নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: “যত কাঁদবেন, তত হাঁসবেন” – পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এই কথাটা দারুণভাবে কার্যকরী। কারণ, এই সবজি কাটতে গিয়ে চোখ ফুলিয়ে কাঁদতে হয় ঠিকই। কিন্তু এই প্রকৃতিক উপাদানটি শরীরেরও কম উপকার লাগে না! একাধিক গবেষণায় এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, পেঁয়াজের শরীরে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি উপাদান একাধিক রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন ধরুন…
ডায়াবেটিস রোধে: পেঁয়াজ শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন বাড়িয়ে ডায়াবেটিস রোধ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া রক্তে চিনির পরিমাণ ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, গলা ব্যথা, এলার্জি ইত্যাদি খুব দ্রুত পেঁয়াজের দ্বারা দূর করা সম্ভব। পেঁয়াজের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে তাৎক্ষণিকভাবেই রোগ নিরাময় হয়।
আরও পড়ুন: “আদা- সব ওষুধের দাদা”
হজমে সহায়ক: পেঁয়াজ পাচনতন্ত্রের উন্নয়নে কাজ করে। যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তারা পেঁয়াজ খেলে হজম রস বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যা নিরাময় হয়।
ক্ষত সারাতে: ক্ষত সারতে, পোড়া ত্বকে, পোকা-মাকড় বা মৌমাছি কামড় দিলে সেই জায়গায় পেঁয়াজের রস লাগালে তা ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। যদিও কিছুটা জ্বলতে পারে।
ক্যান্সার রোধ: ক্যান্সার রোধ করতেও পেঁয়াজ সাহায্য করে। এটি মাথা, ঘাড় ও কোলন ক্যান্সার দূর করতে সাহায্য করে।
এছাড়া, পেঁয়াজে রয়েছে অ্যান্টি-বায়োটিক, অ্যান্টি-সেপ্টিক, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান। তাই রোগের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে এটি।
শরীরের যে কোনো ব্যথা দূর করতে পেঁয়াজ ব্যবহার করা যায়। এর জন্য তিলের তেল অথবা রেড়ীর তেলের সাথে পেঁয়াজ ভেজে নিতে হবে। তারপর ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। ত্বকের কাল দাগ দূর করার জন্য পেঁয়াজ ও হলুদের রস একসাথে মিশিয়ে লাগিয়ে রাখুন। অনেক উপকার পাবেন।
চুল পড়া রোধ করার জন্য মাথায় পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। তাই হজমের মাধ্যমে গ্যাসের সমস্যা দূর করতে এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
রোগ প্রতিরোধ ছাড়াও অন্যান্য নানা কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। পেঁয়াজ রঙের গন্ধ দূর করে। ঘরে নতুন রং করালে এক ধরণের গন্ধ থাকে। এক টুকরা পেঁয়াজ কেটে পানিতে ডুবিয়ে নতুন রং করা ঘরের এক কোণায় রেখে দিন। পেঁয়াজ রঙের গন্ধ সম্পূর্ণ শুষে নেবে।
ছুরিতে প্রায় সময় মরিচা ধরে থাকে। একটি বড় পেঁয়াজ কাটুন মরিচা ধরা ছুরি দিয়ে। একবারে সম্পূর্ণ মরিচা দূর না হলে আবারও পেঁয়াজ কাটুন দেখবেন মরিচা আস্তে আস্তে চলে যাবে। অনেক সময় তরকারি পুড়ে হাড়ি-পাতিলে পোড়া দাগ হয়। এই দাগ দূর করতে পেঁয়াজ অনেক কার্যকরী। পেঁয়াজের রস দিয়ে পোড়া হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করুন। দেখবেন পোড়া দাগ একদম দূর হয়ে গেছে। তেল, চর্বিতে চুলা তেল চিটচিটে হয়ে যায়। এই তেল চিটচিটে ভাব দূর করে চুলা পরিষ্কার করতে পেঁয়াজের জুরি নেই। পেঁয়াজের রস এবং সমপরিমাণে লবণ মিশিয়ে নিন। এটি দিয়ে চুলার দাগের ওপর ঘষুন। কিছুক্ষণ পর দেখবেন সব দাগ দূর হয়ে গেছে।
পেঁয়াজ খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তেমন দেখা যায়না। রান্না করে খেলে পেঁয়াজের তেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই বললেই চলে। টানা ছয় সপ্তাহ ৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পেঁয়াজ খেলে তেমন একটা ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। অতিরিক্ত পেঁয়াজ খেলে ত্বকে হালকা একজিমা বা জ্বালাপোড়া ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। পেট খারাপ বা পেটেব্যাথার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অনেকের হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি নিয়মিত হজমে সমস্যা দেখা দেয় তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে পেঁয়াজ খাওয়ার পরিমাণ জেনে নেবেন।
অনেক সময় অনেক ওষুধ চলার সময় পেঁয়াজ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। রক্ত জমাট বাঁধতে দেরি করাতে পারে। তেমন ঝুঁকি থাকলে আপনার চিকিৎসকই সেটা বলে দেবেন। অনেকের পেঁয়াজ খেলে এলার্জি দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শই শেষ কথা। পেঁয়াজ রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে বলে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে। কিন্তু ডায়াবেটিস থাকলে পেঁয়াজ খাওয়ার মাত্রার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।