নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয়মাস পরেও ৯৯ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে গবেষণার এ তথ্য জানানো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার প্রথম মাসে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি শরীরে থাকে তা দ্বিতীয় মাসে এসে ২৫ শতাংশ হ্রাস পায়। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর দুই মাস পর্যন্ত শরীরে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি থাকে তা চতুর্থ মাসে এসে ২১ শতাংশ হ্রাস পায় এবং ষষ্ঠ মাসে এসে চতুর্থ মাসের চেয়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে যায়।
গবেষকরা বলছেন, এতে করে করোনার টিকা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পর্যন্ত করোনা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিবডি শরীরে থাকে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এছাড়া গবেষণায় প্রথম ডোজ টিকা যারা নিয়েছেন, তাদের শরীরে ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, উভয় ডোজ যারা নিয়েছেন তাদের শরীরে ৯৯ দশমিক ১৩ শতাংশ অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। আর যারা টিকা নেননি, তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। টিকা যারা নেননি তাদের শরীরে টিকা নেওয়াদের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ কম অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ‘গবেষণায় করোনার টিকা নেওয়াদের মধ্যে একটি চমৎকার বিষয় পাওয়া গেছে। সেটি হলো- যারা টিকা নেননি, তাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি আছে তা প্রথম ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদের চেয়ে তিনগুণ কম। আর যারা দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তাদের চেয়ে পাঁচগুণ কম। ফলে করোনার টিকা নিলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে বেশি, যা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে। এই ফলাফল মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে করোনার টিকার প্রথম ডোজ প্রয়োগ শুরুর এক মাস পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ান হেলথ ইনস্টিটিউট এ গবেষণা কার্যক্রম শুরু করে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, রোগীর অ্যাটেনডেন্ট, আউটডোর ও ইনডোরে আসা রোগী (কোভিড আক্রান্ত নয় এমন), পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ওপর এ গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়। প্রথম ডোজ ও উভয় ডোজ টিকা নিয়েছেন এমন ৭৪৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে রক্তে সার্স কোভিড অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়। ছয় মাস পর ১ সেপ্টেম্বর বিশ্লেষণের ফলাফল চূড়ান্ত হয়েছে। ৭৪৬ জনের মধ্যে ২২৩ জন কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন। ২৩১ জন উভয় ডোজ নিয়েছেন। ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি এমন আছেন ২৯২ জন।
সিভাসুর উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে গবেষক দলে ছিলেন- ওয়ান হেলথ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এমএ হাসান চৌধুরী এবং সহকারী গবেষক হিসেবে ছিলেন সিভাসুর চিকিৎসক জাহান আরা, সিরাজুল ইসলাম, তারেক উল কাদের, আনান দাশ, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ইয়াসির হাসিব, তাজরিনা রহমান এবং শিক্ষানবিশ চিকিৎসক সীমান্ত দাশ।
আরো পড়ুন: