কৃষি-মৎস্য

পদ্মা-মেঘনায় বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: পদ্মা ও মেঘনায় বেড়েছে জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পদ্মা ও মেঘনা নদীর শরীয়তপুর অংশে ৫ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। গত পাঁচ বছরে শরীয়তপুরে ২ হাজার ২৪ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত বাড়তি মাছ যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।

প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে জেলার নদীগুলোতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবী মৎস্য বিভাগের।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীর ৬৯ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ শিকার করা হয়। নদীর ওই অংশের ১৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে মাছ শিকার করেন জেলেরা। ইলিশ শিকারের সাথে শরীয়তপুরের ১৮ হাজার ২৬০ জন জেলে যুক্ত রয়েছেন। গত বছর জেলায় ইলিশের উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৩ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯২০ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ হাজার ৮০ মেট্রিক টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন হয়েছে।

বছরের জুলাই হতে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের মৌসুম। প্রতি বছর ইলিশ মৌসুমে নদীতে অনেক ইলিশ পাচ্ছেন জেলেরা। শুধু বেশি পরিমাণে নয় আকারেও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ইলিশ।

১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা (ছোট ইলিশ) শিকার নিষিদ্ধ থাকে। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা ইলিশের অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। ওই স্থানে সকল ধরনের মাছ শিকার বন্ধ থাকে। ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য অক্টোবর মাসে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলে। তখন ২২ দিন নদীতে সকল ধরনের মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। সরকারের এ অভিযানটি সফল করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সময় ১২ হাজার ১৯৪ জন জেলেকে ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া হয়। আর জাটকা সংরক্ষণ অভিযানের সময় ওই জেলেদের প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়।

গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর চরের ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী মানিক হোসেন বলেন, গত পাঁচ বছর যাবৎ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জেলেদের আয় বাড়ছে, অর্থনৈতিক সংকট কাটছে। ইলিশ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের চলমান অভিযান এ সুফল বয়ে এনেছে।

পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকার করেন ভেদরগঞ্জ উপজেলার আলিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছোট বেলা অনেক ইলিশ দেখেছি। এরপর হঠাৎ করে নদীতে ইলিশ কমতে থাকে। এক সময় ইলিশ মানেই সোনার হরিণ মনে হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে নদীতে ইলিশ পাচ্ছি। দামও ভালো পাওয়া যায়। নদীতে ইলিশ থাকলে আমাদের আয়ও বাড়ে’।

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কার্যালয়ের মৎস্য জরিপ কর্মকর্তা আবুল খায়ের প্রধানিয়া বলেন, ‘ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তর সার্বক্ষণিক অভিযান তদারকি করে’।

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় সফলতা এসেছে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান কর্মসূচীর কারণে। জেলায় মোট আড়ৎ রয়েছে ১২১টি কিন্তু প্রতি বছরই আড়ৎ সংখ্যা বাড়ছে। ইলিশ পেশার সাথে নতুন নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছেন।

শরীয়তপুরে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, ‘জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশ বড় ভূমিকা রাখছে। এই মাছ থেকে আমিষের চাহিদাও অনেকাংশে মিটছে। শরীয়তপুর এমন একটি জেলা যেখানে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা, কীর্তিনাশা ও জয়ন্তিকার মতো নদী। ইলিশ পেশার সাথে জড়িত হাজার হাজার মানুষ এর সুফল পাচ্ছে। প্রতি বছরই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুন। সেই দিন বেশি দূরে নয় যেদিন এ জেলার মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *