খেলাধুলা

দেশ জিতলে জিতে যাই আমি নিজেই: মুস্তাফিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: আন্তর্জাতিক, ঘরোয়া ক্রিকেটের ব্যস্ততায় বছর কাটে। ছুটি পেলেই বাড়ি ছুটে যান মুস্তাফিজুর রহমান। বিশ্রামের সময়টা জন্মস্থান সাতক্ষারী জেলার কালীগঞ্জ থানার তেঁতুলিয়া গ্রামে কাটাতেই পছন্দ করেন তিনি। চিংড়ির ঘের, নিজের গ্রামে স্বজনদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো তার জন্য পরবর্তী চ্যালেঞ্জের জ্বালানি হয়ে কাজ করে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজ শেষ হতেই গ্রামে চলে গেছেন মুস্তাফিজ। গতকাল মুঠোফোনে বলছিলেন, সিরিজ শেষ হয়েছে এখন ঢাকায় থেকে কী করব? এখানে অবশ্য বৃষ্টি হচ্ছে অনেক। বাসায় আছি এখন।

কোলাহলমুক্ত জীবনে যাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দারুণ সময় কেটেছে মুস্তাফিজের। বল হাতে কাটার-স্লোয়ারে অজিদের নাকের জল-চোখের জল এক করে দিয়েছেন। ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ান-মোসেস হেনরিকসরা অকপটে বলে গেছেন, এ কন্ডিশনে মুস্তাফিজের বল খেলা প্রায় ‘অসম্ভব’।

সফরকারীদের সামনে রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে ধরা দিয়েছিলেন কাটার মাস্টার। পাঁচ ম্যাচ খেলে ১৭ ওভার বোলিং করেছেন তিনি, উইকেট নিয়েছেন ৭টি, ৮.৫৭ গড়ে ৬০ রান দিয়েছেন, ইকোনমি রেট ৩.৫২। গোটা সিরিজে বল করেছেন ১০২টি, যার মধ্যে ৫৮টি বলই ডট। এখানেই স্পষ্ট অজি ব্যাটসম্যানদের কতটা ভুগিয়েছেন বাংলাদেশের এ বাঁহাতি পেসার।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথমবার বাংলাদেশের সিরিজ জয়, ইতিহাস গড়ার মিশনে রেখেছেন বড় ভূমিকা। সিরিজে ফিরে তাকিয়ে মুস্তাফিজ বলেছেন, ‘অনেক ভালো লাগছে। ভালো লাগারই কথা। অনেক বড় দলের সঙ্গে জিতেছি।’

মৃদুভাষী ২৫ বছর বয়সি এ পেসার নিজের বোলিং নিয়ে সন্তুষ্ট। এমন কন্ডিশনে, উইকেটে নিজের সহজাত বোলিংয়েই সফলতা সম্ভব, তা বুঝতে সময় লাগেনি তার। বলছিলেন, ‘আমি খুশি আমার বোলিং নিয়ে। আমি চেষ্টা করেছি বরাবরই আমার প্রসেস ঠিক রেখে যেন বোলিং করতে পারি। উইকেটটা এমনই ছিল যে, আমি যদি ভালো জায়গায় বোলিং করতে পারি, তাহলে ভালো কিছু হবে। আমি চেষ্টা করেছি। সবসময় চেষ্টা করেছি ডট বল কীভাবে করা যায়। ডট বল হলে ব্যাটসম্যানের উপর চাপ বাড়ে।’

মুস্তাফিজের সুখানুভূতি, তৃপ্তির পারদ আরো উঁচুতে উঠছে কারণ বল হাতে নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ানদের। গতকাল বলেছেন, ‘আসলে দেশের হয়ে ভালো করতে পারলে যে কোনো খেলাই ভালো লাগে, প্রতিপক্ষ যারাই হোক। আর অস্ট্রেলিয়া তো বড় দল। সবসময় ভালোলাগা কাজ করে। কারণ আমার দেশ জিতলে তো আসলে আমিই জিতে যাই।’

ক্যারিয়ারের শুরুতে ভারতকে ডুবিয়ে আইপিএলে সুযোগ পেয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশ থেকেও ডাক এসেছিল মুস্তাফিজের। কিন্তু সময়ের অভাবে খেলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ওখানে খেলা হলে তো প্রস্তাব আসে। দেশের খেলা থাকে, তাই যাওয়া হয় না। বিগ ব্যাশের প্রস্তাব আসছে, এখন না, আগে আসছিল, কিন্তু আমি তো ফ্রি ছিলাম না, দেশের খেলা ছিল।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় বছর পার করে দেওয়া মুস্তাফিজের হাতেই এখন কার্যত দেশের পেস আক্রমণের নেতৃত্বের ব্যাটন। গুরুভার পালন করছেনও নিপুণ দক্ষতায়, সফলতার সঙ্গে। তবে দায়িত্ব, চাপ নিয়ে ভাবনা নয় মাঠে গিয়ে নিজের সেরাটা দিতেই মুখিয়ে থাকেন বাঁহাতি এ পেসার। গতকাল বলেছেন, ‘না, ওরকম কিছু আমি চিন্তা করি না। আমি সবসময় চেষ্টা করি, আমি কিছু জানলে টিমমেটদের সঙ্গে শেয়ার করা। আর ওটা মাথায় নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। আমার কাজ মাঠে গিয়ে পারফরম করা। এসব চিন্তা করে বাড়তি চাপ নিতে চাই না। বল যখন হাতে নেই, তখনই চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দিতে।’

এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইপিএলের বাকি অংশ নয়, কাটার মাস্টার চোখ রাখছেন নিকট দূরত্বে থাকা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *