প্রচ্ছদ

প্রতি সেকেন্ডে নায়াগ্রা জলপ্রপাত দিয়ে ৩,১৬০ টন পানি প্রবাহিত হয় তারপরও..

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম:  নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কথা সর্বজনবিদিত। এর নাম জানা সাধারণ জ্ঞানেরও অংশ বটে। এক হিসাবে জানা যায়, প্রতি সেকেন্ডে নায়াগ্রা জলপ্রপাত দিয়ে ৩ হাজার ১৬০ টন পানি প্রবাহিত হয়। অথচ এই জলপ্রপাতও পুরোপুরি শুকনো খটখটে হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তা-ও একবার নয়, দুই–দুইবার। কিন্তু কীভাবে? চলুন, সেই গল্পই শুনে নেওয়া যাক…

মূল ঘটনায় যাওয়ার আগে নায়াগ্রা জলপ্রপাত সম্পর্কে কিছু তথ্য বলি। নায়াগ্রায় মূলত তিনটি জলপ্রপাত আছে। এই তিনে মিলেই মূল জলপ্রপাত। এতে প্রবাহিত পানির মূল উৎস নায়াগ্রা নদী। নায়াগ্রা জলপ্রপাত উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত। এটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন এক ফরাসি ধর্মযাজক, ১৬৭৮ সালে।

শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যটকদের কাছে নায়াগ্রা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত ঘেঁষে এর অবস্থান। দুই দেশই তাদের নিজ নিজ অংশে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলেছে। সেগুলোয় দর্শনার্থীর ভিড়ও ব্যাপক। তবে শুধু পর্যটন নয়, নায়াগ্রার পানিপ্রবাহ বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যবহার করা হয়।

এবার আসা যাক আসল কথায়। নায়াগ্রা জলপ্রপাত শুকিয়ে গিয়েছিল ১৮৪৮ সালে। তারিখ ছিল মার্চের ২৮ ও ২৯। লেক এরিতে থাকা বিশাল বিশাল বরফের চাঁই ভেঙে গিয়েছিল। এরপর বাতাস ও পানির তোড়ে সেসব বরফ খণ্ড আটকে পড়ে নায়াগ্রা নদীর মুখ বরাবর। এতে বাধাগ্রস্ত হতে থাকে পানির প্রবাহ। একপর্যায়ে লাখ লাখ টন বরফ আরও শক্ত হয়ে মানুষের তৈরি বাঁধের মতো হয়ে পড়ে এবং সে কারণে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে পানির প্রবাহ একেবারেই কমে যায়।

নায়াগ্রায় যে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে, তা প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন স্থানীয় কয়েকজন কারখানা শ্রমিক। কারণ, তাঁদের কারখানার ওয়াটার হুইলের গতি কমে যাচ্ছিল। নায়াগ্রা জলপ্রপাত শুকিয়ে যাওয়ার এ ঘটনা ছিল অভাবিত। হই হই পড়ে গিয়েছিল চারদিকে। কেউ কেউ বলতে শুরু করেছিলেন, এটি নাকি পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার লক্ষণ! আর স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকে শুরু করেছিলেন বিশেষ প্রার্থনা, যেন নায়াগ্রা দিয়ে আবার পানি গড়ায়।

তবে সেবার নায়াগ্রা ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় শুকনো থাকতে পারেনি। কারণ, বাতাস উল্টো দিকে বইতে শুরু করার পর, বাতাসের তোড়েই ভেঙে গিয়েছিল বরফের চাঁই। ফলে আবার শুরু হয়েছিল পানির প্রবাহ। অর্থাৎ সেবার পুরোপুরি প্রকৃতির খেয়ালেই শুকিয়ে গিয়েছিল নায়াগ্রা জলপ্রপাত। আবার প্রকৃতিই ফিরিয়ে দিয়েছিল পানি। তবে এর ১০০ বছর পর মানুষ নিজের ইচ্ছাতেই শুকিয়ে দিয়েছিল নায়াগ্রা জলপ্রপাত।

১৯৬৯ সালের ২৫ জুন থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রকৌশলী দল ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বাঁধ তৈরি করেছিলেন। মূলত নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মার্কিন অংশে এটি তৈরি করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ভূতত্ত্ববিদদের গবেষণা। নায়াগ্রার তলদেশের ভৌগোলিক ও সেখানকার পাথরের গঠন বোঝার জন্যই এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটি নির্মাণে প্রয়োজন হয়েছিল ২৭ হাজার ৮০০ টন পাথর ও মাটি। বাঁধ বরাবর দর্শনার্থীদের জন্য একটি রাস্তাও তৈরি করা হয়েছিল, যাতে তাঁরা শুকনো নায়াগ্রা দেখতে পারেন। পরে ভূতত্ত্ববিদদের গবেষণা কাজ শেষ হওয়ার পর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই বাঁধ।

নায়াগ্রার শুকিয়ে যাওয়ার মতো বিরল ঘটনা অবশ্য নিকট ভবিষ্যতেও দেখা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্য প্রশাসনের এ ধরনের একটি পরিকল্পনা আছে। শত বছরের পুরোনো একটি পদচারী–সেতু মেরামতের জন্য নায়াগ্রাকে কিছুদিনের জন্য শুকিয়ে ফেলতে চায় রাজ্য প্রশাসন। অর্থাৎ পুরো নায়াগ্রা নয়, শুধু এর মার্কিন অংশই শুকনো খটখটে করা হবে। বর্তমানে এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগানে ব্যস্ত আছে নিউইয়র্ক রাজ্য। খরচও তো কম নয়, আড়াই কোটি ডলারেরও বেশি প্রয়োজন এ কাজে!

অথচ প্রকৃতি কত শক্তিশালী, একবার ভাবুন! ১৮৪৮ সালে প্রকৃতির খেয়ালেই যে পুরোপুরি শুকিয়ে গিয়েছিল নায়াগ্রা জলপ্রপাত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *