নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: দেশের ৬১তম বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে লাইসেন্সে পেল আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সিটিজেন ব্যাংক। সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪১০তম সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়।
এবিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, যেসব নীতি এবং বিধিমালা অনুসরণ করার কথা ছিল- প্রস্তাবিত ব্যাংকটি তা করতে পারায় চূড়ান্ত অনুমোদন বা লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
মায়ের মৃত্যু হওয়ায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সিটিজেন ব্যাংক পেতে আবেদন করেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। তিনি গত ১৮ এপ্রিল মারা যান।
মা জাহানারা হকের মৃত্যুর কারণে শেয়ারহোল্ডিং বা মালিকানায় পরিবর্তনের অনুমতি চাওয়া হলে গত ২৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
নতুন আরো একটি ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার এবং ব্যবসার যে ধরন তাতে নতুনত্ব আনা ছাড়া নতুন ব্যাংকের জন্য টিকে থাকা কষ্টকর হবে।
তিনি বলেন, এখনো দেশের ৬০ ভাগ মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে আছে। তাদেরকে সেবার আওতায় আনা, এসএমই খাতে আরো বেশি জোর দেয়া, শহরকে ফোকাস না করে উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে সেবা নেওয়ার জন্য নতুন ধরনের ব্যবসায়িক মডেল চালু করতে পারলে সফলতা আসতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এখন পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংকগুলো ঢাকা কেন্দ্রিক ব্যবসাই করছে। তারা তাদের সেবা বিকেন্দ্রীকরণ করত পারছে না।
গ্রামীণ জনপদ বা উপজেলা পর্যায়ে এখনো সরকারি ব্যাংকই সেবা দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সব অঞ্চলে বেসরকারি খাতের নতুন ব্যাংক তাদের শাখা খুলতে চাইলেও ব্যবসায়িক ভাবে লাভবান হওয়া কষ্টকর হবে।
দেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী এত বেশি ব্যাংকের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ।
একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত ডিসেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ”বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা সত্যিই বেশি। তবে দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাপ্রবাহ বাড়তে থাকার কারণে এমনটা হওয়াও স্বাভাবিক। ১৯৩০ এর দশকের যুক্তরাষ্ট্রই তার উদাহরণ। ওই সময়ে দেশটিতে প্রায় চার হাজার ব্যাংক ছিল। আর এখন মাত্র পাঁচটি ব্যাংক অধিকাংশ অর্থ-প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।”
দুই বছরের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৫শ’ কোটি টাকায় উন্নীত করার শর্তে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গল, সিটিজেন ও পিপলস ব্যাংককে নীতিগত অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনুমোদন পর্যায়ে ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা করে।
সম্প্রতি লাইসেন্স পেয়ে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে এফবিসিসিআই- এর সাবেক সহ-সভাপতি ও বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের বেঙ্গল ব্যাংক।
বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম। তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকেরও বর্তমান চেয়ারম্যান।
এদিকে পিপলস ব্যাংক পেতে আবেদন করেছিলেন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে তার বাড়ি।
বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে ১৪টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে। সবশেষ লাইসেন্স পেল সিটিজেন ব্যাংক। অপেক্ষায় আছে পিপলস ব্যাংক।
২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংকগুলোর একটি ছিল ফারমার্স ব্যাংক। অনিয়মের কারণে ডুবতে বসা ব্যাংকটিকে আর্থিকখাতের জন্য অশনি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল অর্থমন্ত্রণালয়।
তবে ডুবতে বসা থেকে রক্ষা করতে রাষ্ট্রায়ত্ব চারটি ব্যাংক ও আইসিবির মাধ্যমে মূলধন যোগান দিয়ে ব্যাংকটিকে টিকিয়ে রেখেছে সরকার।
২০১৯ সালে ফারমার্স ব্যাংক নাম পরিবর্তন করে হয় পদ্মা ব্যাংক। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট ৩,৬৩১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দ ঋণের পরিমাণ ৩,২৬৮ কোটি টাকা।
১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের সময় নতুন ৮টি ব্যাংক অনুমোদন পায়। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে অনুমোদন পায় ১৩টি ব্যাংক।
২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জোট সরকারের সময় কোনো নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়নি। ২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে অনুমোদন পেল আরো ১৪টি ব্যাংক।