নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: আধুনিককালের অবকাঠামো নির্মাণশৈলীর অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে কাঁচ (থাই গ্লাস বা আর্কিটেকচারাল গ্লাস)। বসত-বাড়ি থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল কিংবা শিল্প-কারখানা— সর্বত্রই কাঁচ ব্যবহারের ছড়াছড়ি। সৌন্দর্যের দিকটা তো রয়েছেই, আছে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারও। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে নতুন যেসব বাণিজ্যিক ভবন গড়ে উঠেছে, সেসবের অধিকাংশেরই বহিরাবরণে কাঁচ ব্যবহার করা হচ্ছে।

বাণিজ্যিক ভবনের বহিরাবরণে কাচের ব্যবহার নান্দনিক সৌন্দর্য নিয়ে এলেও এর পরিবেশগত ঝুঁকি ভাবাচ্ছে পরিবেশবিদদের। কাঁচে (গ্লাস) সূর্যের আলো প্রতিফলিত হওয়ায় এ ধরনের ভবনের চারপাশে বেশি মাত্রায় তাপ উদ্গীরণ হয়। আবার ভবনের তাপমাত্রা ঠান্ডা রাখতে সারাবছর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যা গ্রিন হাউজের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নান্দনিকতার জন্য কাচের ব্যবহারে বড় মাশুল দিতে হবে। গ্রিন হাউজের প্রভাবে বাড়বে রোগবালাই।

কাঁচের ভবনগুলোতে এসি লাগাতে হয়। এসি ফসিল ফুয়েল ব্যবহার করে, আর গ্যাস ছাড়ে। এটা ওজনস্তরের ক্ষয়ের জন্য দায়ী। সিএফসি, এইচএফসি গ্যাস বাড়ায় নগরের তাপমাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। কাচের ভবনের অনেক খারাপ প্রভাব আছে।

ভবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীর ধুলা-ময়লা আর শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে তারা ভবনে কংক্রিটের দেয়ালের পরিবর্তে কাঁচ ব্যবহার করেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবন নির্মাণ ও কমার্শিয়াল ভ্যালু বাড়াতে কাচের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা।

রাজধানীতে এ ধরনের কতগুলো ভবন আছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান, ইন্টেরিয়র, এক্সটেরিয়র প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত বাণিজ্যিক ভবনেই কাচের চাহিদা বেশি।

ইন্টেরিয়র প্রতিষ্ঠান ডিজাইন কোড স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী আদুল্লাহ আল মিরাজ বলেন, চার-পাঁচ বছর ধরে ভবনের বাইরে কাচের ব্যবহার বেড়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার- এসব কারণে ভবন মালিকরা কংক্রিটের দেয়ালের পরিবর্তে কাঁচ ব্যবহার করতে চান।

এই কাঁচ আসলে আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবনের মধ্যে পার্থক্য করে দেয়। কাঁচ ব্যবহারে ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন বলা যায় বাণিজ্যিক ভবন মানেই কাঁচ দিয়ে ঘেরা। বড় কোম্পানিগুলোতো আছেই, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোট কোম্পানিগুলো অফিসে কাচের আবরণ করছে।

তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ভবনে কংক্রিটের চেয়ে কাচের ব্যবহার করতে আগ্রহী মালিকরা। ভবনে সহজেই সূর্যের আলো পাওয়া যায়, বাইরের সৌন্দর্যটাও দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে। কাঁচের একটা আলাদা কমার্শিয়াল ভ্যালু তৈরি হয়েছে। এই কাঁচ আসলে আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবনের মধ্যে পার্থক্য করে দেয়। কাঁচ ব্যবহারে ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন বলা যায় বাণিজ্যিক ভবন মানেই কাঁচ দিয়ে ঘেরা। বড় কোম্পানিগুলো তো আছেই, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোট কোম্পানিগুলো অফিসে কাচের আবরণ করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবকাঠামো নির্মাণশৈলীর অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে আর্কিটেকচারাল গ্লাস। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল কিংবা শিল্প-কারখানার অফিসে ব্যবহার হচ্ছে কাঁচ।

স্যাম প্রপার্টিজের ম্যানেজার সাদ মুহাম্মদ বলেন, সৌন্দর্যের দিকটা তো আছেই, সেই সঙ্গে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারও আছে। কাঁচ ব্যবহারের কারণে ভবনে সূর্যের আলো পাওয়া যাচ্ছে।

তবে এক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে যেভাবে চাচ্ছে সেভাবে আমরা ভবন বানিয়ে দেই।

কোড স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী আদুল্লাহ আল মিরাজ বলেন, শহরে নতুন যেসব বাড়িঘর বা অফিস ভবন গড়ে উঠেছে, সবগুলোতেই কাচের ব্যবহার হচ্ছে। ভবনের বহিরাবরণে কংক্রিটের জায়গা নিয়েছে কাঁচ। আবার অনেক অফিসে পার্টিশনে কাঁচ ব্যবহার করছে। মিটিং রুম বা অফিসার রুম আলাদা করছে এই কাঁচ। তবে পরিবেশের কথা বিবেচনা করে আমরা অনেক সময়ই কাঁচ ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে চাই।

জানা গেছে, এনিলিড গ্লাস, হিট স্ট্রেংদেন্ড গ্লাস, কেমিক্যালি স্ট্রেংদেন্ড গ্লাস, হিটেবল গ্লাস, ইনসুলেটিং গ্লাস, টাফেন্ড গ্লাস দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এসব ভবন। এমনকি ভূমিকম্পের কম্পন এবং উচ্চমাত্রা কম্পনবিশিষ্ট শব্দতরঙ্গ সহনশীল সাইজমিক গ্লাস দিয়েও ভবন তৈরি হচ্ছে আজকাল।

আরো পড়ুন:

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন রোল মডেল : ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *