নারীদের চুল কাটা নিষিদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রসমূহকে ইসলামি স্কলাররা কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন।
১. চুল কাটার পেছনে যদি কোনো গায়রে মাহরাম (যাদের সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ নেই) পুরুষকে চুল প্রদর্শন করার ইচ্ছা থাকে;
২. চুল কাটার মাধ্যমে সে যদি কোনো কাফের, মুশরিক কিংবা অশ্লীল কোনো নারীকে অনুসরণ করতে চায়। কারণ নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ, অনুসরণ ও সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। (আবু দাউদ: ৪০৩১)
৩. যদি তার চুলের কাটিং পুরুষের চুলের কাটিংয়ের মতো হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন। (মিশকাত: ৪৪২৯)
৪. যদি কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষের সাহায্য নিয়ে চুল কাটা হয়, যেমনটি আধুনিক সেলুন ও বিউটি পার্লারগুলোতে দেখা যায়;
৫. বিবাহিত কোনো নারী যদি তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া চুল কাটে।
উপরোক্ত ক্ষেত্রসমূহে নারীদের চুল কাটা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ একবারে স্পষ্ট এবং এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আর নারীদের এসব ক্ষেত্রে চুল কাটতে নিষেধ করার উদ্দেশ্য কী তাও স্পষ্ট।
আর যদি কোনো নারী তার স্বামীর জন্য নিজেকে সজ্জিত করার উদ্দেশ্যে চুল কাটে অথবা চুল পড়া বন্ধ করার জন্য চুল কাটে অথবা তার চুল কাটার পেছনে অন্য কোনো শরিয়ত অনুমোদিত উদ্দেশ্য থাকে, তা হলে কোনো সমস্যা নেই।
হাদিসে এসেছে— আবু সালামাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীরা মাথার চুল কেটে রাখতেন তা ওয়াফরা এর ন্যায় হয়ে যেত (ঘাড় বরাবর লম্বা চুলই ওয়াফরা)। (মুসলিম: ৩২০)
ওয়াফরা ওই চুলকে বলা হয় যা কাঁধ পর্যন্ত লম্বা থাকে। কাজী আয়াজ বলেন, আরবের মেয়েরা মাথার চুল বেণী গেঁথে রাখত। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীরা তার মৃত্যুর পর সম্ভবত এরূপ করতেন সৌন্দর্য বর্জন করার জন্য।
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, কাজী আয়াজের মতো অন্যান্য উলামায়ে কিরামও বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তারা এরূপ করেছেন বলে ধারণা করা যায় না।
তবে নারীদের চুল কাটা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন এটি মাকরুহ, আবার কেউ এটিকে হারাম বলেছেন।
সৃষ্টিগত সৌন্দর্য ধরে রাখার উদ্দেশ্যে নারীদের চুল লম্বা রাখা কর্তব্য। এবং শরীয়ত অনুমোদিত কোনো কারণ কিংবা চুলের স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না থাকলে নারীদের চুল কাটা উচিত নয়।
তবে নারীদের চুল লম্বা রাখার ব্যাপারে হরহামেশাই একটি হাদিসের কথা শুনতে পাওয়া যায় যে, নারীরা যখন কেয়ামতের ময়দানে দন্ডায়মান হবে, তখন তারা তাদের চুল দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করে রাখবে। আর যে নারী দুনিয়াতে চুল কাটবে, সে নিজেকে আবৃত করে রাখার জন্য তখন কিছুই পাবে না।
এটি আসলে একটি জাল হাদিস। এ ধরনের কোনো বর্ণনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আআলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন থেকে পাওয়া যায়নি।