নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: করোনা মহামারিতে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের সহায়তার ওএমএসসহ নানা কর্মসূচি চালুর ফলে কমছে সরকারের খাদ্যশস্যের মজুত। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বোরো সংগ্রহ হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারের খাদ্যশস্যের মজুত কমলে এক শ্রেণির অসতৎ ব্যবসায়ী এর সুযোগ নেয়। ইতিমধ্যে খুচরা বাজারে মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই দাম গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই সরকার চাচ্ছে দ্রুত চাল আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
এছাড়া ওএমএসসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে বছরে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল প্রয়োজন। সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মজুত বাড়াতে বিদেশ থেকে ১০ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, চলতি বছর দেশে বোরোর বাম্পার ফলন হলেও অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সরকারের খাদ্যশস্যের মজুত পরিস্থিতির ওপর। বোরো মৌসুমে এবার ৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান এবং ১০ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতি কেজি ধানের দাম ২৭ টাকা, সেদ্ধ ও আতপ চালের দাম যথাক্রমে ৪০ ও ৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গত ২৮ এপ্রিল থেকে ধান ও ৭ এপ্রিল থেকে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৩ লাখ ৩০ হাজার ১৬৮ টন ধান, ৭ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৫ টন সেদ্ধ চাল ও ৬৩ হাজার ৬৫৫ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
এখনো ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৩২ টন ধান ও ১ লাখ ৪১ হাজার ১৮৭ টন চাল সংগ্রহ হয়নি। অথচ চলতি আগস্টেই বোরো সংগ্রহ অভিযান শেষ হচ্ছে।
সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সরকার ধান-চালের যে সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে, তারচেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি। তাই, কৃষক ও মিলাররা সরকারের গুদামে ধান-চাল সরবরাহে আগ্রহী নয়।
তবে এই সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সরকারের গুদামে সাড়ে ১২ লাখ টন চাল মজুত আছে। দ্রুত চাল আমদানি করা হলে কোনো ধরনের সংকট তৈরি হবে না। গত অর্থবছরে ১৩ লাখ ৪৯ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছিল বলে সূত্র জানায়।
বাজারে মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে
এদিকে চাল সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কোনো কারণ ছাড়াই অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। গতকাল রাজধানীর বাজারে মোটা চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। গত সপ্তাহে মোটা চালের কেজি ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায় উঠেছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল তাদের দৈনন্দিন বাজার দরের প্রতিবেদনে দাম বাড়ার এ তথ্য তুলে ধরেছে।
সরকারের এ বিপণন সংস্থাটির হিসেবেই গত বছর এই সময় প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এ হিসেবে, এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চালে দাম বেড়েছে সাত থেকে আট টাকা। এতে বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
গতকাল বাজারে অন্যান্য চালের মধ্যে সরু চাল নাজিরশাইল-মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৮ টাকা ও মাঝারি মানের চাল পাইজাম-লতা ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বোরোর সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, করোনা সংকটের এই সময়েও দেশে চাল উৎপাদন বেড়েছে। গত বছর মার্চে দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর দুই বোরো মৌসুমেই ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে রেকর্ড পরিমাণ ২ কোটি ৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৬২ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সরকারের গুদামে চালের মজুত কম থাকলেও অসত্ ব্যবসায়ীরা এই চাল মজুত করেছে।
তারা এখন, বাজারে সরবরাহ কমিয়ে সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। এই কারসাজি চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারলেই চালের বাজার স্থিতিশীল হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।