ এসময় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে প্রশ্ন করেন, ‘আমরা কি তাহলে আরও একবার আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছি?’
শুনানির পুরো সময়ে ইমরান খানকে একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন তিন সদস্যের ওই বেঞ্চ। এক পর্যায়ে সমন জারি করে শুনানি হচ্ছে জানিয়ে ইমরান খানকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বিচারপতিরা সেই সুযোগ না দিয়ে ইমরান খানকে একের পর এক এমন প্রশ্ন করতে থাকেন।
প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ এক পর্যায়ে ইমরান খানকে বলেন, ‘আপনি ক্ষমতায় আছেন। সরকারও আপনার। আপনি কী করেছেন? আপনি দোষীদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসেছেন।’
বিচারপতি জিয়াউল হাসান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বলেন, ‘সে সব মা-বাবাকে (আর্মি স্কুলে হামলায় যারা সন্তান হারিয়েছেন) আমাদের সন্তুষ্ট করা প্রয়োজন।’
এ ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, ইমরান খানের কাছে তা জানতে চান আদালত। প্রধান বিচারপতি সংবিধান হাতে নিয়ে বলেন, এটা দেশের প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা পাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) পারভেজ মোশাররফ যখন যুক্তরাষ্ট্রের কথিত সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের সঙ্গে পাকিস্তানকে জড়ান, তখন তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, আর্মি স্কুলে ওই হামলার পর ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের একটি খসড়া হিসাব অনুযায়ী সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে পাকিস্তানের ৮০ হাজার প্রাণহানি হয়েছে। ‘গভীর মানসিক অসুস্থতার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল মানুষ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর যুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তারা।’
ইমরান খান আরও বলেন, আফগানিস্তান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে নিরাপত্তার সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে হবে। তিনি বলেন, গত আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর থেকে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস), টিটিপি ও বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তানে এসেছে। এক সময় এসব গোষ্ঠীর সদস্যরা আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আদালতকে বলেন, আর্মি স্কুলে ওই সন্ত্রাসী হামলা ছিল খুবই বেদনাদায়ক। তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে যখন হামলা হয়েছিল, তখন আমাদের দল খাইবার পাখতুনখাওয়ায় ক্ষমতায় ছিল। দুঃখজনক ওই ঘটনার রাতে আমরা আমাদের দলের একটি বৈঠক ডেকেছিলাম।’
ইমরান খান বলেন, ‘আমি এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা যা ক্ষতিপূরণ দিতে পারি, তা করেছি।’ ইমরান খানের কথা শুনে তখন প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ বলেন, ভুক্তভোগী বাবারা সে সব ক্ষতিপূরণ নয়, তাঁদের সন্তানদের চেয়েছিলেন।
বিচারপতি আহসান তখন প্রধানমন্ত্রীকে জানান, নিহত শিক্ষার্থীদের মা-বাবা হামলার সময় সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।
গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, টিটিপির যারা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত নয় এবং পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন মেনে চলার জন্য প্রস্তুত, তাদের সুযোগ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গতকাল শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের ওই বেঞ্চ ইমরানের সরকারকে ভুক্তভোগী বাবা-মায়েদের অবস্থান শোনার জন্য বলেন। এ ঘটনায় যার অবহেলা প্রমাণিত হবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল খালিদ জাওয়াদ খান বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিশার আলী খানের বিরুদ্ধে মামলা করা খুবই সহজ কাজ।
সুপ্রিম কোর্ট এ নিয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল খালিদ জাওয়াদ খান অতিরিক্ত সময় দিতে আদালতকে অনুরোধ করেন। আদালত তার অনুরোধ মঞ্জুর করে প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বাড়িয়ে চার সপ্তাহ করেন।