নিখিল মানখিন, ধূমকেতু বাংলা: ল্যাবরেটরির সংখ্যার তুলনায় দৈনিক করোনা পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা তলানিতে পড়ে আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর গত পৌনে দুই বছরে দেশে করোনার পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যা বেড়েছে অনেক। ৫০টি ল্যাবরেটরি থাকার সময় দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা ১৩ থেকে ১৮ হাজারের মধ্যে উঠানামা করেছিল। কিন্তু বর্তমানে ল্যাবরেটরির সংখ্যা বেড়ে ৮৪৮টি হলেও পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা প্রায় একই অবস্থানে রয়ে গেছে। দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ হাজারে অবস্থান করলেও তা বেশিদিন থাকেনি। দেশের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র জানতে এবং প্রয়োজনীয় করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা বাড়াতেই হবে। প্রয়োজনে অ্যান্টিবডি টেস্ট যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রন অতি সংক্রমণশীল ভাইরাস। ইতোমধ্যে ভাইরাসটি বিশ্বের ৮০টি দেশে ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু দেশে বিরাজ করছে করোনাময় স্বাভাবিক অবস্থা। করোনা ভাইরাস থেকেও যেন নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই। অনেক আগেই করোনা টেস্ট করানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে দেশের মানুষ। উপসর্গহীন করোনা রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগণ। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বের অনেক দেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ও অবনতির ঘটনা ঘটেছে বহুবার। ঝুঁকিমুক্ত ভেবে স্বাস্থ্যবিধিহীন স্বাভাবিক চলাফেরা করতে গিয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে পড়েছে অনেক দেশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এ ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আর ২০২০ সালের ৮ মার্চে বাংলাদেশে প্রথম তিন জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। তার ঠিক ১০ দিন পর প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়। এরপর থেকে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী-নিম্নমুখী হলেও ধারণা করা হচ্ছিল ২০২০ সালের শেষের দিকে শীত পড়লে করোনার প্রকোপ বাড়বে। কিন্তু ধারণা ভুল প্রমাণ করে উল্টো দেশে করোনার সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ২০২১ সালের মার্চের শেষ দিক পর্যন্তও এই ধারা নিম্নমুখীই ছিল। কিন্তু করোনার চরিত্রটা বদলাতে থাকে মে মাসের দিকে, যা টানা কয়েক মাস দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে।হঠাৎ করে বেড়ে যায় করোনা রোগী, শনাক্তের হার ও মৃতের সংখ্যা। আবার গত চার মাস ধরে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে এবং অনেকটা স্বস্তিদায়ক অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিকে ঝুঁকিমুক্ত বলতে নারাজ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
দেশে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করোনার জন্য তিনটি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু রয়েছে। সেগুলো হলো আরটি-পিসিআর, জিন এক্সপার্ট ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন। বর্তমানে রয়েছে ৫৬টি আরটি-পিসিআর, ৫৪টি জিন এক্সপার্ট ও ৫৪৫টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগার। সর্বমোট চলমান পরীক্ষাগারের সংখ্যা ৮৪৮টি। এর মধ্যে বেসরকারি পরীক্ষাগারের সংখ্যা ৯৫টি।
২০২১ সালের পরীক্ষিত নমুনা, শনাক্তকৃত রোগী ও শনাক্তের হার চিত্র :
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ২০২১ সালের পহেলা জুনে দেশে পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ৩২,০৫৫টি, শনাক্তকৃত রোগী ৮,৩০১ জন ও শনাক্তের হার ২৫.৯০ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা আরটি- পিসি আর ৫৩টি, জিন এক্সপার্ট ৪৪টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৩৯১টি। এভাবে ৩১ জুলাই দেশে পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ৩০,৯৮০ , শনাক্তকৃত রোগী ৯,৩৬৯ জন ও শনাক্তের হার ৩০.২৪ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা আরটি পিসি আর ৫৪টি, জিন এক্সপার্ট ৫০টি ও র্যাপিড এ্যান্টিজেন ৪৬৪টি।
পহেলা আগস্টে পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ৪৯,৫৩১, শনাক্তকৃত রোগী ১৪,৬৪৪ জন ও শনাক্তের হার ২৯.৯৭ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা আরটি পিসি আর ৫৪টি, জিন এক্সপার্ট ৫০ টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৪৮১টি। এভাবে ৩১ আগস্টে পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ২৮,০৯৭টি, শনাক্তকৃত রোগী ৩,৩৫৭ জন ও শনাক্তের হার ১১.৯৫ শতাংশ। আরটি পিসি আর ৫৫টি, জিন এক্সপার্ট ৫১টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৫৪৫টি।
পহেলা সেপ্টেম্বর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ৩০,২৯৪টি, শনাক্তকৃত রোগী ৩,০৬২ জন ও শনাক্তের হার ১০.১১ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা আরটি পিসিআর ৫৬টি, জিন এক্সপার্ট ৫১টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৫৪৫টি। ৩০ সেপ্টেম্বর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ২৬,৫৬৯টি, শনাক্তকৃত রোগী ৮৬০ জন ও শনাক্তের হার ৩.২৪ শতাংশ। আর আরটি পিসি আর ৫৬টি, জিন এক্সপার্ট ৫৩টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৫৪৫টি।
পহেলা অক্টোবর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ২৪,৫৭০টি, শনাক্তকৃত রোগী ৮৪৭ জন ও শনাক্তের হার ৩.৪৩ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা আারটি পিসি আর ৫৬টি, জিন এক্সপার্ট ৫৩টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৫৪৫টি। এভাবে ৩১ অক্টোবর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ১৭,২২৬টি, শনাক্তকৃত রোগী ২১১ জন ও শনাক্তের হার ১.২২ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা আরটি পিসি আর ৫৬টি, জিন এক্সপার্ট ৫৪টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৫৪৫টি।
পহেলা নভেম্বর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ১৯,৭৩৪টি, শনাক্তকৃত রোগী ২১৪ জন ও শনাক্তের হার ১.০২ শতাংশ। আর ল্যাবরেটরীর সংখ্যা আরটি পিসিআর ৫৬টি, জিন এক্সপার্ট ৫৪টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৫৪৫টি। এভাবে ৩০ নভেম্বর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ১৯,৮০২টি, শনাক্তকৃত রোগী ২৭৩ জন ও শনাক্তের হার ১.৩৮ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা আরটি পিসি আর ৫৬টি, জিন এক্সপার্ট ৫৪টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৫৪৫টি।
পহেলা ডিসেম্বর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ১৮,৮৫১টি, শনাক্তকৃত রোগী ২৮২ জন ও শনাক্তের হার ১.৫০ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা আরটি পিসি আর ৫৬টি, জিন এক্সপার্ট ৫৪টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৫৪৫টি। এভাবে ১৯ ডিসেম্বর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ১৭,৩৩২টি, শনাক্তকৃত রোগী ২১১ জন ও শনাক্তের হার ১.২২ শতাংশ। আর আরটি পিসি আর ৫৬টি, জিন এক্সপার্ট ৫৪টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৫৪৫টি।
২০২০ সালের পরীক্ষিত নমুনা, শনাক্তকৃত রোগী ও শনাক্তের হার চিত্র :
২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ২০১৯টি, শনাক্তকৃত রোগী ৩৪১ জন এবং ল্যাবরেটরীর সংখ্যা ছিল ১৭টি।
৩০ এপ্রিল পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ৪৯৫০টি, শনাক্তকৃত রোগী ৫৬৪ জন এবং ল্যাবরেটরীর সংখ্যা ছিল ২৮টি।
১৫ মে পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ৮৫৮২টি, শনাক্তকৃত রোগী ১২০২ জন এবং ল্যাবরেটরীর সংখ্যা ছিল ৪১টি।
১৫ জুন পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ১৫,০৩৮টি, শনাক্তকৃত রোগী ৩০৯৯ জন এবং ল্যাবরেটরীর সংখ্যা ছিল ৬০টি।
২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ১৩,৪০৪টি, শনাক্তকৃত রোগী ১৪৩৬ জন ও শনাক্তের হার ১০.৭১ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা ছিল ১০৮টি।
২ অক্টোবরে পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ১১,১৭৬টি, শনাক্তকৃত রোগী ১৩৯৬ জন ও শনাক্তের হার ১২.৪৯ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা ছিল ১০৯টি। ৩০ অক্টোবর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ১৪,১৪১টি, শনাক্তকৃত রোগী ১৬০৪ জন ও শনাক্তের হার ১১.৩৪ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা ছিল ১১৪টি।
২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ১৫,৯৭২টি, শনাক্তকৃত রোগী ২১৯৮ জন ও শনাক্তের হার ১৩.৭৬ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা ছিল ১১৮টি। আর ৩১ ডিসেম্বর পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ১৩,২৫৪টি, শনাক্তকৃত রোগী ১০১৪ জন ও শনাক্তের হার ৭.৬৫ শতাংশ। ল্যাবরেটরীর সংখ্যা আরটি পিসি আর ৫১টি, জিন এক্সপার্ট ২৪টি ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৪০টি।
করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য নমুনা সংখ্যা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর ধূমকেতু বাংলাকে জানান, করোনা ভাইরাস শনাক্তের নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নমুনা পরীক্ষার পরিবিধি বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে সরকার। তারা নমুনা সংগ্রহের সংকট কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু ইচ্ছে মতো নমুনা পরীক্ষা করোনা সম্ভব হচ্ছে না। প্রবল উপসর্গের সন্দেহজনক রোগীকেই পরীক্ষা করানো উচিত। মৃদু উপসর্গের রোগীকে পরীক্ষা না করিয়ে বাসায় আইসোলেশনে থাকলেই চলে। এই পরীক্ষা খুবই ব্যয়বহুল। নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে হাতে রিপোর্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি নমুনা পরীক্ষার পেছনে সরকারিভাবে ব্যয় বহন করতে হয় বেশ কয়েক হাজার টাকা।
বিশ্বের অন্য সব করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে অধিকাংশ মানুষ নিজেদের খরচে পরীক্ষা করিয়ে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা সম্ভব না। সন্দেহজনক রোগীদের অধিকাংশই দরিদ্র। এসব কিছু বিবেচনা করেই সরকারি ল্যাবগুলোতে পরীক্ষার শতভাগ ব্যয় বহন করছে সরকার। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে পরীক্ষার কীট সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কৃপণতা নেই বলে জানান ডা. এএসএম আলমগীর।
পর্যায়ক্রমে নমুনার সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ ধূমকেতু বাংলাকে জানান, কয়েকদিন পর পরই নতুন নতুন জায়গায় ল্যাবরেটরি স্থাপন করছে সরকার। করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য ল্যাবরেটরীর পাশাপাশি দৈনিক পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যাও বেড়েছে। দৈনিক সর্বোচ্চ পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে ল্যাবরেটরীর সংখ্যাও ৫৮টি বেড়ে সাড়ে ৮শটিতে দাঁড়িয়েছে। নমুনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের করোনা পরিস্থিতির চিত্র পর্যালোচনা করে সরকার সময়োপযোগী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারছে বলে জানান অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ।
এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় অ্যান্টিবডি টেস্ট অনুমোদন দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনেকদিন ধরে দাবি করা হচ্ছিল অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দেয়ার জন্য। এখন এটা চালু করার অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
অ্যান্টিবডি, অ্যান্টিজেন ও আরটি-পিসিআর টেস্ট:
বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরটি-পিসিআর বনাম অ্যান্টিজেন আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে রোগীর নাসারন্ধ্রের পেছন থেকে মিউকাস সংগ্রহ করে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে বিকল্প হিসেবে কখনও মুখগহবরের পেছন থেকেও নমুনা নেওয়া হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানান, সংগৃহীত নমুনা থেকে পরীক্ষাগারে প্রথমে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভাইরাসটির আরএনএ আলাদা করে ফেলা হয়। আরটি-পিসিআর মেশিন পৃথক করা আরএনএকে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ায় ডিএনএতে রূপান্তরিত করে। এরপর ডিএনএর অংশ বিশেষকে পলিমার্স চেইন রিয়েকশনের সাহায্যে বহুগুণে বর্ধিত করে এর মাত্রা এমন একটি পর্যায়ে উন্নীত করে, যা মেশিন শনাক্ত করতে সক্ষম।
রোগীর কাছ থেকে সংগৃহীত নমুনায় যদি করোনাভাইরাস থাকে তাহলে এই বিক্রিয়া সংঘটিত হয় এবং ‘পজিটিভ’ সংকেত পাওয়া যায়। অর্থাৎ যার নমুনা তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বিপরীতে অ্যান্টিজেন টেস্টেও নাক কিংবা মুখবিহ্বরের শ্লেষ্মা ব্যবহার করা হয়, তবে আরএনএ বিশ্লেষণের পরিবর্তে এখানে ভাইরাসের প্রোটিন শনাক্ত করা হয়। আবার রক্ত পরীক্ষা করেও অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নির্ভুলতার কারণে বরাবরই আরটি-পিসিআরের পক্ষে বলে আসছে। কেননা আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় ভাইরাসের জৈব রাসায়নিক উপাদানটি বিবর্ধিত করে বলে সংগৃহীত নমুনায় ভাইরাসের পরিমাণ নগণ্য হলেও শনাক্ত করতে পারে।
পক্ষান্তরে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ভাইরাসের প্রোটিনকে বিবর্ধিত করার কোনো ব্যবস্থা নেই বলে নমুনায় ভাইরাসের পরিমাণ কম হলে তখন আর তা শনাক্ত হয় না। ফলে রোগী সংক্রমিত হলেও তা অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ ’ আসতে পারে, যাকে বলা হয় ‘ফলস নেগেটিভ ’। তখন আবার লক্ষণ থাকলে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করতে হয়।
এছাড়া রয়েছে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা, যাতে সংক্রমণের ফলে দেহে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয়, তা থেকে ধরে নেওয়া হয় যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেও অ্যন্টিবডি টেস্টে পজিটিভই দেখাবে।
আরো পড়ুন: