অর্থনীতিশিল্প ও বাণিজ্যসর্বশেষ

পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে মজুরি বাড়বে

পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর ইতিমধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। গতি এসেছে পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর সঙ্গে যেসব অঞ্চল সরাসরি সংযুক্ত, সেখানকার মজুরি ২ থেকে ৪ শতাংশ বাড়তে পারে। একই সঙ্গে সেখানে জনসংখ্যাও বাড়বে ৬ থেকে ১২ শতাংশ।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও বিরূপ আবহাওয়া। সেই সঙ্গে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির দূরবর্তী সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদেরা। বিশ্বব্যাংক বলছে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির অনেক আগেই পদ্মা সেতুর সুফল মিলবে। সেতুর কারণে জলবায়ু অভিবাসীদের চলাচল সহজ হবে। ফলে এই সেতু জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

‘বাংলাদেশ-কান্ট্রি ইকোনমিক মেমোরেন্ডাম: চেঞ্জ অব ফেব্রিক বা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্মারক: কাঠামোগত পরিবর্তন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার, পদ্মা সেতুর সম্ভাব্য প্রভাবসহ সামগ্রিক বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের ফরিদপুর, বরিশাল এবং উত্তর প্রান্তের মুন্সিগঞ্জ জেলা সবচেয়ে উপকৃত হবে। তবে এই জেলাগুলোর শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চল বেশি উপকৃত হবে, যমুনা সেতুর ক্ষেত্রেও যা দেখা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা মিলবে ঢাকা নগরীর আশপাশে। এসব অঞ্চলে দ্রুত নগরায়ণ হবে বলে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

অর্থনৈতিক সুবিধার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় পদ্মা সেতুর ভূমিকা নিয়ে প্রতিবেদনে আলোচনা করা হয়েছে। বিষয়টি হচ্ছে, ভবিষ্যতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ২ মিটার বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। অনেক জমি পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। এতে ওই সব অঞ্চলের মজুরি ৪ থেকে ৭ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। কিন্তু এর অনেক আগেই পদ্মা সেতুর সুবিধা মিলবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা থেকে মানুষকে রক্ষায় উপকূল ও নদীতীরবর্তী অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ জরুরি বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। তা না হলে একসময় ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জের বিপুলসংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

উত্তরে যাবে মানুষ

প্রতিবেদনের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস হচ্ছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে একসময় উত্তরাঞ্চলের উচ্চ ভূমির দিকে চলে যেতে পারে। আগামী ১০০ বছরে এই পরিবর্তন ঘটতে পারে।

এই অভিবাসনের ফলে দেশের অর্থনৈতিক ভূগোল আমূল বদলে যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে নগরায়ণের চেহারা বদলে যেতে পারে। সে জন্য বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ, ঢাকা নগরের ওপর জনসংখ্যার চাপ কমানো। বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে হলে ঢাকার আশপাশের শহরগুলোতে অন্তত পাঁচ কোটি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে ঢাকা নগরীর ভেতরে ও নগরীর সঙ্গে আশপাশের অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি ঘটাতে হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। নগরীতে যানজট ও অব্যবস্থাপনার কারণে ইতিমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে শিল্পকারখানা সরতে শুরু করেছে। বিষয়টিকে ইতিবাচক মনে করছে

তারা। বলেছে, অর্থনীতিকে পরের ধাপে নেওয়ার ক্ষেত্রে এই স্থানান্তর গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর জন্য যথাযথ সরকারি নীতি প্রয়োজন।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ না থাকলেও জানা গেছে, পদ্মা সেতুর কারণে ইতিমধ্যে বরিশালে তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপন হচ্ছে।

জিডিপিতে সেতুর প্রভাব

এদিকে সেতু নিয়ে সরকার যে প্রাথমিক সমীক্ষা করেছিল, তাতে প্রাক্কলন করা হয়েছিল যে অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর ইতিবাচক প্রভাবে দেশের জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়তি সংযোজন হবে। রেলসংযোগের কারণে জিডিপিতে যুক্ত হবে আরও ১ শতাংশ। নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত হওয়ার কারণে যানবাহন পারাপার বর্তমানের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে। কর্মসংস্থান হবে সাড়ে সাত লাখ মানুষের। সে অর্থে ৪৩০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপিতে ১০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত যোগ হবে, যা গুণক আকারে বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *