নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: দেশে ১০ মাসের বেশি সময় ধরে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী দেশের ২৩ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। টিকাদানে গতি না বাড়ালে ৮০ শতাংশ মানুষকে পূর্ণ দুই ডোজ টিকার আওতায় আনতে আরও ২৪ মাস সময় লেগে যেতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে দিনে গড়ে ১০ লাখ বা তার কিছু বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন টিকার মজুত অনেকটা সন্তোষজনক। দৈনিক টিকা দেওয়ার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। না বাড়ালে টিকার সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না।
সর্বশেষ গত বুধবার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ২৫ লাখ টিকা এসেছে। এই নিয়ে দেশে টিকা এসেছে ১৪ কোটি ২১ লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে কিছু টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে বিভিন্ন দেশের উপহার হিসেবে। কিছু টিকা পেয়েছে করোনার টিকাবিষয়ক বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। বাকি টিকা সরকার কিনেছে। দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, সিনোফার্ম ও মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে।
দেশে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ কোটি ৬২ লাখের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আর পূর্ণ, অর্থাৎ দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষকে। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ উদ্যোগে করা কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের ‘ড্যাসবোর্ড’ বলছে, বাংলাদেশ ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ মানুষকে পূর্ণ দুই ডোজ টিকা দিতে পেরেছে।
রাজধানীতে গত ১০ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, জানুয়ারি মধ্যে দেশে টিকার আসার পরিমাণ কমবেশি ১৬ কোটিতে দাঁড়াবে। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ও অধিদপ্তরের টিকাবিষয়ক কমিটির প্রধান অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘পরিকল্পনামতো আমরা টিকা পাচ্ছি এবং নিয়মিত টিকা পেতে থাকব। টিকা পাওয়া এখন আর কোনো সমস্যা নয়।’
সমস্যা দ্রুত টিকা দেওয়ায়
করোনার টিকা দেওয়ার গতি বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একাধিক বিশেষ কর্মসূচি বা ক্যাম্পেইন করেছে। এসব কর্মসূচিতে করোনার জন্য নির্ধারিত টিকাকেন্দ্র ছাড়াও ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডে কয়েক দফায় টিকা দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারপরও জনসংখ্যার অনুপাতে টিকাদানের হারে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
দেশে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ কোটি ৬২ লাখের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আর পূর্ণ, অর্থাৎ দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষকে। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ উদ্যোগে করা কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের ‘ড্যাসবোর্ড’ বলছে, বাংলাদেশ ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ মানুষকে পূর্ণ দুই ডোজ টিকা দিতে পেরেছে।
টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মিয়ানমার ছাড়া প্রতিবেশী সব দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। শ্রীলঙ্কা প্রায় ৬৪, ভারত ৩৪ দশমিক ৯২, নেপাল ২৮ দশমিক ৪৩ ও পাকিস্তান ২৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দিয়েছে। মিয়ানমার পূর্ণ দুই ডোজ দিয়েছে ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ মানুষকে।
টিকাদানে গতি বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে দাবি করে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘একাধিক ক্যাম্পেইন করা হয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিকেও টিকা দেওয়া হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। কিছু উপজেলা ও জেলা পাওয়া গেছে, যেখানে টিকাদানের হার কম। ওই সব জায়গায় কী করে টিকা দেওয়া বাড়ানো যায়, তা ভাবা হচ্ছে। আমরা অন্য বিকল্পও খোঁজার চেষ্টা করছি।’
নিবন্ধন ও টিকার মজুত
দেশে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৭২ হাজার ২৪৫ জন মানুষ। জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের মাধ্যমে নিবন্ধন ছাড়াও জন্মনিবন্ধন সনদের মাধ্যমে ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৫ জন শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। নিবন্ধন করে টিকার অপেক্ষায় আছেন ৮৪ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৯ জন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিউলী আক্তার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন ২ আগস্ট। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, টিকা নিতে যাওয়ার বিষয়ে মুঠোফোনে কোনো খুদে বার্তা আসেনি। তিনি আদৌ টিকা পাবেন কি না, তা নিয়ে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন।
এদিকে টিকার মজুত নিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা আপাতত সন্তুষ্ট। হাতে আছে প্রায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ টিকা। এই টিকা শেষ হওয়ার আগেই আরও তিন থেকে চার কোটি ডোজ দেশে আসবে বলে কর্মকর্তারা আশা করেন।
ওষুধ বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ১০ লাখ ডোজ দেওয়া সম্ভব হলে মাসে ৩ কোটি ডোজ টিকা মানুষ পাবে। এর অর্থ, পূর্ণ দুই ডোজ পাবে দেড় কোটি মানুষ। এটা এখন যথেষ্ট নয়। দৈনিক টিকাদানের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। তা না হলে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য অনেক দূরে থেকে যাবে।
আরো পড়ুন: