নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: নতুন ভেন্যুতে হতে যাচ্ছে বাণিজ্য মেলার আয়োজন, মেলাস্থলে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে এবারই প্রথমবারের মতো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিএফটিএফ) অনুষ্ঠিত হচ্ছে পূর্বাচলের নবনির্মিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে। সেখানে যাতায়াতের জন্য কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য মূল সড়ক (তিনশ ফিট) প্রায় ১০ কিলোমিটার চার লেন সড়ক যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিআরটিসির ডাবল ডেকার ৩০টি লাল বাস। যেগুলো কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে মেলা প্রাঙ্গন পর্যন্ত চলচল করবে। ইপিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, নানাবিধ চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার হাতছানি নিয়ে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি নতুন ভেন্যু পূর্বাচলে নির্মিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিতব্য মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশের ২৬তম বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করবেন তিনি।
প্রথম বছরের মেলা আয়োজনে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা এবছর সম্পন্ন করতে পারলে আগামী বছরগুলোয় আর পেছনে তাকাতে হবে না বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির কর্মকর্তারা। ইপিবি জানিয়েছে, কেন্দ্রের ভেতরে সবমিলে ৩০৯টি স্টল রয়েছে। এবারের মেলায় থাকছে দেশি-বিদেশি ২২৫টি স্টল।
বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) মেলাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, মেলা উপলক্ষে বরাদ্দ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্টল আকর্ষণীয় ও নান্দনিক করে গড়ে তুলতে নানাভাবে সাজাচ্ছেন। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া স্টল আকর্ষণীয় ও নান্দনিক করে গড়ে তুলতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। বাইরের স্টলগুলো এক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে। কেউ কাঠের মধ্যে রঙতুলিতে এঁকে, আবার কেউ কাচের ঘরের অন্তরালে সাজাচ্ছেন নিজেদের স্টল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারের মেলার প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। তবে চেষ্টা করছি যতটা আকর্ষণীয়ভাবে স্টলটি সাজানো যায়। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে সব চেষ্টাই অব্যাহত থাকবে শেষ দিন পর্যন্ত।
ইপিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেলা কেন্দ্রের লেআউটে কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। এ কারণেই কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে মিলে আপাতত ২২৫টি স্টল করা হয়েছে। ধারণক্ষমতা বেশি থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রেখে স্টল করা হয়েছে। মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কর্তৃপক্ষ ১৫৪টি স্টল বানিয়েছে। ২৪টি প্রিমিয়াম স্টল করা হয়েছে। নতুন বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণে সবমিলে ২২৫টি দেশি-বিদেশি স্টল থাকছে। ভেতরে ১৫৪টি। বাইরে ৭১টি স্টল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন স্থানে অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্য মেলায় আগতদের গাড়ি রাখার জন্য বৃহৎ পরিসরে পার্কিং সুবিধা রয়েছে। মেলার শৃঙ্খলার স্বার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের পাশেই রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানেই ১ হাজার গাড়ি পার্কিং হবে। সেন্টারের দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস ৭ হাজার ৯১২ বর্গমিটার, যেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে আর এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও ১ হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ রয়েছে।
ইপিবির সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আমাদের সর্বশেষ প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া গেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১ জানুয়ারি তিনি মাসব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন। নতুন স্থানে মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় কিছুটা চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। প্রতি বছর জানুয়ারির ১ তারিখ দেশের সরকার প্রধান এ মেলার উদ্বোধন করেন। করোনার কারণে ২০২১ সালে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। গত ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ভেন্যুতেই এক বছরের বিরতির পর শুরু হচ্ছে বাণিজ্য মেলা।
আরো পড়ুন: