পর্যটন ও পরিবেশসাক্ষাৎকার

পর্যটন শিল্পে আরো অবদান রাখবে কনকর্ড গ্রুপ : অনুপ কুমার সরকার || সাক্ষাৎকার (ভিডিও)

ইব্রাহীম খলিল জুয়েল: বাংলাদেশে পর্যটন ও বিনোদন শিল্পে কনকর্ড গ্রুপের ব্যাপক অবদান রয়েছে। বিশেষ করে ২০০২ সালে আশুলিয়ায় ‘ফ্যান্টাসি কিংডম’ থিমপার্ক স্থাপনের মাধ্যমে দেশে বৃহৎ পরিসরে আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন পার্কের যাত্রা তারাই শুরু করে। এরপর চট্টগ্রামে ফয়েজ লেক (Foy’s Lake)-সহ বিভিন্ন স্থানে আরো অনেক পার্ক স্থাপন করেছে এবং আরো বড় বড় পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। আজ আমরা বাংলাদেশের পর্যটন-বিনোদন শিল্পের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনাসহ নানা বিষয় নিয়ে ধূমকেতু বাংলার পক্ষ থেকে কথা বলেছি কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লি.-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (মার্কেটিং) অনুপ কুমার সরকার-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হলো:

ধূমকেতু বাংলা: পর্যটন শিল্প বা অ্যামিউজমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছু বলুন।

অনুপ কুমার সরকার: পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা আসলে সারা পৃথিবী জুড়েই ব্যাপক। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম না। বাংলাদেশে আমরা যদি পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঠিকমতো করতে পারি তাহলে বলবো যে এর সম্ভাবনা কিন্তু প্রচুর। যে কোনো খাতের চেয়ে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা এখন সবচেয়ে বেশি।

ধূমকেতু বাংলা: এই শিল্পে এখন বিনিয়োগের পরিমাণ কী রকম?

অনুপ কুমার সরকার: পুরো পর্যটন শিল্প নিয়ে হয়তো আমি বলতে পারব না কিন্তু যে শিল্প নিয়ে আমরা কাজ করছি অর্থাৎ বিনোদন বা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক খাত; এই খাতে এই মুহূর্তে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে। এই শিল্পের সাথে অনেক লোক জড়িত আছেন। পর্যটন শিল্পের আওতাধীন বিনোদন পার্ক খাতে প্রায় তিন লাখ লোকের সরাসরি কর্মসংস্থান আছে।

ধূমকেতু বাংলা: আমরা যতটুকু জানি ২০০২ সালে ফ্যান্টাসি কিংডম স্থাপনের মাধ্যমে এ দেশে থিম পার্কের যে যাত্রা শুরু হয়েছে তার অগ্রদূত হলো কনকর্ড গ্রুপ। এর পর প্রায় বিশ বছর পেরিয়ে গেল। এই সময়ে এই খাতে আপনাদের অগ্রগতিটা কী?

অনুপ কুমার সরকার: ২০০২ সালে আমাদের মাননীয় চেয়ারম্যান স্যার এস এম কামাল উদ্দিন সাহেব এটার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন যে, এই আশুলিয়ার মতো জায়গাতে গিয়ে বিনোদন পার্ক করা। এটা এমনিতেই বিপুল বিনিয়োগের বিষয়। এটাকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলা যায়। তিনি এর মাধ্যমে খুব সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এই আশুলিয়ার মতো জায়গাটাতে দেখবেন তখন কোনো রাস্তাঘাট ছিল না। সরু একটা রাস্তা ছিল। এই ফ্যান্টাসি কিংডমকে ঘিরেই কিন্তু আশুলিয়া জায়গাটা একটা ইকোনমিক জোনে পরিণত হয়। এরপর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জমির দাম বেড়েছে, মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের অনেক কর্মসংস্থান হয়েছে।

এই বিনোদন পার্কের পরে আমরা যখন দেখলাম যে মানুষের সুস্থ বিনোদন আসলে অনেক দরকার, তারপর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গেলাম। চট্টগ্রামে কনকর্ড গ্রুপ ফয়েজ লেক তৈরি করলো। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় আমরা আরেকটি পার্ক তৈরি করি যেটা হচ্ছে হ্যারিটেজ পার্ক। ওয়াটার কিংডম। হ্যরিটেজ পার্কেরও একটা গল্প আছে। কেন আমরা হ্যারিটেজ পার্ক করলাম। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যারা আসবে তারা ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে যাতে জানতে পারে যেমন কোথায় রাজশাহীর পুঠিয়া প্যালেস আছে, কোথায় ষাটগম্বুজ মসজিদ আছে, তার ইতিহাস কী, কোথায় মহাস্থানগড়, কোথায়  পাহাড়পুর, কান্তজি মন্দির – এই যে হ্যারিটেজ বা ঐতিহ্যগুলি আছে এগুলোর রেপ্লিকা সব এক জায়গায় নিয়ে এসে সমন্বিতভাবে পার্কটি করেছি। যখন বিদেশীরাও আসেন আমাদের এখানে, তারাও কিন্তু খুব ইন্টারেস্ট ফিল করেন। কেননা তাদের পক্ষে এত দূর-দূরান্তে গিয়ে সব দেখা সম্ভব হয় না। এবং যারা বাচ্চারা আছে, স্কুলের ছাত্ররা আছে তাদেরকে শিক্ষকরা সেখানে নিয়ে যান।

আমরা বিনোদন পার্ক করার পর আরো বেশ কয়েকটি পার্ক এসেছে। নন্দন পার্ক এসেছে, ড্রিম হলিডে, ওয়ান্ডারল্যান্ডের অনেকগুলো এক্সপানশন হয়েছে। এ রকম এখন ছোটবড় মিলিয়ে বাংলাদেশে শুধু বেসরকারি খাতেই দুইশ’র বেশি পার্ক আছে। তাই আমি বলব যে, গত বিশ বছরে এ খাতে একটা ব্যাপক র‌্যাভুলুশন হয়েছে।

আপনি যদি আরেকটা জিনিস দেখেন যে, ইদানীং অনেক নতুন নতুন পার্ক আসতেছে এবং হেভি ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে। সুতরাং বিনিয়োগটাকে নিরাপদ (সিকিউরড) মনে করছে বলেই কিন্তু এখানে বিনিয়োগ করছে।

আমরাও কিন্তু এর ধারাবাহিকতা রেখে গেছি। নারায়ণগঞ্জে আমরা আরেকটি বড় পার্কের কাজে হাত দিয়েছি।

এভাবে প্রতিটি জেলাতেই কিন্তু দুইটা, তিনটা করে পার্ক হয়ে গেছে। তাই আমি বলতে পারি যে, ‘ইটস অ্যা হিউজ ডেভেলপমেন্ট’। এবং সবাই কিন্তু খুব ভালো রেসপন্স পাচ্ছে। এখানকার বিনিয়োগটা হয়তো উঠে আসতে একটু সময় লাগে কিন্তু ‘ইটস নট অ্যা বেড ইনভেস্টমেন্ট।’ কারণ, বাংলাদেশের ১৭-১৮ কোটি মানুষের বিনোদনের চাহিদা মেটাতে এই কয়টা পার্ক যথেষ্ট নয়। তাই আরো পার্ক হচ্ছে। বিদেশী মালিকানার পার্কও আসছে। চীনা, মালয়েশিয়ান বিনিয়োগ আসছে এই খাতে। এটা খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক।

এখন রাইডের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। আমরা ফ্যান্টাসি কিংডমে সব রাইড এনেছি দেশের বাইরে থেকে; যেমন- জার্মানি, ইটালি, আমেরিকা থেকে। তখন চাইনিজ মার্কেটে এত রাইড ছিল না। এখন ‘চাইনিজ মার্কেট ইজ হিউজ’। অনেকেই কিন্তু চীন থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে রাইড ও ইনস্ট্রুমেন্টগুলি আনছে। তাই বিনিয়োগ করতে কোনো অসুবিধা অনুভব করছে না।

ধূমকেতু বাংলা: আপনাদের রাইডগুলো সাধারণত কোন দেশ থেকে আনা?

অনুপ কুমার সরকার: আমাদের বেশিরভাগই হচ্ছে জার্মানি এবং ইটালি থেকে আনা। এ ক্ষেত্রে আমরা নিরাপত্তার বিষয়টিকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। দর্শনার্থীরা যাবে, যদি হঠাৎ করে কোনো সমস্যা হয়, সেটা যাতে না হয় সেজন্য নিরাপত্তা এবং গুণগতমানের দিকেই আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। খরচ বেশি হলেও উন্নতমানের জিনিস এনেছি। এটা আমরা যখন একটা ভবন নির্মাণ করি তখনও এর নিরাপত্তা এবং কোয়ালিটি নিয়ে কোনো কমপ্রোমাইজ করি না। “সো কোয়ালিটি ইজ দি সিনোনিম অব কনকর্ড”।

ধূমকেতু বাংলা: এ ক্ষেত্রে যেহেতু আপনারা পাইওনিয়ার তাই জানতে চাইব যে, বাংলাদেশে কোনো আইকনিক থিমপার্ক করার চিন্তা আছে কিনা?

অনুপ কুমার সরকার: ‘ফ্যান্টাসি কিংডম ইটসেলফ অ্যান আইকনিক পার্ক’। এত বড় ইনভেস্টমেন্ট আসলে এখনো বাংলাদেশে আসেনাই। আর ফয়েজ লেক তো আপনি জানেন যে, এটা বিশাল একটা এলাকা। অনেক ডেভেলপমেন্ট হয়েছে এবং আরো ডেভেলপ করতে সময় লাগবে। এই মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জে বড় বাজেটে আমাদের একটি পার্কের কাজের প্রস্তুতি চলছে। আমরাও চাই যে আমাদের একটা আইকনিক পার্ক থাকুক, যেহেতু এই ক্ষেত্রে আমরা পাইওনিয়ার।

ধূমকেতু বাংলা: বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব অ্যামিউজমেন্ট পার্কস অ্যান্ড অ্যাট্রাকশনস-এর চিফ কো-অর্ডিনেটর আপনি। তো এটাকে বিজনেস, ইনভেস্টমেন্ট বা সার্ভিস যাই বলি না কেন, এই বিনোদন সেবাটা দিতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে আপনাদের?

অনুপ কুমার সরকার: দেখুন এই ক্ষেত্রে আসলে চ্যালেঞ্জ তো অনেক। আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অবকাঠামো। যদিও এটা খুব দ্রুত ডেভেলপ করছে। আজকে যে কোনো একটি পার্কে যেতে হলে নন্দন পার্কে যান, আর ফ্যান্টাসি কিংডমে যান রাস্তার অবস্থা খুব ভালো না। তাছাড়া প্রচুর যানজট থাকে। তবে এটা ঠিক যে সরকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নিয়েছে। তাই এই সময়টা হয়তো আমাদের একটু কষ্ট হবে। তবে একবার হয়ে গেলে যাতায়াত বেশ সুবিধাজনক হবে।

আরেকটি বিষয় হলো ইনভেস্টমেন্টের পথে বড় একটি বাধা হলো ডিউটি এন্ড ট্যাক্স। যদিও আমরা বলি যে ‘পর্যটন শিল্প’, কিন্তু শিল্পের অধীনে যে ফ্যাসিলিটি গুলো পাওয়ার কথা সেসব সুবিধা আমরা আজও পাচ্ছি না। এটার জন্য আমরা সরকারের কাছে লিখেছি। যেমন- শিল্পের অধীনে একটি রাইড বা মেশিনারি আনলে যদি ১/২ শতাংশ হারে ডিউটি-ট্যাক্স ধরা হতো তাহলে অনেক ইনভেস্টমেন্ট এই খাতে আসতো। এবং যারা বিদ্যমান আছেন এই খাতে তারাও আরো অনেক বিনিয়োগ করতেন। এখন ৬০-৭০ শতাংশ হারে ডিউটি-ট্যাক্স দিতে হয়। ফলে একটি রাইডের দাম যদি ৫ কোটি টাকা হয় তাহলে এর সাথে যোগ হয় আরো প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ট্যাক্স। তাহলে প্রাইজটি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?

এটা সম্পর্কে আমরা সরকারকে লিখেছি কারণ এটা হলো একটি প্রমিজিং সেক্টর। এখানে ডিউটি ট্যাক্স যদি একটু শিথিল করা হয় বা শিল্পের হারে দেয়া হয় তাহলে এই খাতের জন্য অনেক বেশি উপকার ও সহায়ক হবে।

তারপর আছে বিদ্যুৎ বিল। একটি রাইড চালাতে প্রচুর বিদ্যুৎ বিল খরচ হয়। এটাও যদি আমরা শিল্প রেটে পেয়ে থাকি তাহলে এটাও আমাদের জন্য বড় একটা সাশ্রয়। এগুলো কমালে আমরাও অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে দর্শনার্থীদেরকে সেবা দিতে পারব। রাইডসের টিকেটের দাম কমাতে পারব।

হ্যারিটেজ পার্ক, কনকর্ড গ্রুপ

ধূমকেতু বাংলা: করোনা মহামারিতে যে খাতগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে পর্যটন শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার ব্যাপারে আপনাদের কী পরিকল্পনা বা উদ্যোগ আছে?

অনুপ কুমার সরকার: দেখুন, যে ব্যাপক ক্ষতিটা হয়ে  গেছে এটাতো আর ফিরে পাবো না। একটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। টাকার চেয়ে মেশিনারিজের ক্ষতি হয়েছে বেশি। যেহেতু এগুলো বন্ধ ছিল। এই মেশিনারিজ এবং স্পেয়ার পার্টসগুলো আনতেও আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে ডিউটি ট্যাক্স দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা সরকারকে লিখেছিলাম যে, এগুলো আনতে আগামী তিন বছরের জন্য ডিউটি ট্যাক্স যেন মওকুফ করে দেন। এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সরকার একটা প্রণোদনা দিয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে অনেক শর্ত আছে। এটা শুধু বেতন দেয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে। এখনতো আসলে আমাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল-ই শর্টেজ হয়ে গেছে। আপনি দেখবেন যে অনেক পার্ক খুলেছে কিন্তু হয়তো ২০টা রাইড আছে তার মধ্যে ১০টাই নষ্ট হয়ে আছে, ব্যবহৃত না হওয়ার কারণে। এতদিনে হয়তো সব ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু এর পেছনে অনেক খরচ হয়েছে।

আর আরেকটি জিনিস যদি দেখেন যে, করোনার শুরুতেই কিন্তু আমাদের পার্কগুলি বন্ধ হয়ে যায়। আবার খুলেছেও সবার শেষে।

আমরা সরকারকে লিখেছিলাম যে পার্কের খোলা জায়গাতে কিন্তু করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি কম। এর একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। যানবাহন, শপিংমলে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ানোর জায়গা পায় না। কিন্তু পার্কে সে জায়গা থাকে। তারপরও পার্কগুলো খুলেছে সবার শেষে।

ধূমকেতু বাংলা: এখন কি স্বাভাবিক হয়েছে বলে মনে হয়?

অনুপ কুমার সরকার: এখন খুলেছে। তবে এখনো আমরা সরকারের নিয়ম মেনে ৫০% ক্যাপাসিটির উপর চালাচ্ছি না। আমাদের পার্কে যে ধারণ ক্ষমতা আছে যেমন ধরুন ২০ হাজার মানুষ ঢোকানোর ক্যাপাসিটি থাকলে ১০ হাজার দর্শনার্থী বা গেস্ট ঢুকতে দিচ্ছি। তবে করোনা পরিস্থিতি যেহেতু ভালো হচ্ছে, সংক্রমণ একেবারেই কমে আসছে, আশা করি এই বিধিনিষেধও উঠে যাবে।

ধূমকেতু বাংলা: আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? কনকর্ড তো অনেক বড় গ্রুপ। নির্মাণ, প্রকৌশল, আবাসনসহ অনেক খাতে আপনাদের বিনিয়োগ আছে। আমরা আজকে শুধু বিনোদন বা পর্যটন শিল্প নিয়েই জানতে চাইবো। পর্যটন শিল্প নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

অনুপ কুমার সরকার: আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তো অবশ্যই আছে। যেমন- পাঁচ বছর মেয়াদী, ১০ বছর মেয়াদী, ১৫ বছর, ২০ বছর মেয়াদী। অর্থাৎ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা আছে। আমাদের স্বল্প মেয়াদী অর্থাৎ পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার কথা যদি বলি তাহলে বলবো যে, নারায়ণগঞ্জে নতুন একটি পার্ক করছি। আগামী বছরই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তারপরে আমরা একটা রিসোর্ট করবো। এরপর আমাদের আরো কিছু প্লান আছে যে আমাদের বর্তমান যে রিসোর্টগুলো আছে সেগুলোর আরো আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের কাজ হবে। আরো দুই-একটা পার্ক করারও চিন্তা আমরা করছি। অর্থাৎ যেসব জায়গায় দেখব যে সম্ভাব্যতা আছে, অবকাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে, সে সব জায়গায় বিনিয়োগ করার চিন্তা-ভাবনা আমরা করছি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই খাতে যদি আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারি তাহলে আমরা যা কিছুই করছি সবই সফল হবে বলে আমরা মনে করি।

ধূমকেতু বাংলা: অনেক দরিদ্র শিশু আছে যারা আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে থিম পার্কে গিয়ে সুন্দর একটা বিনোদনের সুযোগ পায় না। তাদের জন্য আপনাদের কী করণীয় আছে?

অনুপ কুমার সরকার: দেখুন এটা আসলে আমাদের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির (সিএসআর) অংশ হিসেবে আমরা সূচনা লগ্ন থেকেই এটা করে আসছি। অনেক এতিম বাচ্চা, সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চারা আছে, অটিস্টিক বাচ্চারা আছে – সবারই কিন্তু বিনোদন দরকার। বিনোদন ছাড়া প্রকৃত মানসিক বিকাশটা কিন্তু হয় না। সে জন্য যেসব অর্গানাইজেশন যারা সুবিধাবঞ্চিত, এতিম, অটিস্টিক বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করে, তারা যখন আমাদের কাছে আসে, আমরা তাদেরকে এই সুবিধাটা দিই। সম্প্রতি গত শনিবারেই (১৩ অক্টৈাবর) “মজার স্কুল” নামে একটি স্কুল থেকে ১৭০ জন বাচ্চাকে নিয়ে এসেছিল। এরা সবাই ছিল পথশিশু। ওদেরকে তারা পড়াশোনা শেখায়। তাদেরকে নিয়ে আমরা সেদিন একটা প্রোগ্রাম করলাম। তারা সারাদিন ছিল ফ্যান্টাসি কিংডমে। খুবই মজা করেছে সেখানে তারা। তারা খুবই ‘হ্যাপি’। বিনামূল্যে এমন একটা জায়গায় আসতে পেরে, রাইডসে চড়তে পেরে। তাদের চোখে-মুখে দেখেছি আনন্দের ঝিলিক- এটা আসলে অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। এটা আমাদেরকেও অনেক আনন্দিত করে। এটা আমরা ফয়েজ লেকেও করি। চট্টগ্রামে যারা আছে ওদেরকে নিয়ে। বাইরে থেকে কেউ যদি তাদের খাবার স্পন্সর না করে তাহলে আমরা খাবারটাও দিয়ে থাকি।

ধূমকেতু বাংলা: সবশেষে আপনার কাছে জানতে চাইবো, আমাদের যারা বিনোদন পিয়াসী আছেন, শুধু শিশু নয়, শিশুদের সাথে তাদের অভিভাবকরাও যান। তাদের উদ্দেশে আপনার কী বলার আছে?

অনুপ কুমার সরকার: এই শিল্পের পক্ষ থেকে বার্তা দেয়াটা আসলে খুব ব্যাপক একটা জিনিস হয়ে যাবে। তবে আমরা সব সময় চিন্তা করি যে, মানুষ যেখানেই থাকুন না কেন তার যেন একটা সুস্থ বিনোদনের জায়গা থাকে। আমি বলব যে, মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা মেটানোর পর ছয় নম্বরটিই হলো বিনোদন। আমরা বলি বিনোদন মানে হলো সুস্থ, পরিচ্ছন্ন বিনোদন, যেটা মনের বিকাশ ঘটাবে। তাই বলব যতোই ব্যস্ত থাকি না কেন, সুস্থ বিনোদনের জায়গায় যাবেন বাচ্চাদেরকে নিয়ে; পরিবারের সদস্যদেরকে সময় দেয়া উচিত এবং বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে আসা উচিত। এটা আপনাকে যেমন মানসিকভাবে চাঙ্গা করবে তেমনি বাচ্চাদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে। তাই আমি বলব বিনোদন অপরিহার্য।

ধূমকেতু বাংলা: ধূমকেতু বাংলাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

অনুপ কুমার সরকার: ধূমকেতু বাংলাকেও ধন্যবাদ।

** অনুপ কুমার সরকার ভারত থেকে এমবিএ করেছেন। পর্যটন ও বিনোদন শিল্প তার আবেগ ও ভালোলাগার জায়গা। গত প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি যুক্ত আছেন কনকর্ড গ্রুপের সঙ্গে। এর আগে তিনি ট্রান্সকম বেভারেজ লিমিটেডে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *