ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু বাংলা: কপ-২৬ সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে জলবায়ু অর্থায়নের বরাদ্দে গতি বেড়েছে। জলবায়ু মোকাবিলায় সাতটি খাতে অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে উন্নত দেশগুলো। জলবায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের শিক্ষা, দক্ষতা ও উন্নয়নে ১২০ মিলিয়ন পাউন্ড দিতে চেয়েছে যুক্তরাজ্য, যা এক হাজার ৩৯২ কোটি টাকার সমান। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অভিযোজন খাতে প্রায় ২৩৩ মিলিয়ন ডলায় ঘোষণা করে ১৩টি দেশ। পাশাপাশি কার্বন নির্গমণ কমাতে ঘোষণা করা হয়েছে ৪১৩ মিলিয়ন ডলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় অর্থায়ন পেতে হলে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করে তদবির আরও জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি কোন খাতে কীভাবে এই অর্থ ব্যয় করা হবে সে দিকেও কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। আর বাংলাদেশের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও জোরালো দাবির কারণেই এই অর্থ আদায় সম্ভব হয়েছে।
এর আগে ১ নভেম্বর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ২৬তম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৬) মূল অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল প্রদানের প্রতিশ্রুতি পূরণে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জাতিসংঘের অপর এক গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনে যেসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের ৮০ শতাংশই নারী। এ কারণে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে এই নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, শুধু প্রান্তিক এলাকা নয়, সারা বিশ্বেই নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম ক্ষমতা ভোগ করছেন এবং বেশি দারিদ্র্যের মুখোমুখি হচ্ছেন। এর অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। চাকরি, আশ্রয় বা অবকাঠামোর অভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই নারীদের আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে নারীদের আরও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পরামর্শ জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের। তাই ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রথমবারের মতো কপ-২৬ সম্মেলনে বাংলাদেশের জন্য ১২০ মিলিয়ন পাউন্ড ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
জলবায়ুর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অভিযোজন খাতে প্রায় ২৩৩ মিলিয়ন ডলায় ঘোষণা করে ১৩টি দেশ। যেখানে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডা এগিয়ে এসেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে কার্বন নির্গমণ কমাতে ঘোষণা করা হয়েছে ৪১৩ মিলিয়ন ডলার। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অর্থের পরিমাণ কম হলেও এটি কপ-২৬ সম্মেলনের বড় প্রাপ্তি।
জানতে চাইলে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীদের জন্য আলাদাভাবে যে বরাদ্দের ঘোষণা এসেছে তা নারীদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এই অর্থ অবশ্যই বিজ্ঞানভিত্তিক, অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থানীয় জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ব্যয় করতে হবে।’
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব নেতারা অর্থ দিতে চান। তবে তা কোন খাতে কীভাবে খরচ হবে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সঠিক রূপরেখা দিয়ে উন্নতদেশগুলো থেকে এই তহবিল আদায় করে নিতে হবে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তাই এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সব বড় সিদ্ধান্তে তাদের অংশগ্রহণ থাকে। দাতা দেশগুলোও এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
২৬তম জলবায়ু সম্মেলন শেষ হওয়ার আগে আরও এ ধরনের অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখছে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (ইউএনএফসিসিসি)।
বর্তমানে কপ-২৬ সম্মেলনের শেষ সময় চলছে। তাতে বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রধান ও সরকারের মন্ত্রীরা অংশ নিচ্ছেন। নানা বিষয়ে চলছে দেন দরবার। এ সময় তারা দরিদ্র দেশগুলোকে কীভাবে সাহায্য করা যায় তার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন কিনা সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ করছেন।
আরো পড়ুন:
স্যুট-টাই পরে হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীর ভাষণ || দিলেন জলবায়ুর সতর্কবার্তা