নতুন করোনা ভাইরাস ওমিক্রন, নতুন ঔষধ
অমিক্রন সম্পর্কে জানুন
এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বলছে, অমিক্রনের সংক্রমণ খুব মারাত্মক ধরনের হয় না। তবে এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন (প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানীরা কাজ করে চলেছেন এর নানা দিক নিয়ে)। তবে অবশ্যই থাকতে হবে সচেতন। তা না হলে আবারও স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়বে, নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, করোনা বিধিনিষেধে যেতে হলে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সীমানা পেরিয়ে ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে অমিক্রন। ধারণা করা হচ্ছে, সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ভাইরাস। তাই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে জারি হয়েছে সতর্কতা।
করোনা ভাইরাসে চাই সচেতনতা
নতুন ধরন আবিষ্কৃত হয়েছে বলে কিন্তু আতঙ্কের কিছু নেই। আতঙ্কিত না হয়ে বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যায়ে।
জল, স্থল ও আকাশপথে দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র নেবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আগতদের জন্য অবশ্যই রাখতে হবে স্ক্রিনিং ও কোয়ারেন্টিন সুবিধা। জনগণকেও সহযোগিতা করতে হবে, মেনে চলতে হবে রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ।
মাস্ক পরার বিকল্প নেই। নাকের নিচে কিংবা থুতনিতে নয়, মাস্ক পরতে হবে নাক ও মুখ ভালোভাবে ঢেকে। জনসমাগম এড়াতে হবে যতটা সম্ভব। বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মী—যাঁর সংস্পর্শেই আসুন না কেন, মাস্ক পরুন সঠিকভাবে। হাত ধোয়ার নিয়ম, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার এবং স্বাস্থ্যবিধির অন্যান্য দিক—সবটাই মেনে চলতে হবে।
যে ব্যক্তি আদতেই টিকা নেননি, তাঁর ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের যেকোনো ধরনে সংক্রমণ হয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে থাকলেও অমিক্রনে সংক্রমণ হতে পারে, এটা ঠিক। তাই এখনো টিকা নিয়ে না থাকলে যত দ্রুত সম্ভব, টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করে নিন।
উপসর্গ দেখা দিলে
জ্বর, সর্দি, শুকনা কাশি, গলা বসে যাওয়া এবং শরীর ব্যথার মতো সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয় অমিক্রন সংক্রমণে। করোনা সংক্রমণের যেকোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে তাই স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে জানাতে হবে। আর তাৎক্ষণিকভাবে নিজেকে পৃথক করে ফেলতে হবে অন্যদের কাছ থেকে (আইসোলেশন), যাতে একজন রোগী থেকে বহুজনে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে। রোগীকে চিকিৎসা নিতে হবে রোগের উপসর্গ অনুযায়ী।
করোনার নতুন ওষুধ মলনুপিরাভির
সম্প্রতি নতুন একটি ওষুধ অনুমোদন পেয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। মলনুপিরাভির নামের এই ওষুধ করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসায় কার্যকর। অনুমোদন পেয়েছে আমাদের দেশেও। যদিও এটি কোনো ধরনের ইনজেকশন নয় (মুখে খাওয়ার ওষুধ), তবু এই ওষুধ সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। তাই সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলেই নিজে নিজে ওষুধ সেবন করা যাবে না। এই ওষুধ বাড়ির প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে রেখে দেওয়ার মতো কোনো ওষুধও নয়।
কার জন্য, কার জন্য নয়
কেবল জরুরি কিছু ক্ষেত্রেই গ্রহণ করা যাবে মলনুপিরাভির। ডায়াবেটিস বা হৃদ্রোগে আক্রান্ত বা অতিরিক্ত ওজন যাদের, তারা যদি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন এবং সেই সংক্রমণ যদি হয় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের, কেবল তাঁদের জন্যই এই মলনুপিরাভির। সংক্রমণের মাত্রাটি আসলে কেমন অর্থাৎ মৃদু বা মাঝারি সংক্রমণ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন কেবল একজন চিকিৎসক।
উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ওষুধটি শুরু করতে হয়। তাই লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটা জরুরি। সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে এবং প্রথম পাঁচটি দিন পার হয়ে গেলে এই ওষুধ কাজে আসবে না। ওষুধটি শুরু করার পরও মোট পাঁচ দিন সেবন করতে হয়। শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী নারীদের জন্য নয় মলনুপিরাভির। বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই গ্রহণ করা যাবে না এই ওষুধ।