উৎসব-পার্বণ

পালিত হচ্ছে সরস্বতী পূজা : বিদ্যার দেবীর চরণে ভক্তদের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা আজ মঙ্গলবার। আজকের পঞ্চমী তিথিতে অগণিত ভক্ত বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর পাদপদ্মে প্রণতি জানাবেন তারা।

সনাতন ধর্মালম্বিদের মতে, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর চরণে ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে/ বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোস্তুতে’ এই মন্ত্র উচ্চারণ করে বিদ্যা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রণতি জানাবেন তারা।

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দেয়া বাণীতে দেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরো সুদৃঢ় করতে সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। এতে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।

পৃথক বিবৃতিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিত্রয় অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক, ঊষাতন তালুকদার ও নির্মল রোজারিও, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতিত্রয় পংকজ সাহা, রবার্ট নিক্সন ঘোষ ও রাহুত বড়ূয়া এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাপস বল হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেশবাসীকে পূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

করোনাকালে এবারের পূজার আয়োজন হচ্ছে সীমিত পরিসরে ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে। পূজার আনুষ্ঠানিকতার বাইরে অন্য কোনো আড়ম্বরতা থাকছে না। মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি ও ধর্মীয় আলোচনা সভা কিংবা জনসমাগম হয় এমন আয়োজন এড়িয়ে চলা হবে।

অন্যদিকে করোনার কারণে এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পূজার আয়োজন হচ্ছে না। তবে অন্যান্য মন্দির, পূজামণ্ডপ কিংবা ভক্তদের ঘরে ঘরে পূজার আয়োজন থাকছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার ও সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশের মন্দির ও পূজামণ্ডপে পূজার অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে পূজা-অর্চনা, পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া, প্রসাদ বিতরণ প্রভৃতি। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে সকাল ৬টায় প্রতিমা স্থাপন, ৮টায় পূজা, সাড়ে ৯টায় পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া ও দুপুর ১২টায় প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপেও অনুরূপ অনুষ্ঠানমালা থাকছে।

রাজধানীর রমনা কালী মন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, ইসকন মন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, রামসীতা মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। এসব মণ্ডপে সকাল ৬টা থেকে ১১টার মধ্যে পূজা ও পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া ছাড়াও প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

জাতীয় সংসদের উদ্যোগে রাজধানী উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পূজা আয়োজন করা হয়। এখানে সকালে পূজা ছাড়াও সন্ধ্যায় আলোচনা সভা রয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উৎসবের উদ্বোধন করবেন। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী সকালের পূজা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

এদিকে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ অন্যান্য হলে ঐতিহ্যবাহী ও আড়ম্বরপূর্ণ সরস্বতী পূজার আয়োজন হলেও এবার করোনা পরিস্থিতিতে তা বন্ধ থাকছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও পূজা হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *