নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় কদর বেড়েছে পাটকাঠির। এছাড়াও উপজেলায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে পাটের। পাট ধুয়ে শুকিয়ে সোনালি আঁশ এখন ঘরে তুলছেন কৃষকরা।পাটের ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি। তবে শুধু আঁশ নয়, পাটকাঠিতেও কৃষকরা দেখছেন আশার আলো।

সোনালি আঁশের সঙ্গে কদর বেড়েছে পাটকাঠিরও। বাড়ি, পাকা সড়ক, মাঠ-ঘাট যেখানে চোখ যায়, সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। পাটের বাম্পার ফলনের ফলে কৃষকের মুখে হাসি ও আনন্দ এক সাথে মিশে গেছে।

ফরিদপুরের ৯ উপজেলার মধ্যে আলফাডাঙ্গা পাটের আবাদি এলাকা নামে পরিচিত। এসব এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাটের কাঠি আগের মতো অবহেলায় ফেলে না রেখে যত্ন করে শুকিয়ে মাচা তৈরি করে রাখছেন চাষিরা।

স্থানীয়রা জানান, পাটকাঠি কোথাও আবার পাটখড়ি নামেও পরিচিত। আগে পাটকাঠির ব্যবহার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছিল শুধু জ্বালানি হিসেবে। আর কিছু ভালো মানের পাটকাঠি পানের বরজের আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন আর মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না পাটকাঠি। বিশ্ববাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় আঁশের পাশাপাশি কাঠির দামও ভালো পাওয়া যায়। অনেক কৃষক পাটের দাম খুব একটা ভালো না পেলেও পাটকাঠির দাম দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

উপজেলার আলফাডাঙ্গা ইউনিয়নের নাওরা মিঠাপুর গ্রামের পাট চাষি বাচ্চু মিয়া বলেন, গত কয়েক বছর আগেও পাটখড়ির তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন বেশ চাহিদা। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটকাঠি কিনছেন, ভালো দামও দিচ্ছেন। ১০০ মোটা পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। শুধু পাট বিক্রি করেই নয়, এবার পাটখড়িও আমাদের এলাকায় কৃষকের আশা জাগিয়েছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের পাটচাষি প্রভাষক মোরাদ হোসেন তালুকদার জানান, পাটকাঠি এক সময় শুধু রান্না-বান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া ও ছাউনির কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন এই পাটকাঠি দেশের পানের বরজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে কার্বন ফ্যাক্টরির কারণে পাটকাঠির চাহিদা ও মূল্য বেড়েছে।

উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ দেলোয়ার হোসেন জানান, বিভিন্ন দেশে পাটকাঠির ছাই কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপি মেশিনের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পাটকাঠির চাহিদা দেশের পাশাপাশি বাড়ছে বিশ্ব বাজারেও।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপন প্রসাদ সাহা জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৬ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। শুরুর দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিলেন কৃষকরা। তবে পরে ঝুঁকি কাটিয়ে উঠেছেন তারা। সব মিলিয়ে এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ পাটকাঠিও পাওয়া যাবে। পাটের আঁশের পাশাপাশি পাটকাঠিরও কদর, চাহিদা ও দাম ভালো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী বলেন, গুণে ও মানে ফরিদপুরের পাট দেশ সেরা। এ কারণে জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে পাটকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। ফরিদপুর জেলার শ্লোগান হলো ‘সোনালি আঁশে ভরপুর, ভালোবাসি ফরিদপুর’। পাটের সোনালি আঁশের পাশাপাশি পাটকাঠিরও বেশ চাহিদা রয়েছে।

আরো পড়ুন:

বান্দরবানে উদযাপিত হচ্ছে শুভ মধুপূর্ণিমা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *