প্রচ্ছদ

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের শেষ লেখায় ১৯৭১ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের জন্য ভালোবাসা

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: পাঁচ দশক আগে একজন তরুণ এমপি হিসেবে প্রতিবেশী ভূখণ্ডের মানুষের স্বাধীনতার দাবির পক্ষে যেভাবে উচ্চকণ্ঠ হয়েছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঠিক সেভাবেই তার ভাবনায় ছিল বাংলাদেশ।

গত আগস্টে চিরবিদায় নেওয়ার আগে সর্বশেষ যে দীর্ঘ প্রবন্ধটি তিনি লিখেছিলেন, তাতে এসেছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয় আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের জন্য তার ভালোবাসার কথা।

ভারতের ইংরেজি দৈনিক হিন্দু এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধুর জনশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ভয়েস অব মিলিয়নস’ শিরোনামে যে প্রবন্ধ সঙ্কলন প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে, সেখানেই ছাপা হবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের লেখাটি।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত ২২-২৩ মার্চ সংসদের যে বিশেষ অধিবেশ হওয়ার কথা ছিল, সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণবের। তখন বইটির মোড়ক উন্মোচনেও উপস্থিত থাকার কথা ছিল তার।

কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সেসব অনুষ্ঠান স্থগিত করতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ সরকার। এরই মধ্যে গত ৩১ অগাস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে সব পক্ষের শ্রদ্ধা পাওয়া এই রাজনীতিবিদ।

পরিস্থিতি ভালো হলে শিগগিরই হয়ত সংসদের সেই বিশেষ অধিবেশন হবে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সেই প্রবন্ধ সঙ্কলনও আলোর মুখ দেখবে, কিন্তু সেই আনুষ্ঠানিকতায় প্রণব মুখোপাধ্যায় থাকবেন না।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির মিডিয়া কনসালটেন্ট আসিফ কবীরকে উদ্ধৃত করে হিন্দু লিখেছে, সঙ্কলনটির জন্য বাংলাদেশের বাইরে কেবল প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই লিখতে অনুরোধ করা হয়েছিল। আর তিনি সানন্দে রাজি হয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে আসিফ কবীর বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি ছিলেন পরিবারেরই একজন। সে কারণেই উনাকে লিখতে অনুরোধ করা হয়েছিল।”

মুক্তিযুদ্ধকালে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা কংগ্রেসের নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন রাজ্যসভার সদস্য। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে তখনকার মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে তিনি জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে।

পাকিস্তানিরা বাংলাদেশে যে বর্বরতা চালিয়েছে, সেসব কথা তুলে ধরে সেই বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমি সেই রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলছি, যেখানে সুনির্দিষ্টভাবে একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। সেই রাজনৈতিক সমাধান চাইলে সার্বভৌম বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতাও দিতে হবে।”

হিন্দু লিখেছে, পার্লামেন্টে দেওয়া সেই বক্তৃতা, একাত্তরের স্মৃতি আর বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের কথা এসেছে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধে।

তার ব্যক্তিগত সহকারী অভিজিত রায় বলেছেন, এটাই ছিল ভারতের প্রয়াত এই সাবেক রাষ্ট্রপতির লেখা শেষ বড় প্রবন্ধ, যা লিখতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ওপর তাকে রীতিমত গবেষণা করতে হয়েছে। আর এই কাজে তিনি বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকেও সাহায্য নিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর মেয়ে বাংলাদেশের আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মর্মস্পর্শী লেখাও ওই সঙ্কলনে ছাপা হবে বলে জানানো হয়েছে হিন্দুর প্রতিবেদনে। সেই প্রবন্ধের শিরোনাম- ‘মাই ব্রাদার্স’।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের তখনকার রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। সেই রাতে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী-সন্তান, পুত্রবধূসহ পরিবারের ১৫ জনকে প্রাণ দিতে হয়। বিদেশে থাকায় বেঁচে যান কেবল দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

এরপর দীর্ঘদিন ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে। দিল্লিতে সেইসব দিনে প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং তার স্ত্রী, বাংলাদেশের নড়াইলের মেয়ে শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।

প্রণবের মেয়ে কংগ্রেস নেত্রী শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় বলেন, “কারও বাবা-মার স্বাভাবিক মৃত্যু হলেই মেনে নেওয়া কষ্টের; সেখানে শেখ হাসিনাকে কিসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, সেটা অকল্পনীয়। ওই সময় তার ইমোশনাল সাপোর্টটা খুব দরকার ছিল। আমার মনে হয় সে কারণেই আমার মা-বাবার সঙ্গে তার বন্ধনটা এত দৃঢ়।”

সেই বন্ধনের কথা বলতে গিয়ে বহু বছর পরের আরেকটি ঘটনা স্মরণ করেন শর্মিষ্ঠা। শেখ হাসিনা তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দিল্লি সফরে গেছেন, আর প্রণব মুখোপাধ্যায় তখন ভারতের কংগ্রেস সরকারের অর্থমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাসায় গিয়ে শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। কিন্তু তাতে যে প্রটোকলের ব্যাঘাত ঘটবে, সে কথা তখন মনে করিয়ে দিলেন প্রণব। জবাবে শেখ হাসিনা তাকে বলেন, “আমি মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি না, দেখা করতে যাচ্ছি আমার বৌদির সঙ্গে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *