নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: ইতিহাস গড়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেলো বাংলাদেশ। ২০ ওভারে মাত্র ৯৪ রানের লক্ষ্য। যে কেউ এমন টার্গেটের কথা শুনলে ধরেই নিবেন জয় না পাওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না। হ্যাঁ, বাংলাদেশও সেই টার্গেটে জয় তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ জিতেছে টাইগাররা।
তবে যারা টিভি পর্দায় খেলা দেখেছেন, তারা জানেন এই রান তুলতে বাংলাদেশকে কতোটা পরীক্ষা দিতে হয়েছে। শেষ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয়েছে মাহমুদউল্লাদের। ১১ বল খেলে মাত্র ৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার লিটন কুমার দাস। ফিন অ্যালেনের বলে আউট হন তিনি। এরপর উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। তিন নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে এসে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ৮ বলে ৮ রান করে এজাজ প্যাটেলের বলে সাজঘরে ফেরত যান এই অলরাউন্ডার। সাকিবের আউটের পর কোনো রান না করেই সাজঘরে ফেরেন মুশফিকের রহিমও।
তাদের আউটের পর দলকে জয়ের প্রান্তে নিতে লড়াই করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ওপেনার নাঈম শেখ। দলীয় ১৫তম ওভারে এক চার ও এক ছক্কায় ৩৫ বলে ২৯ রানের করে রানআউটের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। তার আউটের পর আফিফ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক। ব্যাট হাতে মাহমুদউল্লাহ এক চার ও দুই ছক্কায় ৪৮ বলে ৪৩ রান করেন।
এর আগে, টস হেরে ফিল্ডিং করতে নেমে নাসুম আহমেদের স্পিন ঘূর্ণির পর মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং তোপে বিপাকে পড়ে নিউজিল্যান্ড। চার ওভারে মাত্র ১০ রানে নিউজিল্যান্ডের প্রথম সারির চার ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান নাসুম। ইনিংসের প্রথম ওভারেই নিউজিল্যান্ডের ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিপক্ষ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন নাসুম।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে সাকিব আল হাসান দেন ১০ রান। দাপটের সঙ্গে ব্যাট করতে থাকা ফিন অ্যালানকে নাসুম তার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারেই মাঠ ছাড়তে বাধ্য করেন। রিভার্স সুইপ খেলতে চেয়েছিলেন ফিন। কিন্তু এবার টাইমিং মেলাতে না পেরে মারমুখী কিউই ওপেনার ৮ বলে ১২ রান করে সাইফউদ্দিনের সহজ ক্যাচে পরিণত হন। ১৬ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দলকে খেলায় ফেরান অধিনায়ক টম ল্যাথাম ও উইলি ইয়াং। ভয়ংকর হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন মেহেদি হাসান। ইনিংসের ১১তম ওভারে অধিনায়ককে থামিয়ে দেন মেহেদী। তার ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে ২৬ বলে এক চারে ২১ রান করে মাঠ ছাড়েন ল্যাথাম। ১২তম ওভারে বোলিং এসে নতুন ব্যাটসম্যান হেনরি নিকোলাসকে বোল্ড করেন নাসুম আহমেদ।
মাহমুদউল্লাহর হিসেবী ইনিংস, ল্যাথামের ভুল আর ম্যাকনকির দুঃস্বপ্ন
স্কোরবোর্ডে মাত্র ৯৩ রান নিয়েও নিউজিল্যান্ড দারুণ লড়েছিল। দুই বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল ও রচিন রবীন্দ্র ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ দারুণ ইনিংস খেলে ম্যাচটা বের করে নিয়ে এলেন। ৪৮ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, দলকে জেতানো বাউন্ডারিও এসেছে তার ব্যাট থেকে।
মাহমুদউল্লাহকেই আরও আগে ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া করেছেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ও উইকেটকিপার টম ল্যাথাম। প্যাটেলের বলে স্টাম্পিং মিস করেছেন ল্যাথাম, সে সময়ে মাহমুদউল্লাহর রান ছিল ২৫, বাংলাদেশ তখনো জয় থেকে ২০ রান দূরে।
ল্যাথামের পাশাপাশি এই ম্যাচ নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখবেন কিউই পেসার ম্যাকনকিও। ৩.১ ওভারে ৩৪ রান দিয়েছেন তিনি!
অস্ট্রেলিয়ার পর নিউজিল্যান্ডও কুপোকাত
কদিন আগে অস্ট্রেলিয়াকে যেভাবে ধরাশায়ী করেছে, নিউজিল্যান্ডকেও সেভাবে ধরাশায়ী করল বাংলাদেশ। সিরিজের আগে যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ টি-টোয়েন্টিতে কোনো জয় ছিল না, সেই নিউজিল্যান্ডকে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হারিয়ে দিল মাহমুদউল্লাহর দল। বলা বাহুল্য, টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশের। ম্যাচই যেখানে এর আগে জেতেনি, সিরিজ জেতার তো প্রশ্নই আসে না!
চার মেরে জেতালেন মাহমুদউল্লাহ
দরকার ছিল ২ রান, কিন্তু মাহমুদউল্লাহ আর অত সিঙ্গেল-ডাবলের হিসাবে গেলেন না। ম্যাকনকির প্রথম বলেই চার মেরে দিলেন। ফুল লেংথের বল হাঁটু গেড়ে বসে ডিপ মিডউইকেট ও লং অনের মাঝামাঝি অঞ্চল দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন সীমানার বাইরে!
৬ উইকেটে ম্যাচ জেতা হলো, সিরিজও জেতা হয়ে গেল বাংলাদেশের! পাঁচ টি-টোয়েন্টির সিরিজে চার ম্যাচ শেষেই ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে মাহমুদউল্লাহর দল।
দারুণ ব্যাটিং মাহমুদউল্লাহ-আফিফের
ওভার শুরু হওয়ার আগে বলপ্রতি ১ রানের বেশিই দরকার ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু হামিশ বেনেট ওভারের তৃতীয় বলে ওয়াইড দিয়ে বলে-রানে সমান করে দিলেন। পঞ্চম বলে মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ দারুণ দৌড়ে নিলেন দুই রান। এর বাইরে প্রতি বলেই নিয়েছেন সিঙ্গেল। ওভারে এল ৮ রান। বাংলাদেশ ১৮ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ৮৩।
আরো পড়ুন: