নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: মাদী কুকুরটা মারা যাওয়ার পর নিজের কনিষ্ঠ আঙ্গুলটাকে কুকুর ছানার মুখে দিয়ে চুষিয়ে ছানাটাকে বড় করেছেন। আবার টিয়া পাখির কামড়ে ডান হাতের তর্জনীর মাথাটাও হারিয়েছিলেন। খেলার মাঠে না গিয়ে শৈশবে ঘুরে বেড়াতেন গ্রামীণ ঝোপ-জঙ্গলে। কৈশোর না পেরোতেই সুন্দরবন দর্শনের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যান ঘর থেকে। পাঠ্যপুস্তক রেখে গল্প-উপন্যাসের বই নিয়ে মেতে থাকতেন। জিম করবেট পড়ে তিনি হয়ে ওঠেন তুখোড় শিকারি। রাতের অন্ধকারেও শিকারে বের হতেন। শিকাররত অবস্থায় গুলিভ্রষ্ট হয়ে প্রিয় কুকুরটার চোখে গুলি লাগলে অনুশোচনায় কাতর হয়ে পড়েন। প্রতিজ্ঞা করেন আর শিকার নয়। এবার বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করবেন, লেখালেখির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করবেন।

এভাবে তিনি হয়ে ওঠেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষক। এ ছাড়াও একাধারে তিনি কথাসাহিত্যিক, রম্য লেখক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক লেখক। হাজাম সম্প্রদায় নিয়ে ‘হাজাম’ (উপন্যাসটির নাম ‘ওস্তা’, পরিবর্তন করে ‘হাজাম’ নামকরণ করা হয়) উপন্যাস লিখে বোদ্ধা পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। উপন্যাসটি ‘দৈনিক জনকন্ঠ’ ও কলকাতার সাহিত্য ‘উদ্দালক’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। উপন্যাস সম্পর্কে উদ্দালক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘হাজাম সম্প্রদায় নিয়ে ইতোপূর্বে আর কোন উপন্যাস লেখা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। নকিবগিরি করা সম্পাদকের উদ্দেশ্য নয়। পাঠকভোলানো ব্যবসা উদ্দালক করে না। বৈচিত্র্য ও অভিনবত্বের কথাটি বলবার দায় থেকেই এ কথাগুলোর অবতারণা। গ্রহণ-বর্জন পাঠকের নিজস্ব ব্যাপার।’

এই উপন্যাসটি পরবর্তীতে ‘ড. মঞ্জুশ্রী সাহিত্য-২০০৮’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। এ যাবৎ তিনি ১৬টি উপন্যাস, ১৩০টি রম্যরচনা এবং ১২৩০টি প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার লিখেছেন। বন-বনানী-বন্যপ্রাণী-বুনোফুল নিয়ে তার লেখা উপন্যাস “বনবিহারী” বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ ধারাবাহিক প্রকাশিত হলে পরবর্তীতে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা ‘মাওলা ব্রাদার্স’ মোড়কবন্দি করে।

লেখকের প্রবন্ধ সংকলন ‘লাল সংকেতে জলবায়ু’ (জলবায়ু ও পরিবেশ সংক্রান্ত) ২০২২ বইমেলা উপলক্ষ্যে মোড়কবন্দি করতে যাচ্ছে দেশের আরেক ঐতিহ্যবাহী ও খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা ‘স্টুডেন্ট ওয়েজ’। উক্ত গ্রন্থে বাছাইকৃত ৫০টি প্রবন্ধ-নিবন্ধ রয়েছে। যা ইতিপূর্বে দেশের জাতীয় পত্রিকার উপসম্পাদকীয় বিভাগে ছাপা হয়েছে।

এ বহুমুখী প্রতিভাবান মানুষটির নাম ‘আলম শাইন’। তিনি ৫ মাঘ, ১৩৭৭ সালে (১৮ জানুয়ারি, ১৯৭১) জন্মগ্রহণ করেছেন লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার পূর্বচরপাতা গ্রামে। তিনি গল্প, উপন্যাস লেখার পাশাপাশি দু’হাতে লিখছেন পাখ-পাখালিদের নিয়েও। দেশের প্রথম শ্রেণির দৈনিক পত্রিকাগুলোতে তার লেখা ছাপা হচ্ছে নিয়মিত।

পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবর্তিত ‘বোস্টন বাংলা নিউজ অ্যাওয়ার্ড-২০১৫’-এ ভূষিত হয়েছেন। ভূষিত হয়েছেন, ‘ক্যানভাস অব বাংলাদেশ বিজয় দিবস সম্মাননা-২০১৭।’ জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও জনসচেতনা বৃদ্ধির প্রয়াসে দেশের প্রথম ‘গ্রীনম্যান এ্যাওয়ার্ড-২০১৯’-এ ভূষিত হয়েছেন আলম শাইন।

আলম শাইন দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে বন্য প্রাণীদেরকে উদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর। অসুস্থ পাখিদের খাঁচায় রেখে সুস্থ করে প্রকৃতিতে ডানা মেলার সুযোগ করে দেন। পাখ-পাখালির ছবি ক্যামেরাবন্দী করে পাঠকদের চিনিয়ে দেয়ার চেষ্টাও করেন। যার কারণে তিনি পেয়েছেন পাঠকদের প্রচুর ভালোবাসাও।

শেরপুরের একজন প্রকৃতিপ্রেমী আলম শাইনের নামানুসারে প্রকৃতি ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নামকরণ করেন ‘শাইন’।

এই আলোকিত মানুষটি পাখি শিকারী থেকে হয়ে উঠেছেন একজন বন্যপ্রাণী সংরক্ষক। বর্তমানে তিনি পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সবুজ আন্দোলন’-এর তথ্য ও গবেষণা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *