ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু বাংলা: উড়োজাহাজের পাইলট হবেন—এমন স্বপ্ন বহুদিন ধরে দেখেছেন জর্ডানের মুহাম্মদ মালহাস। ৭৬ বছর বয়সে এসে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি। নিজের বানানো ককপিটে বসে ঘরে থেকেই আকাশে উড়ে বেড়ানোর স্বাদ নেন তিনি। খবর এএফপির।
মালহাস এএফপিকে জানিয়েছেন তার স্বপ্নের কথা। বলেছেন, বহুদিন থেকেই মানুষের আকাশে উড়ে বেড়ানোর সাধ। মুক্ত আকাশে উড়ে যাওয়া পাখিদের মানুষ দেখেছে। আর সেই সাধ পূরণের স্বপ্ন দেখেছে।
মালহাস যখন ছোট ছিলেন, দারুণ ভালোবাসতেন ঘুড়ি ওড়াতে। কাগজের তৈরি এমন ঘুড়ি কীভাবে আকাশের অত উঁচুতে উড়তে পারে, তা ভেবে অবাক হতেন।
স্বপ্নের শুরুটা তখন থেকেই। তখন থেকেই আকাশে ওড়ার সাধ জেগেছিল মালহাসের মনে। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজের ককপিটে বসেই এসব কথা বলছিলেন মালহাস। তিন বছর ধরে পুরোনো ও ব্যবহৃত নানা যন্ত্র দিয়ে ককপিটটি বানিয়েছেন তিনি।
মালহাস বলেন, ‘আমার মন সব সময়ই আকাশ ছুঁতে চায়। আমার স্বপ্ন উড়োজাহাজের চালক হওয়া। তবে পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।’
১৯৬৯ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন মালহাস। পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত আম্মান হাসপাতালে বাবার সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তবে হাসপাতালে কাজ করলেও স্বপ্ন মরে যেতে দেননি মালহাস। তিনি এভিয়েশন, উড়োজাহাজ প্রকৌশলবিদ্যা ও উড়োজাহাজ চালনাসংক্রান্ত নানা বিষয়ে জ্ঞানার্জন চালিয়ে গেছেন।
স্বপ্নপূরণে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে ১৯৭৬ সালে রয়্যাল জর্ডানিয়ান এয়ার একাডেমিতে যোগ দেন মালহাস। দুই বছর পর পেয়ে যান লাইসেন্স। প্রায় এক দশক জর্ডানিয়ান গ্লাইডিং (ইঞ্জিনবিহীন বিমান) ক্লাবের সদস্য ছিলেন মালহাস।
২০০৬ সালে কম্পিউটারে ফ্লাইট সফটওয়্যার ডাউনলোড করেন মালহাস। তিনি বিশ্ব ফ্লাইট নেটওয়ার্কে যোগ দেন। এই নেটওয়ার্কের সদস্যরা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের নির্দেশনা অনুসারে ভার্চ্যুয়াল উড়োজাহাজ চালাতে পারেন।
মালহাস জানান, তাদের ওই দলে ছিলেন ৩০ থেকে ৪০ জন বন্ধু। বিভিন্ন দেশের উড়োজাহাজ পরিচালনায় আগ্রহী ব্যক্তিরা উড়োজাহাজ পরিচালনাসংক্রান্ত বিষয়ে চ্যাট করতেন। একে অন্যের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতেন। তিনি আরও বলেন, এমনকি অনেক সময় তারা এভাবে ভার্চ্যুয়ালি ছয় ঘণ্টা সময়ও ব্যয় করতেন।
কাজ থেকে অবসরে যাওয়ার পরে দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণের নতুন সুযোগ আসে মালহাসের জীবনে। বাড়িতে তৈরি ককপিটে তিনটি বড় স্ক্রিন, সুইচ ও দিকনির্দেশক সংযুক্ত করেছেন মালহাস। স্থানীয় বাজার থেকেই এসব কেনা। ককপিটের আসনগুলো বাসের।
ককপিটের স্ক্রিনে মেঘ, আকাশ, নদী, বন ও মরুভূমির ছবি রয়েছে। তিন বছর ধরে এই কাজ করেছেন মালহাস। বিদ্যুৎ প্রকৌশলী বন্ধুদের সহায়তা নিয়েছেন। খরচ পড়েছে ৮ হাজার ৪০০ ডলার।
বন্ধু আহমেদ ফারেজ সুইচ ও নির্দেশক সংযুক্ত করতে সহায়তা করেছেন মালহাসকে, যাতে উড়োজাহাজটিতে উঠলে সত্যিকারের ওড়ার অনুভূতি পাওয়া যায়। কখনো কখনো মালহাসের স্ত্রীও তার সঙ্গে ককপিটে বসেন। মালহাস বলেন, ঘরে বসে সারা বিশ্বে ওড়ার এমন অনুভূতি বিস্ময়কর!
আরো পড়ুন: