ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: গত ৫ আগস্ট বার্সেলোনার সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্কের ইতি টানতে হয়েছে বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিকে। এরপরই বিশ্বজুড়ে চলতে থাকে নানা আলোচনা। কেন এমন হলো, কোথায় যাচ্ছেন মেসি। সব আলোচনার অবসান ঘটিয়ে বার্সেলোনা অধ্যায় শেষে পিএসজি অধ্যায় শুরু করলেন মেসি। ইতিমধ্যে ফ্রান্সের এই ক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যারিয়ার শুরু হয়ে গেছে তাঁর। পিএসজির হয়ে মাঠে প্র্যাকটিসও শুরু করে দিয়েছেন মেসি।
ঠিকানা বদল করে স্পেন থেকে ফ্রান্সে গেলেও বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদের তালিকায় মেসির অবস্থানের কিন্তু একটুও নড়চড় হয়নি। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড় মেসি পিএসজির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেছেন। এ মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বেতন-ভাতা সবকিছু মিলিয়ে ক্লাবটি থেকে বছরে ৪ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার পারিশ্রমিক পাবেন মেসি। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর বাইরে মেসির নিজের স্পনসরসহ অন্যান্য আয় তো রয়েছেই। মেসির নিজের যেসব আয় রয়েছে, সেগুলো তো থাকবেই। পাশাপাশি থাকবে নানা বোনাস, জার্সি বিক্রির অর্থ। এ ছাড়া সাইনিং ফি বা চুক্তির মাশুল বাবদ মেসি পাচ্ছেন বাড়তি ৩ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৫৫ কোটি টাকা।
এ ছাড়া জার্সি বিক্রির অর্থ হিসেবেও বড় অঙ্কের একটি আয় যুক্ত হবে মেসির ব্যাংক হিসাবে। কারণ, বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর মেসির জন্য বরাদ্দ করা ৩০ নম্বর জার্সিটি বিক্রির ধুম পড়েছে। গত বুধবার পিএসজিতে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে পিএসজির অফিশিয়াল অনলাইন স্টোরে থাকা ফুটবলের এ মহাতারকার সব জার্সি বিক্রি হয়ে গেছে। তাও বেশ চড়া দামেই বিক্রি হয়েছে পিএসজিতে মেসির জন্য বরাদ্দ জার্সি। প্রতিটি জার্সি বিক্রি হয়েছে ১৮৫ দশমিক ৪৬ ডলারে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার ৭৬৪ টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ইতালির জুভেন্টাসে যোগ দেন। তাঁর যোগ দেওয়ার দিন মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৫১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার রোনালদোর জার্সি বিক্রি করেছিল জুভেন্টাস।
মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস–এরর হিসাবে, পিএসজির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মেসির যে আয় হচ্ছে, তা তাঁকে অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদো ও নেইমার থেকে পিছিয়ে দেবে না। কারণ, চুক্তি বাবদ যা পাবেন, সেই সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার বার্ষিক আয় মেসির অবস্থান শীর্ষেই রাখবে। অর্থাৎ আয়ের দিক থেকে বিশ্বের সেরা ধনী খেলোয়াড়ের তালিকার শীর্ষেই থাকছেন মেসি।
মূলত, পারিশ্রমিক–বিষয়ক জটিলতা ও লা লিগার বেতনসীমা–সংক্রান্ত আইনের জন্যই মেসিকে হারিয়েছে বার্সেলোনা। ক্লাবটি জানায়, ‘অর্থনৈতিক এবং কাঠামোগত বাধার কারণে’ লিওনেল মেসিকে রাখতে পারেনি তারা। গত ১ জুলাই বার্সেলোনায় মেসির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু নতুন চুক্তি করে মেসিকে ধরে রাখতে হলে তাঁর বেতনের অর্থ জোগাড় করতে বার্সেলোনাকে আরও কয়েকজন খেলোয়াড়কে বিক্রি করতে হতো, কাজেই চুক্তিটি নির্ভর করছিল সেই সিদ্ধান্তের ওপর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বার্সার সঙ্গে নতুন চুক্তি আর হলো না মেসির।
ফোর্বস বলছে, মেসিকে ধরে এখন পিএসজি সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া বিশ্বের পাঁচ খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনজনকে নিল। ফোর্বসের হিসাবে, এ বছর মেসির বার্ষিক মোট আয় দাঁড়াবে ১৩ কোটি ডলারের মতো। আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ১২ কোটি ডলার। নেইমারের সাড়ে ৯ কোটি ডলার, এমবাপ্পের ৪ কোটি ডলার। মেসির আগে এত দিন ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান ও পিএসজিতে সর্বোচ্চ বেতন ছিল নেইমারের। ২০২৫ সাল পর্যন্ত পিএসজিতে থাকবেন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার পান, যা এত দিন ছিল ফ্রেঞ্চ ফুটবলে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের রেকর্ড। সে হিসাবে নেইমারের রেকর্ড ভাঙলেন তাঁরই বন্ধু মেসি।