বিশেষ প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: জনবল ও চিকিৎসা উপকরণের সংকট নেই সরকারি হাসপাতালে। রয়েছে মজবুত অবকাঠামো। নামমাত্র খরচে পাওয়া যায় উন্নত চিকিৎসাসেবা। কিন্তু সাধারণ মানুষের অনেকেই জানে না সরকারি হাসপাতালে কিভাবে, কী ধরণের চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়। এ নিয়ে অনেক সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, ঘটে যায় অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা। কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারি চিকিৎসা সুবিধার বিষয়ে ধারণা না থাকায় প্রাপ্য চিকিৎসাসেবা আদায় করে নিতে পারেন না অনেক রোগী। এ সুযোগে অনভিজ্ঞ রোগীদের কাছ থেকে বিনা টাকার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অর্থ আদায় করেন হাসপাতালের কিছু সংখ্যক অসাধু চক্র। এতে বিনা টাকার সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ, যা সরকারি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। অথচ দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের ব্যাপক উন্নয়ন আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সারাদেশে বিস্তারলাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের অবকাঠামো বিভাগীয় পর্যায় থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। কেন্দ্র থেকে নাড়া দিলে স্বল্প সময়েই সারাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের চিত্র পাওয়া সম্ভব। বিভাগীয় থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল হাসপাতালে রোগী শয্যার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে বিনা টাকায় নরমাল ডেলিভারি, মেডিসিন এবং সার্জারীর সাধারণ সেবাসমূহ প্রদান করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে বিনা টাকায় মেডিসিন, সার্জারি, গাইনী ও প্রসূতিসেবা এবং বেসিক অর্থোপেডিক, চোখ, নাক-কান-গলা ও হৃদরোগের সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া উপজেলা হাসপাতালে সমন্বিত প্রসূতিসেবা এবং সকল হাসপাতালে নবজাতক ও অপুষ্টিজনিত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। জেলা পর্যায়ে বিনা টাকায় মেডিসিন, সার্জারি, গাইনী ও প্রসূতিসেবা এবং অর্থোপেডিক, চোখ, নাক-কান-গলা, হৃদরোগসেবা প্রদান করা হয়। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সকল বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা, সিসিইউ ও আইসিইউ সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব হাসপাতালে সকল বিশেষায়িত সেবা প্রদান করা হয়। যক্ষ্মা ও ফুসফুসের রোগের চিকিৎসা দিতে সারাদেশের ১৩ হাসপাতালে রয়েছে প্রায় ৮১৬টি রোগীশয্যা এবং সংক্রামক ব্যাধি, কুষ্ঠ ও অন্যান্য রোগের জন্য ১৪টি হাসপাতালে ৬১৫টি রোগী শয্যা রয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে সারাদেশে রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৫৮৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন সাব সেন্টার এবং রয়েছে ৮৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহ এবং জেলা হাসপাতালে সিসিইউ চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। ক্যান্সার রোগীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে ।
সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ:
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, নামমাত্র খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতালে। অপারেশন, সিসিইউ, আইসিসিইউ ও ডায়ালাইসিস সেবার ক্ষেত্রে কোন টাকা নেয়া যাবে না। তবে বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে স্বল্প ফি নেয়া হয়। এক্ষেত্রেও সরকারি ফি বেসরকারি হাসপাতালের ফি’র তুলনায় অনেক গুণ কম। সরকারি হাসপাতালে করোনারী এনজিওগ্রামে ২ হাজার টাকা, সিটি স্ক্যানে ২ হাজার টাকা, এমআরআই ৩ হাজার টাকা, ইসিজি ৮০ টাকা, ইকোকার্ডিওগ্রাম ২০০ টাকা, এক্সরে ২০০ টাকা, আল্ট্রাসনোগ্রাম ৩০০ টাকা, কার্ডিয়াক ক্যাথ ২ হাজার টাকা, ইউরিন ৩০ টাকা এবং রক্তের হিমোগেøাবিন, টোটাল কাউন্ট করাতে লাগে মাত্র ১০০ টাকা। সকল হাসপাতালে ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। এই মুহুর্তে কোন ঘাটতি নেই।
হাসপাতাল ভেদে সরকারি চিকিৎসাসেবা :
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা ফ্রি আর কম মূল্যে খোদ রাজধানীতেই পাওয়া যায়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০ টাকার টিকিট নিয়ে জরুরি এবং বহির্বিভাগের চিকিৎসকের সেবা নিতে পারেন যে কেউ। তবে বহির্বিভাগের ক্ষেত্রে দেয়া হয় ১০ টাকার টিকিটের সঙ্গে ফ্রি ওষুধ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে হতদরিদ্রদের সেবা দেয়া হয় বিনামূল্যে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল:
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা বিভিন্ন শ্রেণীভেদে হয়ে থাকে। হাসপাতালে অজ্ঞাত কোনো রোগী ভর্তি হলে তারা সিটি স্ক্যানসহ যে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ওষুধ-পথ্য সবই ফ্রিতে পেয়ে থাকেন। এছাড়া হাসপাতালে সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ রয়েছে, যা বিনামূল্যে দেয়া হয়ে থাকে। খুব কম রোগীরই দু-একটি ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। প্রতি মাসে রেডিওলজি বিভাগে এক্সরের প্রায় ৫০ ভাগই ফ্রি করা হয়। আর সিটি স্ক্যানে ফ্রি হয় ১০ থেকে ২০ ভাগ। তবে হাসপাতালে কিছু অসাধু কর্মচারী রয়েছে, যারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফ্রি লিখিয়ে এনে রোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগেও গরিব রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
ক্যান্সার হাসপাতাল:
রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যারা ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত তাদের চিকিসাসেবা প্রদান করা হয়। হাসপাতালটির বর্হি বিভাগ এখানে সকাল ৮.৩০ টা থেকে দুপুর ২.৩০ টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। তবে সরকারী ছুটির দিনগুলোতে এখানে রোগী দেখা হয় না। এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে সাধারণত ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। হাসপাতালটি বহির্বিভাগের ডাক্তার দেখানোর জন্য ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট সংগ্রহ করতে হয়।
রোগী ভর্তি : এই হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করার জন্য প্রথমে অনুসন্ধান কেন্দ্রে যেতে হয়। এখানে গিয়ে ১৫ টাকা দিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হয়। তার পর জরুরী বিভাগে নিয়ে যেতে হয়। রোগীকে দেখার পর রোগের অবস্থা অনুযায়ী রোগীকে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার টেস্ট সুবিধা সরকারী হাসপাতাল হওয়ায় এখানে বিভিন্ন ধরনের টেস্টের জন্য ফি দিতে হয় না। সরকারী হাসপাতাল হিসাবে অপারেশনের জন্য রোগীকে ১,০০০ টাকা অগ্রিম দিতে হয়। পরবর্তীতে অপারেশনের ধরণ অনুযায়ী খরচ দিতে হয়। কেবিন ও ওয়ার্ড এখানে ৯ টি ওয়ার্ড ও ৩০ টি কেবিনে মোট ৫২০ টি আসন রয়েছে। গরীব রোগী এখানে গরীব রোগীদের বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। গরীব রোগীদের থাকা, খাওয়া, ঔষধ খরচ এবং প্রয়োজনে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত পরীক্ষার বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। হাসপাতালের সমাজ কল্যাণ কার্যালয় থেকে গরীব এবং দুস্থ রোগীদের ঔষধ ও খাওয়ার জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। ঔষধ এ ভবনের নিচতলায় একটি ঔষধের কক্ষ রয়েছে। এখান থেকে রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ দেওয়া হয়। তবে কিছু ঔষধ রোগীকে দোকান থেকে কিনে নিতে হয়। এখানে যেসব জটিল পরীক্ষা করানো হয় সেগুলোর মধ্যে বক্ষ সিজারিয়ান,স্ক্যানিং, ফিজিওলজি প্যাথলজি, ট্রান্স ফিউশন ও প্লাস্টিক সার্জারী।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল:
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে বিনামূল্যে মেডিসিন ডিসপেনসারী চালু করা হয়েছে। ইমার্জেন্সী, বহির্বিভাগ, সিসিইউ, পিসিসিইউ, আইসিইউ, ওয়ার্ড, কেবিন, ক্যাথ ল্যাব, অপারেশন থিয়েটার ইত্যাদি বিভাগ সমূহে সুপ্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়াও ইসিজি, ইকো, ইটিটি, হল্টার, নিউক্লিয়ার মেডিসিন, সিটি এনজিওগ্রাম, বায়োকেমিষ্ট্রি, প্যাথলজি ও মাইক্রোবায়োলজি ইত্যাদি বিভাগের মাধ্যমে সর্বাধুনিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা হয়। শিশু রোগ ও ভাসকুলার সার্জারি রোগীদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে হাসপাতালটি অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে। ব্রেইন স্ট্রোক রোগীদের উন্নত চিকিৎসাদানে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে সরকার।
এখানে সকাল ৮.৩০ টা থেকে দুপুর ২.৩০ টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে সাধারণত হৃদরোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। হাসপাতালটি বহির্বিভাগের ডাক্তার দেখানোর জন্য ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। রোগী ভর্তি এই হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করার জন্য প্রথমে অনুসন্ধান কেন্দ্রে যেতে হয়। এখানে গিয়ে ১৫ টাকা দিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হয়। তার পর জরুরী বিভাগে নিয়ে যেতে হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীকে দেখার পর রোগের অবস্থা অনুযায়ী রোগীকে ভর্তি করা হয়।
এই হাসপাতালে যেসব অপারেশন করা হয়ে থাকে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে হৃদ সিজারিয়ান, হৃদ স্ক্যানিং, এ এনজিও গ্রাম, ফিজিওলজি ও এনাটমী। রোগীর অপারেশনের আগে ১,০০০ টাকা দিতে হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসা সেবা অনুযায়ী আরো খরচ দিতে হয়।
এখানে ৯টি ওয়ার্ড ও ৩০টি কেবিনে মোট ৪৮০টি আসন রয়েছে। ভাড়া (প্রতিদিন) কেবিন ১,০০০ টাকা, পেয়িং বেড ২২৫ টাকা এবং নন এসি (কেবিন) ৪৭৫ টাকা।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল:
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল ’। নামমাত্র ফি দিয়ে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় এই প্রতিষ্ঠানে। বহিঃবিভাগে প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২.৩০ পর্যন্ত রোগী দেখা হচ্ছে। এ হাসপাতালে রোগীদের আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে এম. আর মেশিন, সিটি স্ক্যান, এনসিভিইএমজি মেশিন, নিউরো-ইনটার ভেনসন সহ আরও আধুনিক যন্ত্রপাতি। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. এম,এস জহিরুল হক চৌধুরী জানান, ব্রেন এং মেরুদন্ডে অপারেশনের গাইড লাইন, রোগী হাসপাতালের আসার সাথে সাথে স্ট্রোক জনিত রোগ নির্নয় জন্য এম.আর মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে রোগী খরচ পরবে তিন হাজার টাকা। এই এম.আর মেশিন উপমহাদেশে আছে মাত্র দুইটি। একটা বাংলাদেশে আর একটা ভারতে। অল্প খরচে সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে। খরচ পড়বে দুই হাজার টাকা। প্রাইভেট হাসপাতালে খরচ পড়ে সাত হাজার টাকা। নার্ভ এবং মাংসের রোগ নির্নয় জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এনসিভিইএমজি মেশিন। যা খরচ পড়ছে সাত শত টাকা। ব্রেন স্ট্রোক, ব্রেইন টিউমার, মৃগী রোগ, মাথা ব্যাথা, মাংস শুকিয়ে যাওয়া, মাথা আঘাতের চিকিৎসা হচ্ছে এই হাসপাতালে।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল:
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ব্যবস্থা রয়েছে অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবার। বিনামূল্যে চিকিৎসার মাত্রাই বেশি। সরকারিভাবে নির্ধারিত কিছু সংখ্যক পরীক্ষায় নামমাত্র টাকা নেয়া হয়। এ হাসপাতালে বর্তমানে ৯৭ প্রকারের উন্নতমানের সরকারি ওষুধ বিনা টাকায় প্রদান করা হয়ে থাকে। ফুসফুস সহ শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ ব্যাধির ক্ষেত্রে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের দারস্থ হতে হয়। এ হাসপাতালে রেসপিরেটোরি মেডিসিন, থোরাসিক সার্জারি বিভাগ রয়েছে। রেসপিরেটোরি বিভাগে ১০টি ইউনিট ও থোরাসিক চারটি ইউনিট কাজ করছে। এ ছাড়া রেডিওলজি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ন্যাশনাল টিউবার কোলসিস ইত্যাদির বিভাগ রয়েছে। এখানে এমডিআর টিবি শনাক্ত করার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। ইনডোরে ২৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া ২৮০ টাকা। অ্যাজমা সেন্টারের পেইং কেবিন ভাড়া এক হাজার টাকা। প্রতিদিন অ্যাজমা, ইমার্জেন্সি ও আউটডোর মিলিয়ে প্রায় ৫০০ রোগী দেখা হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত আউটডোরে রোগী দেখা হয়। আউটডোরে ১০ টাকা টিকেট কেটে রোগী দেখাতে হয়। অ্যাজমা সেন্টারে রেসপিরেটোরি ল্যাব আছে। ফুসফুসের সব ধরনের এক্স-রে করা হয়। স্লিপল্যাপ, সিপিইটি, বডি বক্স এ পদ্ধতির পরীক্ষা করা হয়, যে পরীক্ষাগুলো বাইরের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে নেই। এখানে নামমাত্র মূল্যে এই পরীক্ষা করা হয়। ইনডোরে ২৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া ২৮০ টাকা। অ্যাজমা সেন্টারের পেইং কেবিন ভাড়া এক হাজার টাকা। প্রতিদিন অ্যাজমা, ইমার্জেন্সি ও আউটডোর মিলিয়ে প্রায় ৫০০ রোগী দেখা হয়। অ্যাজমা সেন্টারে রেসপিরেটোরি ল্যাব আছে। ফুসফুসের সব ধরনের এক্স-রে করা হয়। স্লিপল্যাপ, সিপিইটি, বডি বক্স এ পদ্ধতির পরীক্ষা করা হয়। এখানে নামমাত্র মূল্যে যক্ষ্মার সব ধরনের চিকিৎসা এবং পরীক্ষা করা হয়। সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। এখানে মাত্র ১০ টাকা টিকেট কেটে রোগী দেখাতে হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল আটটা থেকে বহির্বিভাগ কার্যক্রম শুরু হয়। সবগুলো বিভাগেরই আলাদা আলাদা বহির্বিভাগ আছে।সকাল আটটা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত রোগের ধরন বুঝে নির্দিষ্ট বিভাগের টিকেট কেটে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে দেখাতে হয়। যেমন কারো মানসিক কোন সমস্যা আছে মনে হলে তিনি মানসিক রোগ বিভাগের টিকেট কাটতে পারেন। অবশ্য তিনি মেডিসিন বিভাগের টিকেটও কাটতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন মনে করলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকই প্রয়োজনীয় বিভাগে রেফার করেন। সম্প্রতি বিকাল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কনসাল্টেশন সেবা চালু করা হয়েছে। এজন্য ২০০ টাকা মূল্যের একটি টিকেট কাটতে হবে, এক টিকেটে সর্বোচ্চ দুইবার দেখানো যায় এবং টিকেটের মেয়াদ একমাস। আর এ হাসপাতালের রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা বা ডাগনস্টিক সার্ভিস সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চালু থাকে।
ঢাকা শিশু হাসপাতাল:
ঢাকা শেরে বাংলা নগরের শ্যামলীতে গড়ে উঠা ঢাকা শিশু হাসপাতালে রোগী দেখাতে হলে ১০ টাকা মূল্যের টিকেট কাটতে হবে। এখানে মেডিসিন, ডেন্টাল, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন, চর্ম ও যৌন রোগ, শিশু, গাইনী, শিশু সার্জারী, এ্যাজমা সেন্টার, নিউরোলজি ও কার্ডিওলজি বিভাগসহ মোট ১১ টি বিভাগ রয়েছে । বহি: বিভাগ প্রতিদিন সকাল ৮টা হতে বেলা ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে ।
ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল
রাজধানীর নয়াবাজারে অবস্থিত ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালের বহি:বিভাগে ৫ টাকার টিকেট কেটে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা রয়ছে। এছাড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট দেখাতে ৩০ টাকার টিকেট কাটতে হয়। বহিঃ বিভাগে মেডিসিন, নাক কান গলা, গাইনী, চর্ম এবং শিশু রোগের চিকিৎসা করার ব্যবস্থা রয়েছে।
জাতীয় কিডনী ইনষ্টিটিউট এবং হাসপাতাল :
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের জাতীয় কিডনী ইনষ্টিটিউট এবং হাসপাতালে কিডনী সমস্যায় জর্জরিত রোগীদের সেবা প্রদান করা হয়। হাসপাতাল ভবন ৩টি। ভবন তিনটি এ বি এবং সি ব্লকে বিভক্ত। প্রতিটি ভবনে দুটি করে লিফট রয়েছে। হাসপাতালের আইসিইউ এবং অপারেশন থিয়েটার এ ব্লকের ৩য় তলায় লিফটের ডানে অবস্থিত। এখানে সাধারনত কিডনী সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকার টেস্ট করা হয়। সরকারী হাসপাতাল হওয়ায় সাধারনত টেস্টের জন্য কোন প্রকার ফি দিতে হয় না। কয়েকটি টেস্টের নাম- নিথোট্রিপাস, হেমোডায়ালাইসিস,রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং, ইউরোলজী; এবং ফিজিওলজী।
রোগী ভর্তি : এখানে রোগী ভর্তির জন্য প্রথমে অনুসন্ধান কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হয়। ২৫ টাকা দিয়ে ভর্তি ফরম পূরন করতে হয়। তারপর সংশ্লিষ্ট ডাক্তার রোগী দেখার পর হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়। বহি:র্বিভাগে সাধারনত কিডনী সম্পর্কিত যাবতীয় সমস্যা বা রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এখানে প্রত্যেক ৮ জন করে ডাক্তার বসেন। বহি:র্বিভাগে রোগী দেখানোর জন্য ১০ টাকা মূল্যের টিকিট ক্রয় করতে হয়। ঢাকার মধ্যে রোগী পরিবহনের জন্য এ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ৩৫০ টাকা। এখানে গরীব রোগীদের বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। গরীব রোগীদের থাকা, খাওয়া, ঔষধ খরচ এবং প্রয়োজনে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত পরীক্ষার বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। হাসপাতালের সমাজ কল্যান কার্যালয় থেকে গরীব এবং দুস্থ রোগীদের ঔষধ, রক্ত, খাওয়ার জন্য অর্থায়ন এবং দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা হয়। অপারেশনগুলোর ফি-পেন্ডিসাইটিস ১২০০ টাকা,কিডনী পাথার ২০০০ টাকা,কিডনী স্পট ২৫০০ টাকা, কিডনীতে ব্লাড জাম ২৯০০ টাকা এবং কিডনী সিজারিয়ান ২১৫০ টাকা।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র:
বাংলাদেশে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন দূর্ঘটনার শিকার হয়ে হাত/পা ভাঙ্গে ও পঙ্গুত্ব বরণ করে। এসব রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে সরকারিভাবে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। মূল গেটের কাছেই অনুসন্ধান কেন্দ্রটির অবস্থান, ফোন: +৮৮-০২-৯১১৪০৭৫।
বহির্বিভাগ : প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্রবার এবং সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে। বহির্বিভাগে সাধারণত হাড়ভাঙ্গা, হাড়জোড়া, হাতেটিউমার, দূর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত, পঙ্গু, বিকলাঙ্গ ইত্যাদি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। বহির্বিভাগে টিকেটের মূল্য ১০ টাকা। এই টিকেট নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়।
এই হাসপাতালে যে কোন অপারেশনের জন্য প্রথমে ১,০০০ টাকা অগ্রিম দিতে হয়। পরবর্তীতে অপারেশনের ধরন অনুযায়ী আরো টাকা দিতে হয়। রোগী ভর্তির জন্য প্রথমে জরুরী বিভাগ থেকে ১০ টাকা মূল্যের টিকেট কেটে ডাক্তার দেখাতে হয়। ডাক্তার রোগী দেখে ভর্তির পরামর্শ দিলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি ফি ১৫ টাকা। কেবিনের ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত এবং ওয়ার্ডের ভাড়া ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এসি ও নন এসি ওয়ার্ড ও কেবিনের মান অনুসারে ভাড়ার পার্থক্য হয়। কেবিন/ওয়ার্ডে সিট পাওয়ার জন্য জরুরী বিভাগে যোগাযোগ করতে হয়। এখান থেকে ডাক্তার রোগীকে ভর্তির পরামর্শ দিলে বেড খালি খাকা সাপেক্ষে রোগী ভর্তি করা হয়। তবে জরুরি হলে মেঝেতে চাদর বিছিয়েও রোগীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। গরীব রোগী গরীব রোগীদের বিনা খরচে চিকিৎসা করা হয়। থাকা, খাওয়া, ওষুধ খরচ এবং প্রয়োজনে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। হাসপাতালের সমাজ কল্যাণ কার্যালয় থেকে গরীব এবং দুস্থ রোগীদের ওষুধ, রক্ত, খাওয়ার জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
ওষুধ : এখান থেকে রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ দেওয়া হয়। তবে কিছু ঔষধ রোগীকে দোকান থেকে কিনে নিতে হয়। এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন টেস্ট করানোর সুযোগ রয়েছে এখানে। এছাড়া ফিজিওথেরাপীর ব্যবস্থা রয়েছে। হাড় ভাঙ্গার সকল প্রকার অপারেশন এখানে করা হয়। তাছাড়া নাক-কানের কিছু অপারেশনও এখানে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল:
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে একটি অনুসন্ধানকেন্দ্র রয়েছে । এটি হাসপাতালের প্রবেশ পথেই অবস্থিত । অসুস্থ রোগীদের আনা নেয়ার জন্য এখানে ৩ টি এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে । অন্য সব সরকারী হাসপাতালের মত শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেও বহির্বিভাগে এমবিবিএস ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকে । বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে হলে প্রথমে কাউন্টার থেকে ১০ টাকা মূল্যের টিকেট কাটতে হবে । অনুসন্ধান কক্ষের ডান দিকে ৩ টি বহির্বিভাগ কাউন্টার রয়েছে । কাউন্টারে রোগী গেলে কাউন্টারে দায়িত্বশীল ব্যাক্তি রোগীর কাছ থেকে তার সমস্যা বা রোগের লক্ষণ শুনে ঐ রোগ সম্পর্কিত বিভাগে রোগীকে পাঠিয়ে দেয় । এখানে মেডিসিন, ডেন্টাল, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন, চর্ম ও যৌন রোগ, শিশু, গাইনী, শিশু সার্জারী, এ্যাজমা সেন্টার, নিউরোলজি ও কার্ডিওলজি বিভাগসহ মোট ১১ টি বিভাগ রয়েছে । বহির্বিভাগ প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ঘটিকা পর্যন্ত খোলা থাকে ।
এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগের অপারেশন ছাড়া অন্যান্য রোগের জটিল অপারেশন সম্পন্ন হয়ে থাকে । পেয়িং বেড মাইনর অপারেশন ৫০০ টাকা । পেয়িং বেড মেজর অপারেশন ১০০০ টাকা। কেবিন বেড মাইনর অপারেশন ১০০০ টাকা কেবিন বেড মেজর অপারেশন ২০০০ টাকা।
দরিদ্র ও অসহায় রোগীরা সমাজ সেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করে ঔষধ পত্রসহ বিভন্ন টেষ্ট ও সিট ভাড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন। সমাজ সেবা কার্যালয় হাসপাতালের নিচতলায় ব্লক -৬ এ অবস্থিত। রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে প্রথমে হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হবে। ডাক্তার রোগীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তি হতে বললে ১০ দিনের সিট ভাড়া অগ্রিম প্রদান করা সহ প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর সিট খালি থাকা সাপেক্ষে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়, জরুরী প্রয়োজনে সিট খালি না থাকলে রোগী ভর্তি নেওয়া হয় না। সিট পাওয়ার জন্য হাসপাতালের ২য় তলার রেন্ট কালেকশন বিভাগে যোগাযোগ করতে হয়। এই হাসপাতালে মোট ৩০টি কেবিন ও ১১টি ওয়ার্ড রয়েছে। বেড প্রতিদিন-২২৫টাকা ভাড়া । কেবিন বেড প্রতিদিন ৩৭৫ টাকা। এখানে সব ধরনের টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। এই মেডিকেল কলেজের নিজস্ব ডিসপেনসারীটি অনুসন্ধান কক্ষের বাম পাশে অবস্থিত । ডিসপেনসারী থেকে নির্ধারতি কিছু ঔষধ রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়।
আরো পড়ুন: