দ্বিতীয় ডোজে লোকজনের সাড়া কম
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজে লোকজনের সাড়া কম দেখা যাচ্ছে। টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রে লোকজনের সাড়া কম।
দেশে মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রে লোকজনের সাড়া কম। প্রথম ডোজের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ৭৯.৪৩ শতাংশ এরই মধ্যে টিকা নিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৪৯.৫৮ শতাংশ মানুষ।
এদিকে সব শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩২.৪০%। মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকা প্রয়োগ কর্মসূচির (ইপিআই) পরিচালক এবং জাতীয় কভিড-১৯ টিকা পরিকল্পনার সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের টার্গেট হচ্ছে আগামী জুন মাসের মধ্যে দেশের মোট জনসংখার ৭০ শতাংশকে কভিড-১৯ টিকার আওতায় আনা। আমাদের টিকার কোনো সংকট নেই। জনবলেরও সংকট নেই। সমস্যা হচ্ছে এখনো সবাই টিকা নিতে আসছে না। তাদের কেন্দ্র আনাটাই চ্যালেঞ্জ। ’
ডা. শামসুল হক বলেন, ‘নিবন্ধনের বাইরেও অনেককে টিকা দিচ্ছি। নিবন্ধনের বাইরে যারা টিকা নিচ্ছে তারা সনদ পাচ্ছে না। সনদের প্রয়োজনও সবার হয় না। তবে সনদ না পেলেও করোনা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য টিকা নিতে হবে। টিকা নেওয়ার পর সংক্রমিত হলেও শারীরিক অবস্থার খুব বেশি অবনতি হবে না। আমরা জানতে পারছি, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপতালে ভর্তি হচ্ছে তাদের বেশির ভাগই ভ্যাকসিন নেয়নি। ’
তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ কতজনেক দেওয়া হবে—এ প্রশ্নে শামসুল হক বলেন, এর লক্ষ্যমাত্রা এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে বুস্টার ডোজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের তথ্য অনুসারে গত সোমবার পর্যন্ত ছয় ধরনের কভিড-১৯ টিকা পাওয়া গেছে ২৪ কোটি ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪০ ডোজ। টিকা দেওয়া হয়েছে ১৫ কোটি ৫০ লাখ দুই হাজার ১১৭ ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৯ কোটি ৪৭ লাখ তিন হাজার ২৯৬ জনকে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে পাঁচ কোটি ৯১ লাখ আট হাজার ৫৩৯ জনকে। বুস্টার বা তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ১১ লাখ ৯০ হাজার ২৮২ জনকে।
অবশিষ্ট আছে আট কোটি ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৩ ডোজ। প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নেয়নি তিন কোটি ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ৭৫৭ জন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছে এক কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৬ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৮২৬ জন। নিবন্ধন করেছে মোট আট কোটি ৫৮ লাখ ৪৭ হাজার ৫৯৪ জন। এর মধ্যে এনআইডির মাধ্যমে আট কোটি ৩০ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৭ জন, পাসপোর্টের মাধ্যমে ১৩ লাখ এক হাজার ৭৬৭ জন এবং জন্মনিবন্ধন সনদের মাধ্যমে ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ জন টিকা নিয়েছে।
জানা যায়, গত সোমবার পর্যন্ত সব চেয়ে বেশি টিকা নিয়েছে গাজীপুর জেলার মানুষ। এই জেলার মোট জনসংখ্যার ৭৮ শতাংশ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে। আর সবচেয়ে কম ৪২ শতাংশ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানুষ।
শনাক্তের হার ৩২.৪০%, মৃত্যু ১৮ জনের
গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৩৩ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয় ১৪ হাজার ৮২৮ জন। সে হিসাবে এক দিনের ব্যবধানে করোনা রোগী শনাক্ত বেড়েছে এক হাজার ২০৫ জন। শনাক্তের হার পৌঁছেছে ৩২.৪০ শতাংশ। মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের।
এর আগে সর্বোচ্চ গত বছরের ২৮ জুলাই ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্ত হয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে নতুন শনাক্ত হওয়াদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৭। মৃত্যু হয়েছে মোট ২৮ হাজার ২৫৬ জনের। সব শেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছে এক হাজার ৯৫ জন। মোট সুস্থ হয়েছে ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৪ জন।
সব শেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১২ জন আর নারী ছয়জন। মৃতদের মধ্যে শিশু দুজন। ১১ থেকে ২০ বছরের একজন, আরেকজনের বয়স ১০ বছরের নিচে। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের, এ ছাড়া ৬১ থেকে ৭০ বছরের চারজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের তিন জন, ৯১ থেকে ১০০ বছর এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সসীমার মধ্যে মারা গেছে দুইজন করে।
মৃতদের আটজনই ঢাকা বিভাগের। বাকিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ছয়জন আর রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের একজন করে।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে স্থানীয় নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন)