ক্যারিয়ার ও চাকরি

পুলিশে নিয়োগ পেতে পার হতে হবে ৭ ধাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: পুলিশে চাকরি পেতে নব উদ্যোগ নিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ। নতুন নিয়মে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেতে হলে পার করতে হবে সাত ধাপ।

ধাপগুলো হলো- প্রিলিমিনারী স্ক্রিনিং, শারীরিক মাপ ও ফিজিক্যাল এন্ডুরেন্স টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, প্রাথমিক নির্বাচন, পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্তকরণ। এই সাতটি ধাপের কোনো একটিতে অযোগ্য বিবেচিত হলে তিনি আর পুলিশে নিয়োগ পাবেন না। নিয়োগে দুর্নীতি, তদ্বির ও অনিয়মের অভিযোগ থেকে বের হতে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

পুলিশে নিয়োগ নিয়ে অতীতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এসব দুর্নীতির ছায়া যাতে না লাগে সেজন্যই নিয়োগে এই ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে টাকা নিয়েও এখন আর কেউ পুলিশে চাকরি দিতে পারবেন না। তদ্বিরেও কাজ হবে না। দুর্নীতি থাকবে না। যোগ্যরাই পুলিশে নিয়োগ পাবেন।

অন্যদিকে পুলিশের এসআই নিয়োগের ক্ষেত্রে ১১ ধাপ পার হতে হবে। আধুনিক, স্মার্ট, জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী বিনির্মাণের লক্ষ্যে নতুন নিয়মে পুলিশে নিয়োগ হবে।

স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২৫ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের উপযোগী করে বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কনস্টেবল পদে নিয়োগের নিয়ম আধুনিকায়নে আইজিপি বেনজীর আহমেদের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের নতুন নিয়ম ও পদ্ধতির প্রবর্তন করেছে।

উক্ত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করণে প্রতিটি জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডিজিটাল ডিভাইস এবং স্থানীয় কেবল অপারেটরের মাধ্যমে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের নতুন পদ্ধতি ও তথ্য প্রচার করা হবে। এ বিষয়ে জেলা পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা, থানা, ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্রের মাধ্যমে এবং অন্যান্য প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে।

কনস্টেবল পদে অধিক যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থী নির্বাচনের জন্য আসন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে তাদের শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষা (ফিজিক্যাল এন্ডুরেন্স টেস্ট) নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে নারী ও পুরুষ আবেদনকারীদের জন্য ২০০ মিটার দৌড়, ১০০০ মিটার দৌড়, ১৬০০ মিটার দৌড়, লং জাম্প, হাই জাম্প, পুশ-আপ, রোপ ক্লাইম্বিং এবং ড্র্যাগিং পরীক্ষা।

কোনো দালাল কিংবা প্রতারক চক্র যাতে চাকুরী প্রার্থীদের নিকট হতে প্রতারণা করে চাকুরী পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে না পারে, সেজন্য জেলা পুলিশ কঠোর মনিটরিং এর ব্যবস্থা করবে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দালাল প্রতারক কিংবা অসদুপায় অবলম্বনকারী চক্রের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ পূর্বক কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দালাল, প্রতারক, অসদুপায় অবলম্বনকারীসহ তদবীরবাজ কিংবা অন্য যে কেউ যাতে চাকুরী প্রার্থীদের প্রতারিত করতে না পারে সেজন্য জেলা পুলিশের একাধিক টিমসহ গোয়েন্দা টিম সার্বক্ষণিক তথ্য সংগ্রহ ও মনিটরিং এর দায়িত্বে থাকবেন।

প্রতারকদের বিরুদ্ধে তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চাকুরী প্রার্থীদের পরিবারের অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনদেন, জমি-জমা ও মূল্যবান সম্পদ বিক্রয়, অর্থ লেনদেন ও ধার-কর্জ করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হবে। অনেক অভিভাবক চাকুরী প্রার্থীদের সাথে মেয়েকে বিবাহ বন্ধনের প্রতিশ্রুতিতে যৌতুক হিসেবে টাকা-পয়সা প্রদান করে থাকেন যা প্রচলিত আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। এই বিষয়টি পুলিশী নজরদারির মধ্যে রাখা হবে।

কোনো চাকুরী প্রত্যাশী কারো মাধ্যমে তদবীর কিংবা অসাধু পন্থা অবলম্বন করলে সঙ্গে সঙ্গে ঐ প্রার্থীকে অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে এবং চাকুরীর নিয়োগের যে কোনো পর্যায়ে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তার নিয়োগ বাতিল করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে সকল ধরনের অনৈতিক লেনদেন এবং অবৈধ তদবীর বন্ধের জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ হতে বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, উঠান বৈঠক, অপরাধ দমন সভা, মসজিদ, মন্দির প্রভৃতি সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।

পুলিশ নিয়োগ সংক্রান্ত কোথাও কোনও অনৈতিক লেনদেন অথবা কোনও অবৈধ পন্থা গ্রহণের ঘটনার তথ্য কেউ পুলিশকে প্রদান করলে তাকে পুলিশের পক্ষ হতে পুরস্কৃত করা হবে এবং তথ্যদাতার নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে।

পুলিশ নিয়োগ সংক্রান্ত অবৈধ লেনদেন কিংবা প্রতারক চক্রকে ধরার জন্য জেলা পুলিশের বিশেষ টিম সাদা পোশাকে জেলার বিভিন্ন স্থানে নজরদারি করবে। পুলিশ নিয়োগ সংক্রান্তে যে কোনও ধরনের অসাধু তৎপরতাকে প্রতিহত করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা নেয়া হবে এবং প্রযুক্তিগত মনিটরিং করা হবে।

জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত তদবীরবাজ/দালালদের গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে এনে তাদের গতি-বিধি নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হবে। পরীক্ষার্থীরা ভালভাবে জেনে সাত ধাপের অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ সংক্রান্ত যে কোনও ধরনের তথ্যগত সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রতিটি থানায় ডিউটি অফিসারদের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। উল্লিখিত নতুন নিয়মে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছেন নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া। তিনি পুলিশ নিয়োগে কোনও ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম ও প্রতারকের খপ্পরে না পড়ে এবং সাতটি ধাপ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিংসহ বিভিন্ন প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন।

২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। এটাকে টার্গেট করে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য নিয়োগে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশে যারা আসবেন তাদের প্রশিক্ষণও পরিবর্তন করা হয়েছে। এসিসহ নান্দনিক পরিবেশে হবে প্রশিক্ষণ। এভাবে একজন উপযুক্ত পুলিশ তৈরি করা হবে। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, সরকারের ভিশন-২০৪১ এর সাথে তাল মিলিয়ে পুলিশে যোগ্য ও উপযুক্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। পুলিশ হবে জনবান্ধব। নতুন নিয়মে পুলিশে কোনও ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করার সুযোগ নেই।

পুলিশ সদস্যরা জনতার পুলিশে পরিণত হবে : প্রধানমন্ত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *