মাতৃভূমি

পুতুলের জন্মদিনে সবার কাছে দোয়া চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিনে সবার কাছে দোয়া চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকালে রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “একটি অনুরোধ করব, আজকে আমার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন, সবার কাছে দোয়া চাই।”

১৯৭৩ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ। পুতুল তার ডাকনাম।

তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী পুতুল সারা বিশ্বে অটিস্টিক শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন তিনি।

বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ওয়াজেদ মিয়ার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলেরও একজন সদস্য।

শেখ হাসিনা বলেন, “এক সময় এই অটিষ্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুরা জন্ম নিলে বাবা-মা তাদেরকে লুকিয়ে রাখত, বলতে পারত না। যদি কোনো মায়ের সন্তান… কিন্তু সেই মা জন্ম দিল কেন, সেই মাকেও পরিবারে অনেক সময় লাঞ্চিত হতে হয়েছে। এমনকি এমন শিশু জন্ম নিলে তাকে স্বামী তালাক দিয়ে দিয়েছে বা আরেকটা বিয়ে করেছে।”

এ ধরনের একটি অবস্থা সমাজে ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা বিরাট পরিবর্তন সায়মা ওয়াজেদ আনতে পেরেছে, সেটা হল এখন আর কেউ এই অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু হলে বা বিকলাঙ্গ শিশু হলে তাদেরকে আর লুকিয়ে রাখে না। বরং গর্বের সাথে বলে।”

মনোবিদ সায়মা ওয়াজেদ ২০০৮ সালে অটিজম এবং শিশুদের স্নায়ু জটিলতা নিয়ে কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তার কাজ প্রশংসা কুড়ায়।

এক সময় তিনি কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকসের পরামর্শক হিসেবে । ২০১৩ সালের জুনে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক প্যানেলের সদস্য করা হয়।

মানসিক স্বাস্থ্য এবং অটিজম নিয়ে কাজের স্বীকৃতিতে ২০১৪ সালে সায়মা ওয়াজেদকে ‘এক্সেলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশে অটিজম আক্রান্তদের কল্যাণে নিরবচ্ছিন্ন ও উদ্ভাবনী কাজের স্বীকৃতিতে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান তাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ দেয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) ‘থিমেটিক দূত’ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি ইউনিভার্সটিতে পড়ার সময় বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন সায়মা ওয়াজেদ। তার সেই গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের ‘সেরা সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি পান।

সায়মা ওয়াজেদের উদ্যোগেই ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মত অটিজমের ওপর আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও তাতে অংশ নেন।

বাংলাদেশে ‘নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট ২০১৩’ প্রণয়নের ক্ষেত্রেও মূল ভূমিকা রাখেন সায়মা ওয়াজেদ। তার পরিচালিত ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে।

২০১৯ সালে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ‘গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম কনসোর্টিয়াম’ প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্যে উদ্ভাবনী নারী নেতৃত্বের’ ১০০ জনের তালিকায় স্থান করে নেন সায়মা ওয়াজেদ।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) একজন ট্রাস্টি এবং ভাইস চেয়ারম্যান তিনি।

জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সিআরআইসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। সিআরআইয়ের ফেইসবুক পেইজে এবং ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে সোশাল মিডিয়ায় ছবি দিয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

অনেক বড় উদারতা কি আমরা দেখাইনি? : খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *