মাতৃভূমি

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের পাশাপাশি বিদ্যুৎ-পানিও পাচ্ছেন তারা

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: যৌতুক দিতে না পারায় সবজান বিবিকে (৪৫) ছেড়ে চলে গেছে তার স্বামী। এরপর থেকে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে মানবেতর জীবন কাটাতেন তিনি। অর্থ-কড়িও নেই। মেয়ে মোওরায় বেগমকে বিয়ে দিয়ে মনে করেছিলেন কিছুটা স্বস্তি ফিরবে। কিন্তু, মেয়ের জামাইও বিয়ের কিছুদিন পরে মারা যায়।

‘তখন মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সবকিছু বদলে গেল। গৃহকর্মীর কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে যেতাম ও দুহাত তুলে কাঁদতাম। আল্লাহ আমার কান্না শুনেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছি। এখন আমি নিজের বাড়িতে থাকি’, বলেন সবজান বিবি।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার টাট্রিউলি আশ্রয়কেন্দ্রের ফয়জুন বেগম স্বামীর চিকিৎসার কারণে সব হারিয়ে ফেলেন। নিজের ভিটাটিও বিক্রি করেন। তবুও, স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি। স্বামী মারা যাওয়ার পর নিঃস্ব এই নারী মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে দিন পার করছিলেন। থাকতেন কারো বারান্দায়, ফুটপাতে বা উঠোনে।

‘সারাদিন কাজ শেষে এখন আর ফুটপাত বা অন্যের ঘরে থাকতে হবে না। এখন আমার নিজের একটা ঘর আছে’, বলেন ফয়জুন বেগম।

একই আশ্রয়কেন্দ্রের ভূমিহীন দরিদ্র বিধবা আজিরুন বেগম বলেন, ‘আমি এখন প্রতিদিন থাকতে পারব নিজের ঘরে। আমার কিছুই ছিল না। এখন যেন আমার সব আছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরই নয়, পেয়েছি বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থাও।’

সবাই উপহারের ঘর পেয়ে খুশী। তারা বলছেন, আগে কোনোমতে খাবার জোগাড় করতে পারলেও থাকার ব্যবস্থা করা যেত না। ছিন্নমূল মানুষের মতো থাকতে হতো। কিন্তু, এখন তাদেরও একটা নির্দিষ্ট থাকার জায়গা আছে। আছে একটা ঠিকানা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শিমুল আলী বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের ১১০টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষে ইতোমধ্যে উপকারভোগীদের কাছে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১০০টি ঘরের মধ্যে ৪২টি ঘরের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাকি ঘরের কাজ চলমান রয়েছে।’

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি।’

পানির বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মুহসিন বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে সারাদেশের ন্যায় কুলাউড়াতেও ১০০ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের হাতে ইতোমধ্যে কবুলিয়ত, নামজারি খতিয়ান, গৃহ হস্তান্তরের সনদপত্র দেওয়া হয়েছে। আরও একশ ঘরের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।’

‘শতাধিক উপকারভোগীদের বিদ্যুৎ ও নলকূপের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন’, বলেন তিনি।

গত ১০ জুলাই কুলাউড়ার জয়চন্ডী ও কর্মধা ইউনিয়নে প্রকল্পের ঘরের কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মল্লিকা দে বলেন, ‘এই গৃহগুলোর কাজ পরিদর্শন করে দেখলাম। কাজ ভালো হয়েছে। উপকারভোগীরাও ঘর পেয়ে অনেক আনন্দিত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *