‘পাওয়ারস্টার’ পুনীতের দান করা চোখে দৃষ্টি ফিরে পেলেন ৪ জন

বিনোদন প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: ভারতের কন্নড় ইন্ডাস্ট্রির তারকা পুনীত রাজকুমার শুক্রবার মারা গেছেন। সদ্য প্রয়াত এই অভিনেতা সবার কাছে ‘পাওয়ারস্টার’ নামে পরিচিত ছিলেন।  অভিনয় দক্ষতা এবং মানবিক গুণাবলী দিয়ে পর্দার বাইরেও তিনি ছিলেন মানুষের জীবনের নায়ক, ছিলেন তাদের ভরসার আশ্রয়স্থল। মৃত্যুর পরও মনবতার নজির রেখে গেলেন পুনীত। তার দান করা চোখে দৃষ্টি ফিরে পেলেন ৪ তরুণ-তরুণী। অভিনেতার ইচ্ছে অনুসারে চিকিৎসকদের একটি দল তার মৃত্যুর পর ছয় ঘণ্টার মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পাদন করেন।

এবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর, সফল অস্ত্রোপচারের পর পুনীত রাজকুমারের দান করা দুই চোখে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন চারজন। তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী।

আকস্মিক হৃদরোগে গত ২৯ অক্টোবর অনেককে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কন্নড় সুপারস্টার পুনীত রাজকুমার। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বিনোদন অঙ্গন। সমাজসেবার জন্য তিনি লাখো মানুষের মন জয় করেছিলেন। সবাই তাঁকে ভালোবেসে আপ্পু বলে ডাকত।

মৃত্যুর আগে পুনীত তার দুই চোখ দান করে যান। পুনীত রাজকুমারের বাবা কিংবদন্তি অভিনেতা ডা. রাজকুমার ১৯৯৪ সালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার পুরো পরিবার মরণোত্তর চক্ষুদান করবে।

নারায়ণ নেত্রালয়ের চেয়ারম্যান ডা. ভুজং শেঠি ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে জানান, সাধারণত একজন মৃত ব্যক্তির ২টি কর্নিয়া দু’জন কর্নিয়াল অন্ধ রোগীর মাঝে প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু, আমরা পুনীতের কর্নিয়াল টিস্যু ব্যবহার করেছি ৪ জন ভিন্ন রোগীর দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে। ৪ জন রোগীর বয়স ২০-৩০ বছরের মধ্যে। করোনার কারণে চক্ষু দান পুরোপুরি বন্ধ থাকায় ওই ৪ জন ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষার তালিকায় ছিলেন। হাসপাতালটিতে প্রতি মাসে মাত্র ২০০টি চোখ প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার করতে পারে।

২৯ অক্টোবর জিমে শরীরচর্চা করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন পুনীত রাজকুমার। এর পর বেঙ্গালুরুর বিক্রম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

৩১ অক্টোবর সকালে বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য হয় দক্ষিণ ভারতীয় এ তারকার। প্রয়াত অভিনেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যান কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইসহ অগণিত মানুষ।

ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ২৬টি এতিমখানা, ১৬টি বৃদ্ধাশ্রম এবং ৪৫টি বিদ্যালয় পরিচালনা করতেন পুনীত। তাতে এক হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী বিনা বেতনে অধ্যয়ন করত। পুনীতের মৃত্যুর পর সেই এক হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিয়েছেন তামিল অভিনেতা বিশাল কৃষ্ণ রেড্ডি।

শিশু অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন পুনীত রাজকুমার। ১২টি সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন; পেয়েছেন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। ২০০২ সালে ‘আপ্পু’ সিনেমায় অভিনয় করে কন্নড় সিনেমায় তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। প্রায় ২৯টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন পুনীত রাজকুমার। ছিলেন কন্নড় চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা। তার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বিনোদন অঙ্গন।

আরো পড়ুন:

অস্কারে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ইংরেজী ছবি ‘গোর’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *