স্বাস্থ্য

পেইনলেস লেবার যন্ত্রণাহীন পদ্ধতিতে শিশুর প্রসব কলকাতায়

ধূমকেতু ডেস্ক : স্বাভাবিক ভাবে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রসব যন্ত্রণা পাননি এমন মহিলা প্রায় নেই। যে কারণে এখন অনেক গর্ভবতী মহিলা সেই প্রবল যন্ত্রণা এড়াতে সিজার করাতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞান সব সময়ই স্বাভাবিক প্রসবের উপরে জোর দিয়ে থাকে।

এই দুইয়ের মাঝের একটি সমাধান সূত্র অবশ্য ‘পেনলেস লেবার’ অর্থাৎ যন্ত্রণাহীন প্রসব। অথচ প্রায় ১৬৬ বছরের পুরনো এই পদ্ধতি কয়েকটি কারণে সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত থেকে গিয়েছে।

কী এই যন্ত্রণাহীন প্রসব? চিকিৎসকেরা বলছেন, যন্ত্রণাহীন প্রসবের জন্য পিঠের সুষুম্নাকাণ্ডের (স্পাইনাল কর্ড) মধ্যবর্তী স্তর এপিডুরাল পর্যন্ত একটি ক্যাথিটার পৌঁছে দেওয়া হয়। তার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে ধীরে ধীরে অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিকে বলে কনস্ট্যান্ট এপিডুরাল অ্যানাস্থেশিয়া।

এই প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকলেও শুধু যন্ত্রণার অনুভূতিই পাওয়া যায় না। ফলে সজ্ঞানে গর্ভবতী মহিলা চাপ দিয়ে স্বাভাবিক প্রসব করতে পারেন। কলকাতার স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ব্যথা উপশমের জন্য টানা প্রায় বারো ঘণ্টা অ্যানাস্থেশিয়া দিতে হয় এই পদ্ধতিতে। ফলে স্বাভাবিক অ্যানাস্থেশিয়া সম্ভব নয়।

তবে যথেষ্ট ভাল এই পদ্ধতির একটাই বাধা। এক জন রোগীর জন্য কয়েক ঘণ্টা নিযুক্ত থাকতে হবে চিকিৎসক দলকে। যাঁদের মধ্যে সব থেকে বড় ভূমিকা থাকে দক্ষ অ্যানাস্থেটিস্টদের। এ জন্যই এই পদ্ধতি প্রচার পায়নি।’’

সম্প্রতি এই পদ্ধতিতে কাবেরী ভাওয়াল নামে এক মহিলা তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিলেন কলকাতা শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। যন্ত্রণাহীন এই প্রসবের সাক্ষী থাকলেন স্ত্রী রোগ চিকিৎসক সুপ্রতিম বিশ্বাস, অ্যানাস্থেটিস্ট রাতুল কুণ্ডু এবং দ্বৈপায়ন ঝাকে নিয়ে তৈরি তিন চিকিৎসকের একটি দল।

কাবেরীর স্বামী নভোনীল মণ্ডল জানান, বছর সাতেক আগে তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়েছিল আমেরিকায়। তখনই তাঁরা এই পদ্ধতির কথা জানতে পারেন। তিনি বলেন, “প্রায় ৮০ ভাগ যন্ত্রণা কম এই প্রক্রিয়া কলকাতার কোথায় হয়, সে খোঁজ করতে গিয়ে দেখেছি, বেশির ভাগ চিকিৎসকই পিছিয়ে যান। যার মূল কারণ, একটানা কয়েক ঘণ্টার জন্য প্রায় কোন চিকিৎসকই আটকে থাকতে চান না।”

সন্তানের জন্ম দেওয়ার দু’দিনের মাথায় সুস্থ কাবেরী বলছেন, “প্রসব যন্ত্রণা প্রায় কিছুই বুঝতে পারা যায়নি। ঋতুচক্রের সময়ে তলপেটে যে স্বাভাবিক ব্যাথা তেমনই ব্যথা হয়েছিল।”

রুবি জেনারেল হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশনস) শুভাশিস দত্ত বলেন, ‘‘ওঁরা এই পদ্ধতির কথা জানাতেই হাসপাতালের তরফে পূর্ণ সহযোগিতা করা হয়েছিল।’’

চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবশ্য এ ধারণা বহু পুরনো। ইএসআই ইনস্টিটিউট অব পেন ম্যানেজমেন্টের কোর্স ডিরেক্টর, চিকিৎসক সুব্রত গোস্বামী বলছেন, ‘‘এটা নতুন পদ্ধতি নয়। ১৮৫৩ সালে কুইন ভিক্টোরিয়ার অষ্টম গর্ভের সন্তান লিওপোল্ডের জন্মের সময়ে এই পদ্ধতি প্রথম প্রয়োগ করা হয়।

চিকিৎসক জন স্নো ভিক্টোরিয়াকে তখন অ্যানাস্থেশিয়া হিসেবে ক্লোরোফর্ম দিয়েছিলেন। পাশ্চাত্যে এখন যথেষ্ট জনপ্রিয় এই যন্ত্রণাহীন প্রসব। যদিও একটানা চিকিৎসকদের নিয়োজিত থাকার অসুবিধার কারণেই এ দেশে এই পদ্ধতির প্রসার হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *