নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু ও নতুন রোগী শনাক্ত দুটোই কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো দৈনিক মৃত্যু দেড় শতাধিক। গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনে আরও ১৫৯ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এটি গত দেড় মাসের মধ্যে এক দিনে সর্বনিম্ন মৃত্যুর রেকর্ড। এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক মৃত্যু ২০০-এর নিচে। এই এক সপ্তাহে প্রতিদিন শনাক্ত নতুন রোগীর সংখ্যাও ১০ হাজারের নিচে ছিল।
সংক্রমণের ভয়াবহ এক মাস শেষে চলতি আগস্টের শুরু থেকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হারে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত আছে। তিন দিন ধরে রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের নিচে।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, ঈদের আগে-পরে আরোপ করা কঠোর বিধিনিষেধের ফলে আগস্টের প্রথম দিক থেকে সংক্রমণ নিম্নমুখী হচ্ছে। নতুন রোগী কমতে থাকায় সামনে মৃত্যু আরও কমতে পারে। তবে এখন যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে রাস্তাঘাটে মানুষের ভিড় বাড়ছে, তাতে আগামী মাসের শুরুতে গিয়ে আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের পর থেকে গত প্রায় দেড় বছরে সংক্রমণ চিত্রে বেশ কয়েক দফা ওঠানামা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হয় গত জুলাই মাসে। জুলাইয়ের বেশির ভাগ দিনই ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত এবং দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু দিন দৈনিক শনাক্ত ১৫ হাজারের বেশি ছিল। জুনের শেষ দিক থেকে পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে উঠেছিল। ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তা ২০-এর ওপরেই ছিল। এর মধ্যে বেশ কিছুদিন শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি ছিল।
আগস্টের প্রথম দিন থেকে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে। আর মৃত্যু কমছে এক সপ্তাহ থেকে। টানা ১৯ দিন পর ১৩ আগস্ট দৈনিক মৃত্যু ২০০-এর নিচে নামে। ওই দিন থেকে শনাক্তের সংখ্যাও ১০ হাজারের নিচে নেমে আসে। এর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রতিদিনই মৃত্যু ২০০-এর নিচে এবং শনাক্ত ১০ হাজারের নিচে ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৩৭ হাজার ২২৬ জনের। এর মধ্যে ৬ হাজার ৫৬৬ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত দুই মাসের মধ্যে শনাক্তের এই হার সর্বনিম্ন। আর গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১০ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮১ জন সুস্থ হয়েছেন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৮৭৮ জনের।
গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে ৫ এপ্রিল থেকে কয়েক দফায় বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এর মধ্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে দুই দফায় প্রায় পাঁচ সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, এই বিধিনিষেধের ফলে সংক্রমণ কমছে। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি আবার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।