করোনা ভাইরাস সংক্রমণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতা ও জীবন দক্ষতা প্রদানের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও বন্ধ। এর মধ্যেই আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে নিরক্ষরকে সাক্ষরতা ও জীবন দক্ষতা প্রদানের জন্য ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ব্যবস্থাপনায় আজ দেশব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ১৩৪টি উপজেলায় ৩৯ হাজার ৩১১টি শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪১ জন নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬০ জেলার ১১৪ উপজেলায় ৩৫ হাজার শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে ২১ লাখ নারী-পুরুষকে সাক্ষরতা জ্ঞান প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই শিখন কেন্দ্রগুলো চালু হবে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৫.৬ শতাংশ। অর্থাৎ এখনো প্রায় ২৪.৪ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। তাদের সাক্ষর করতে না পারলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, সাক্ষরতা অর্জনে আমরা ধীরে হলেও এগোচ্ছি। ২০০৫ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, সরকার দেশের ৬৪ জেলায় নির্বাচিত ২৫০টি উপজেলার ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা ও জীবন দক্ষতা প্রদানের লক্ষ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)’ বাস্তবায়ন করছে।
জাকির হোসেন বলেন, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি ৪-এর আওতায় ‘বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের জন্য উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা’ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ৮-১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয়বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ৮-১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয়বহির্ভূত ও ঝরেপড়া শিশুদের এবং ১৫ বছরের বেশি বয়সী নারী-পুরুষকে মৌলিক সাক্ষরতা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান করে আয়বর্ধক কাজে অংশগ্রহণ তথা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাজার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্য রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করার লক্ষ্য ছিল সরকারের। এখনো লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে এখনো সাক্ষরতার হার ৭৫.৬ শতাংশ। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার ঘোষণা করেছিল, তাতে শিক্ষা ও বিজ্ঞান অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে নিট ভর্তি ১০০ শতাংশে উন্নীত করা এবং ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা হবে।’
এখনো ২৪.৪ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর থাকার কারণ হিসেবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ২০০৮ সালের ঘোষণাটি ছিল রাজনৈতিক। বাস্তব প্রয়োগের চেয়ে অনেক দূরে। একটি বিষয়ে যখন অঙ্গীকার করা হয়, তার বাস্তবায়ন কৌশলও নির্ধারণ করতে হয়। সেটা হয়নি বলে ২০২১ সালেও আমরা নিরক্ষরমুক্ত হতে পারিনি। আমরা নিরক্ষরমুক্ত করার কথা বলছি; সে অনুযায়ী শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে শিক্ষা। এখানে ছোটখাটো প্রকল্প দিয়ে সমাধান হবে না। প্রকল্প শেষ তো কার্যক্রম শেষ। তা হলে যারা নিরক্ষর থাকল, তাদের বিষয়টি বাদ পড়ে গেল। স্থায়ী সমাধানের চিন্তা করতে হবে নীতিনির্ধারকদের।
ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিসটিক্সের (ইউআইএস) তথ্য অনুযায়ী, সাক্ষরতার হার অনুযায়ী বাংলাদেশ অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে। ভারতের হার ৬৯ দশমিক ৩০ শতাংশ, নেপাল ৫৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ভুটান ৫৭ দশমিক ০৩ শতাংশ ও পাকিস্তান ৫৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সাক্ষরতার হারে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ১৬৪তম। প্রথমে রয়েছে জর্জিয়া। তাদের সাক্ষরতার হার ১০০ ভাগ। দ্বিতীয় স্থানে যৌথভাবে কিউবা ও পোল্যান্ড। তাদের সাক্ষরতার হার ৯৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। ৯৯ দশমিক ৭০ শতাংশ সাক্ষরতা নিয়ে তৃতীয় স্থানে বারবাডোস। ৯৯ শতাংশ সাক্ষরতার হার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ১৮তম। ভারত ও পাকিস্তান যথাক্রমে ১৪৭ ও ১৬০-এ। সেখানে সাক্ষরতার হার ৬১ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ। সাক্ষরতায় সর্বনিম্নে থাকা দেশ বুরকিনা ফাসো।

/জেড এইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *