যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েও ভর্তি হতে পারছেন না নিপুণ বিশ্বাস। দরিদ্র ঘরে জন্ম তার। বাবা নরসুন্দর। বহু কষ্টে সংসার চালান।

নিপুণের কোনো স্মার্ট ফোন নেই। ফলে তার পক্ষে বারবার ওয়েবসাইটে ঢুকে জানা সম্ভব হচ্ছিল না সে টিকেছে না টিকেনি। কর্তৃপক্ষের এসএমএস দিয়ে জানানোর কথা। কিন্তু তার মোবাইলে এসএমএস আসেনি। ৩০ জানুয়ারি বিকালে ২০২০-২১ সেশনে তৃতীয় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয় যবিপ্রবির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ।

তবে নিপুণ তা বিষয়ে জানতে পারেন রাত সাড়ে ১১টায়। ভর্তির শেষ সময় ছিল ৩১ জানুয়ারি দুপুর ১২টা পর্যন্ত। ৩০ তারিখ রাতেই নিপুণ জানতে পারেন তিনি ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে টাকা ধার করে ৩১ তারিখ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথে ফোন করে ডিনকে জানান, পথে আছেন। কিন্তু ক্যাম্পাসে পৌঁছতে মাত্র আট মিনিট দেরি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করায়নি। চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না নিপুনের।

যবিপ্রবির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন নিপুণ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রবিবার সাড়ে ৫টার দিকে যবিপ্রবির ওয়েবসাইটের নোটিশে তৃতীয় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আমার কোনো স্মার্ট ফোন না থাকায় এই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখতে পারিনি। মাঝরাতে এক বড়ভাই আমাকে ফোন করে ভর্তির বিষয় জানালে আমি তাৎক্ষণিক প্রতিবেশী ও স্বজনদের কাছ থেকে ২৩ হাজার টাকা জোগাড় করি। ওই রাতেই নির্দিষ্ট সময়ে আসার জন্য রিজার্ভে একটি প্রাইভেট মাইক্রোবাসে যবিপ্রবির উদ্দেশ্য রওনা দেই। কিন্তু যশোর থেকে নীলফামারীর দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এবং রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে আমার বেলা ১২টা ৮ মিনিট বেজে যায়। এরমধ্যে ১০টার দিকে আমার বিষয়ে একজন বড় ভাই ডিন স্যারের সঙ্গে এই সমস্যার বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু আমি আসার পরে জানতে পারি মেরিট লিস্টে আমি প্রথমে থাকার পরেও তৃতীয় সিরিয়ালে থাকা শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এরপর আমি অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও তারা আমাকে ভর্তি নেয়নি। এমনকি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে গেলেও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে দেয়নি। ’

মঙ্গলবার বিকেলেও নিপুণের সঙ্গে কথা হয় কালের কণ্ঠের। তিনি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই আছেন। হতাশায় চোখের জল ফেলছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *