প্রচ্ছদ

নিয়মিত সুষম খাবার খান সুস্থ থাকুন

ধূমকেতু ডেস্ক : সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন ব্যালেন্স ডায়েট। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল ও জল— এই সাতটা খাদ্যকণাই আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে নির্দিষ্ট মাত্রায়।

খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট থাকা উচিত ৬০ শতাংশ। প্রোটিন ২০ শতাংশ। ফ্যাট ২০ শতাংশ। এক জন পরিণত বয়স্ক সুস্থ্ মানুষের দিনে সাড়ে তিন লিটার পানি খাওয়া উচিৎ।

তবে যিনি বেশি ঘামেন বা পরিশ্রম করেন তাঁদের আরও বেশি পানি খেতে হবে। আবার ঋতু অনুযায়ী পানির পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। যেমন, গ্রীষ্মকালে পানি বেশি খাওয়া উচিত।

শিশুদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ বয়স, শারীরিক সক্রিয়তা ও বৃদ্ধির উপরে নির্ভর করে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন লিটার পানিই খেতে হবে। তবে কিডনির সমস্যা থাকলে তা কমবে। খাবারের পরিমাণকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনটে ভাগে ভাগ করে নিতে হবে।

সকালের জলখাবার, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবার এবং প্রতি বারই খাবারের তিনটে খাদ্যগুণ জরুরি। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট। কার্বোহাইড্রেট যেমন, ভাত, রুটি, মুড়ি, চিড়ে খই। প্রোটিনের মধ্যে পড়ে মাছ, চিকেন, ডিম, দুধ, ছানা ইত্যাদি। ফ্যাট-রান্নার তেল, ঘি, মাখন। এ ছাড়া ভিটামিন, মিনারেলের জন্য ফল।

বাচ্চাদের বৃদ্ধির সময় প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন ও প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। নজর দিতে হয়ে যাতে তারা বেশি করে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম-যুক্ত খাবার খায়। ডিম, দুধ, দই, ছানা, চিকেন, মাছ বেশি করে খেতে হবে।

এটা সাধারণত ৬ বছরের পর শুরু হয়। দেখতে হবে যেন প্রতিটি মিলেই এই প্রতিটি খাদ্যকণা থাকে। সকালে ভিটামিন ও মিনারেলের জন্য ফলটা খেয়ে নিতে পারেন। সেই সঙ্গে দুপুরে বা রাতে আনাজ খান। বয়স্কদের হজম শক্তি কমে যায়। তাদের খাবার পরিমাণে কমিয়ে দেওয়া উচিৎ।

যাঁরা মোটা

যে পরিমাণ পরিশ্রম হচ্ছে বা শরীরে ক্যালোরির প্রয়োজন হচ্ছে সেই অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। তবে ফ্যাটের পরিমাণ যতটা পারুন কমান। কিন্তু পুরোপুরি ফ্যাট বাদ দেওয়া যাবে না। ওজন কমানোর প্রধান উপায় হল, খাবার পরিমাণে কমানো কিন্তু কোনও খাদ্য কণাই বাদ না-দেওয়া। অনেক সময়ই দেখা যায়, ওজন কমাতে গিয়ে অস্বাভাবিক ভাবে প্রোটিনের পরিমান বাড়িয়ে ফ্যাট কমিয়ে অসম ডায়েট অনুসরণ করা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়।

প্রয়োজন মতো ফ্যাট কমাতে হবে। কার্বোহাইড্রেড একেবারে বন্ধ করা চলবে না। এতে সামগ্রিক ভাবে ওজন কমলেও তার খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে। তা ছাড়া কিছু দিন পর সেই ওজন আবার ফিরে আসে।

নিজেকে সুস্থ্ রেখে ওজন কমাতে ডায়াটিশিয়নের সঙ্গে কথা বলে নিন। যাতে তিনি বয়স, উচ্চতা অনুযায়ী ওজন দেখে নিয়ে ব্যালান্স ডায়েট চার্ট তৈরি করে দিতে পারেন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মানতে হবে। কোনও ভাবেই প্রোটিন কমানো চলবে না। কারণ, এই সময়টা তাদের বৃদ্ধির সময়।

যাঁরা রোগা

রোগাদের ক্ষেত্রে মোটা হওয়াটা কঠিন। কারণ, দেখতে হবে হজমের কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা। তাঁর শরীরে অন্য সমস্যাও থাকতে পারে। শুধু কম খাওয়ার জন্য রোগা হয় এমনটা নয়। দেখতে হবে শরীরে কোনও সমস্যা আছে কিনা। সেই মত ডায়েট চার্ট তৈরি করতে হবে। তবে সাধারণত খাবারে কার্বোহাইড্রেড বাড়াতে হবে।

এ ক্ষেত্রে ভাতের ফ্যান, সাগু খুবই কার্যকরি। এগুলিতে সহজে ওজন বাড়ে। তবে এ ক্ষেত্রেও যদি দেখা যায় যে, প্রোটিনের পরিমান স্বাভাবিক নেই তা হলেও কিন্তু ওজন বাড়বে না। আবার মাত্রা অতিরিক্ত ফ্যাট খাওয়ানো হয় বদহজম হতে পারে। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও সেই একই অবস্থা। দেখতে হবে ঠিক কি কারণে তার ওজন কমে গিয়েছে। সেই অনুযায়ী কোন খাদ্যকণা কতটা বাড়বে সেটা ঠিক করতে হবে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখতে হবে, সুগার বা অন্য কোনও কারণে তিনি রোগী হচ্ছেন কিনা। দেখতে হবে যে পেশি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিনা। সেটা হলে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

যাঁদের ডায়াবেটিস আছে

এ ক্ষেত্রে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেড যেমন আটা, চিড়ে, মুড়ি, খই খাওয়া যেতে পারে। ভাত খাওয়া যেতে পারে, তবে পরিমাণে কম।
চিনি, গ্লুকোজ খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। তিন বেলা কার্বোহাইড্রেড খেতে হবে। তবে পরিমাণে কম। ফাইবার যুক্ত কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেড খান। সঙ্গে প্রোটিন, ফ্যাট থাকবে। পানি প্রয়োজন মতো খাবেন। আনাজ ও ফল খেতে হবে। তবে কলা বা আঙুরের মতো ফল বাদ রাখতে হবে। স্বাভাবিক তেল দিয়ে রান্না করুন। ভাজাভুজি এড়িয়ে চলুন।

গর্ভাবস্থায়

প্রতিটা খাদ্যকণা বেশি করে খেতে হবে। তিনি ওই বয়সে সাধারণত যা খেয়ে থাকেন তার থেকে বেশি পরিমাণে খেতে হবে। প্রোটিন যুক্ত খবার খেতে হবে। বাড়াতে হবে আয়রনযুক্ত খাবার। নিজের প্রয়োজনের সঙ্গে গর্ভস্থ বাচ্চার প্রয়োজন মিলিয়ে খেতে হবে।

প্রয়োজনে বারে-বারে খেতে হবে। তিনটে খাদ্যকণাই বাড়াতে হবে। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এই সময় সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে। মিনারেল ও জলের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

ফল খেতে হবে এই সময়। দেখতে হবে খাদ্য তালিকায় যেন আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে। দিনে মাছ, চিকেন একটা থেকে দুটো ডিম, ডাল খেতে হবে। পরিমাণ মতো জল, দুটো করে ফল ও সবুজ আনাজ খেতে হবে।

ইউরিক অ্যাসিড থাকলে

এটা নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে। তবে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা কোনও খাবার খেলে হয় না। কারও ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে কোনও কোনও খাবারে তা বাড়ে। মদ, যে কোনও ধরনের রেড মিট, অনিয়মিত ফুড হ্যাবিটের কারনে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়ে।

কোলেস্টেরল বেশি হলে

দু ধরনের ফ্যাট আছে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট। খাবারে দুটো ফ্যাটই থাকবে। তবে পরিমাণে কমাতে হবে। রেড মিট, অ্যালকোহল খাওয়া চলবে না। ছাঁকা তেলে ভাজা খাবার একেবারেই কমিয়ে ফেলতে হবে। দু’বেলা দুটো মাছ খেতে হবে। কোনও কোনও রান্নায় সরষের তেল আর কোনও কোনও রান্নায় সাদা তেল ব্যবহার করতে হবে।

ঋতুকালীন সময়ে

এই সময় প্রোটিন বেশি করে খেতে হবে। ব্যালেন্স খাবার খাওয়া উচিৎ। এই সময় মুড ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। সেই কারণে বাইরের মশলাদার খাবার খেতে ইচ্ছে করে। সেটা ওই সময়ে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। এতে হরমোনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *