পর্যটন ও পরিবেশ

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হতে পারে ত্রিপুরা মহারাজার কাচারি বাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: ভবনটি আজ নীরব-নিস্তব্ধ। এর ভেতরে এখন কেউ নেই। এখন আর কেউ আসেও না। তবে এক সময় লোকে লোকারণ্য ছিল এই ভবনটি। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন এখানে খাজনা দিতে আসতেন।

সেই খাজনাযুগের অবসান হয়েছে বহু বছর আগে। এখন খাজনাযুগের স্মৃতি ধারণ করে নীরবে ভগ্ন অবস্থায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কালের সাক্ষী ত্রিপুরা মহারাজার কাচারি বাড়ি। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার পরিত্যক্ত ত্রিপুরা মহারাজা কাচারি বাড়িটি সংরক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

চলতি বছরের ৩ জুন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান বরাবরে এ ব্যাপারে একটি লিখিত আবেদন করা হয়। এতে সিলেট অঞ্চলের ১৬টি ত্রিপুরা পল্লীর ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন, ভূমি সমস্যা ও সমাধানসহ কাচারি বাড়ি সংরক্ষণ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আহ্বান করা হয়।

ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৮৯৮ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজা কর্তৃক এতদঞ্চলে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের জন্য শহরের মধ্যভাগে প্রায় দেড় বিঘা জমির ওপরে চুন-সুরকি দিয়ে এই কাচারি বাড়িটি নির্মাণ করেন। ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য আর ২০ ফুট প্রস্থে ১২ ইঞ্চি চওড়া দেওয়াল দ্বারা নির্মিত হয় ভবনটি। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে পর্যায়ক্রমে ত্রিপুরার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র মাণিক্য দেববর্মন বাহাদুর এবং আধুনিক ত্রিপুরার স্থপতি মহারাজা বীর চন্দ্র মাণিক্য দেববর্মন বাহাদুর ও তার ছেলে মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য দেববর্মন বাহাদুর ১৯০৯ সাল পর্যন্ত এতদঞ্চলে তাদের রাজত্বকালে এখান থেকেই তাদের প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন। বর্তমানে এই কাচারি বাড়িটি স্থানীয় ভূমি অফিসের সীমানার অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) এ কাচারি বাড়িটি ঘুরে দেখা যায়, ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অংশ হিসেবে কালের স্বাক্ষী হয়ে দীর্ঘকাল ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ভবনটি। ৩টি কক্ষের ৮টি দরজা ও ৯টি জানালার একটিও অস্থিত্ব নেই। রঙ উঠে গিয়ে কালছে আকার ধারণ করা বিশাল এই ভবনের মধ্যভাগ বরাবর একটি বড় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানি প্রতিটি ঘরে ঢুকে ঘরের মেঝে এবং দেয়ালের নানা অংশকে স্যাঁতস্যাঁতে করে দিয়েছে। দেয়ালে গজিয়েছে বটসহ অন্যান্য গাছের চারা। কেবলমাত্র সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরাকীর্তির নিদর্শন ঐতিহাসিক কাচারি বাড়িটি এখন তার যৌবন হারিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে দিনে দিনেই কালেরগর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে।

বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মা জানান, ২০১৬ জুন মাসে তৎসময়ের শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নুরুল হুদা এই কাচারি বাড়িটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে ভবনটিতে নতুন করে রঙের কাজ করান। কিন্তু পরবর্তীতে এই কাজের আর কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। এ ব্যাপারে ত্রিপুরা মহারাজার স্মৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক এবং তার রাজত্বকালে নির্মিত কালের সাক্ষী হিসেবে ভবনটির আদিরূপ অক্ষুন্ন রেখে তা পুনঃসংস্কার করা হলে এর সুপ্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষার সুযোগ পাবে। আমরা এখানে আমাদের ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আহ্বান জানিয়েছি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নেছার উদ্দিন বলেন, ত্রিপুরা কাচারি বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য চিন্তাভাবনা আমাদের রয়েছে। এ ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাড়া পাইনি। হয়তো আগামীতে একটি সংরক্ষণ বা পুনঃসংস্কারের কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক এ.কে.এম সাইফুর রহমান বলেন, এটি যদি ত্রিপুরা রাজার সময়কার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং তাৎপর্য রয়েছে। এ স্থানটি পরিদর্শন করে অনেকে প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

আরও পড়ুন:

আদিম গুহার মধ্যেই বিশাল রেস্তোরাঁ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *